সাউথ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশা ছিল এবারই ব্রিকসের সদস্যপদ পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা আপাতত হচ্ছে না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, তারপরও প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো ‘পশ্চিমের চাপ সামলানো’।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও সাউথ আফ্রিকা-এই পাঁচটি দেশের অর্থনেতিক জোট হলো ব্রিকস। এবার জোহানেসবার্গে ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলন বসছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ, মার্কিন ডলারের দাপট এবং বিশ্বমন্দার এই সময়ে ব্রিকসের এই সম্মেলন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই জোটে রাশিয়া, চীন ও ভারত থাকায় যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনটি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। আর ডলারের বিরুদ্ধে ব্রিকসের অভিন্ন মুদ্রা চালুর যে চেষ্টা রয়েছে সেটাকে ভালো চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে ব্রিকসকে একটি প্রেসার রিলিজের প্ল্যাটফরম হিসেবে দেখছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক এই জোটটির একটি রাজনৈতিক চরিত্র রয়েছে। সদস্যদের মধ্যে মার্কিনবিরোধী শক্তিশালী রাষ্ট্র থাকায় এর রাজনৈতিক দিকটি উপেক্ষা করার উপায় নেই। এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্মেলনের সাইড লাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্য সররকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠক চূড়ান্ত না হলেও সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে।
[caption id="attachment_1530" align="alignnone" width="1280"] ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ছাড়েন। ছবি: পিআইডি[/caption]
২২ থেকে ২৪ আগস্টের এই সম্মেলনে সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুরা দা সিলভা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, ‘ব্রিকসে বাংলাদেশ সদস্য হবে এটায় আমি নিজেও উৎসাহিত ছিলাম। এখন জানা গেল সেটা সহসা হচ্ছে না। ভারতের রিজার্ভেশন আছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী পর্যবেক্ষক হিসেবে সেখানে যাচ্ছেন। আমার মনে হয় এর উদ্দেশ্য মূলত রাজনৈতিক। কারণ পশ্চিমা বিশেষ করে নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই চাপ রিলিজ করার চেষ্টা করবেন তিনি।’
তার কথা, ‘এখনো নিশ্চিত নয় যে, তার সঙ্গে মোদি বা চীনা প্রেসিডেন্টের বৈঠক হবে কি না। তবে আমার মনে হয় সেটা শেষ পর্যন্ত হতে পারে। তিনি চেষ্টা করবেন সাইডলাইনে তাদের সঙ্গে তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলতে। তাদেকে সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে।’ তিনি মনে করেন, ‘এখানে মার্কিনবিরোধী মনোভাবের যেসব দেশ রয়েছে তাদের কাছ থেকে এই সময়ে আরও সাপোর্ট পেতে, একটি ভারসাম্য অবস্থা তৈরির চেষ্টা করবেন তিনি।’
ব্রিকসে পুতিন না গেলেও ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তিনি ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন। তার আগে তিনি ঢাকা সফর করবেন। শহীদুল হক মনে করেন, ‘রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। সেটা দিয়েও বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার কিছু অর্জনের চেষ্টা করবে বলে মনে হয়।’ আর ওই সম্মেলনে যোগ দিতে শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এটা যেমন অর্থনৈতিক স্বীকৃতি তেমনি রাজনৈতিক স্বীকৃতি। বিশ্বে এটার একটা প্রভাব আছে।’
তার কথা, ‘এখানে কেউ মার্কিনবিরোধী নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাউকে কাউকে বিরোধী হিসেবে গণ্য করে। তাই আমার মনে হয় প্রশ্নটি বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন রাজনৈতিক চাপ এড়ানোর নয়। বরং বাংলাদেশ যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হচ্ছে তা-ই বাস্তবতা।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, শেখ হাসিনা মূলত এখন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের চাপ মোকাবেলায় নানা পথ খুঁজছেন। সে ক্ষেত্রে জি-২০ সম্মেলনও তাকে একটি সুযোগ এনে দিতে পারে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, সহ-সম্পাদক: সুব্রত দেবনাথ, নির্বাহী সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী, বার্তা সম্পাদক : শহীদুর রহমান জুয়েল। ঢাকা-১২৩০ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।