মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের করজোনা বাজার থেকে নয়াচর ভায়া হিজুলিয়া খালপাড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন ১৬ গ্রামের প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। গ্রীষ্মকালে ধুলা-বালু, বর্ষাকালে হাঁটু পানি। বছরের বাকি সময় কাদায় লুটোপুটি খেয়ে যাতায়াত করতে হয়। শিক্ষাথী, প্রসূতি মা, শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ রোগী বহনকারী যানবাহনের দুর্ভোগের যেন কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না সাধারণ মানুষ ও ১৬ গ্রামবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদেরক বার বার আবেদন-নিবেদনের পর অবশেষে এই একটি রাস্তাটি পাকাকরণের প্রকল্প পাশ করানো হয়। আর সেটা পাস হয় আজকে নয়, দীর্ঘ ১১ বছর আগে। ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্থানীয় এমপি এ বি এম আনোয়ারুল হক এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহিউদ্দিন। কিন্তু কী এক অদৃশ্য কারনে সেই রাস্তা থমকে আছে ভিত্তিপ্রস্তরেই। হাজারো মানুষের স্বপ্নের পাকা রাস্তা কেবল স্বপ্নই থেকে গেল। আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হলো না। ভিত্তিপ্রস্তরের ১১ বছর পেরিয়ে গেছে, আজো রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু হয়নি।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামীণ ওই কাঁচা রাস্তাটি চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। হাঁটু সমান কাদায় মাখামাখি সব পথ। দেখতে পেলাম, জনৈক কৃষক ভ্যানে করে পাট নিয়ে হাটে যাওয়ার পথে কাদায় তার ভ্যানগাড়িটি আটকে আছে। খানিকটা এগোতেই দেখা গেল এক প্রসূতি নারীকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তাকে বহনকারী রিকশাটি উল্টে পড়েছে। পরে কয়েকজন এলাকাবাসী এসে ওই অসুস্থ নারী ও রিকশাকে টেনে তুলছেন।
করজোনা, শ্রীবাড়ি, বড়টিয়া, দক্ষিণ করজোনা, আগুনপুর, নয়াচড়, হিজুলিয়া, জগন্নাথদিয়া, গোয়ালজান, খাসকামারখালী, বাথন্ড, নেগীরকান্দি, বহলাকোল, রাহাতহাটি, পাশের উপজেলার ভররা, বনগ্রাম, বারাদিয়া ও পেড়া গ্রামের হাজারো মানুষ নিত্য চলাচল করেন এ কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়েই। তাদের বাড়ি থেকে বের হলেই কর্দমাক্ত পথে নেমে আসতে হয়।
এপথেই রয়েছে করজোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করজোনা উচ্চবিদ্যালয়, হিজুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াচর প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, তিনটি মসজিদ ও দু’টি মন্দির। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এ পথে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে প্রতিদিনই নাজেহাল হতে হয়। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ যেন আরো চরম আকার ধারণ করে।
করজোনা গ্রামের শিক্ষক সঞ্জীব বর্ধন বলেন, একটু বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তায় কাদাপানি জমে যায়। সামনের মন্দিরে উপাসনা অথবা মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে কী যে ভোগান্তি পোহাতে হয়, ভুক্তভোগী মাত্রই সেটা উপলদ্ধি করতে পারবেন। কাদা-পানি পেরিয়ে অসুস্থ রোগীদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এমন দুর্ভোগের কারণে হাসপাতালে নেয়ার পথে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন অসুস্থ রোগী মারা গেছেন।
ভিত্তিপ্রস্তরের পর কেন কাজ শুরু করা হয়নি এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। নির্মাণ কাজের অনুমোদন পেয়েছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল ট্রেডার্স। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার কোনো তথ্য পাওয়া গেল না উপজেলা এলজিইডি, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছেও।
গোয়ালজান গ্রামের প্রবীণ সামেলা বেগম বলেন, মেম্বার চেয়ারম্যান এমপি শুধু ভোট নেয়ার সময় আমাদের কাছে আসে। বড় বড় কথা বলে, অনেক আশা বাণী শুনায়, ভোটের পর আর খবর নেয় না কেউ। ভ্যানচালক সামছু মিয়া বললেন, ভ্যান নিয়ে কাদায় আটকে গেলে কারো সাহায্য ছাড়া আর উদ্ধার পাওয়ার উপায় নেই। যিনি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন, তিনিও কাদায় মাখামাখি হয়ে যান। তাই ভ্যান নিয়ে এ রাস্তায় বাড়ি ফিরি না। বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ভ্যান রেখে আসি।
রাস্তায় দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বড়টিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম মোল্লা রওশন বলেন, এ রাস্তা এলজিইডির জেলা প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে। রাস্তাটি যেহেতু জেলা পরিষদের মাধমে হতে চলেছে, তাই আমি বারবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে গেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের এত বড় কাজ করার ফান্ড থাকে না।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, জেলা প্রজেক্টে অনেকগুলো কাজের তালিকা তৈরি হচ্ছে। এ রাস্তাটি যদি আইডিভুক্ত থাকে, তাহলে সেই তালিকাটি দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারব। আর আমাদের আইডি থাকলে আমরা যেকোনো একটি প্রজেক্টে দিয়ে দেবো।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, রাস্তাটি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার
দুর্ভোগের কথা শুনেছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, সহ-সম্পাদক: সুব্রত দেবনাথ, নির্বাহী সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী, বার্তা সম্পাদক : শহীদুর রহমান জুয়েল। ঢাকা-১২৩০ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।