ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এডিসি পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মারধরের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি (সাসপেন্ড) হারুন-অর-রশীদ ও আরেক সরকারি কর্মকর্তা আজিজুল হক মামুনের হাতাহাতি ঘটনার ঘটে। আরেক পুলিশ কর্মকর্তা এবং আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী সানজিদা আফরিনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। এর জেরে কেন্দ্রীয় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সানজিদার ভাষ্যমতে তার বুকে ব্যথা হওয়ায় তিনি তার ঊর্ধ্বতন স্যার এডিসি হারুনকে ডাক্তারের সিরিয়াল নিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। বারডেম হাসপাতালটি ওই এলাকায় হওয়ায় স্যার রমনা থানার ওসির মাধ্যমে সিরিয়াল নেন। শনিবার সন্ধ্যায় সময় মতো চিকিৎসক না পেয়ে তিনি হারুন স্যারকে হাসপাতালে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে তার স্বামী (মামুন) গিয়ে হারুন স্যারকে মারধর করেন। ওই সময় স্বামীর সঙ্গে আসা আরও দুইজন হামলায় অংশ নেয় এবং ঘটনার ভিডিও করতে থাকে। তখন তিনি ইটিটি কক্ষে ছিলেন।
ওই ঘটনার পর এডিসি হারুন ফোর্স নিয়ে মামুন ও ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে থানায় নিয়ে আসেন। পরে ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমকেও থানায় ডেকে নেন। এরপর ওই দুই ছাত্রনেতার উপর নির্যাতন চালানো হয়। ঘটনা জানাজানি হলে পরের দিন এডিসি হারুনকে প্রথমে রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ও পরে এপিবিএনে বদলী করা হয়। গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার তাকে রংপুর রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়।
আনোয়ার হোসেন নাঈম জানিয়েছিলেন, ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে তিনি এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম শাহবাগের বারডেম হাসপাতাল হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলেন। এরপর তারা বারডেম হাসপাতালের সামনে তাদের বড় ভাই বিসিএস কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনকে দেখতে পান। তিনি তখন লিফটে করে কার্ডিওলজি বিভাগের সামনে চলে যান।
নাঈম বলেছিলেন, ৫ থেকে ৭ মিনিট পরে গিয়ে আমরা দেখি, মামুন ভাই এবং এডিসি হারুনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। এরপর আমি এবং মুনিম ঘটনার মীমাংসা করার চেষ্টা করি। পরে সেখানে সেটা মীমাংসা হয়। এর কিছুক্ষণ পর এডিসি হারুন ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশকে ফোন দিয়ে সেখানে নিয়ে আসেন। তখন পুলিশ সদস্যরা মামুন ভাই, আমি এবং মুনিমের ওপর চড়াও হয়। এরপর সেখান থেকে মারতে মারতে মুনিমকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।’
তিনি জানান, ‘এই ঘটনার পর তিনি শাহবাগ থানায় যান। থানায় ঢুকলে এডিসি হারুন উপস্থিত পুলিশ সদস্যদেরকে দেখিয়ে বলেন, ‘এ আমাকে মারছে। একে তোরা মার।’ এরপর তার নেতৃত্বে শুরু হয় পৈশাচিক নির্যাতন।
এসব ঘটনার আলামত পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি বলছে, স্ত্রী সানজিদা গিয়েছে জেনে ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে হাসপাতালে যান মামুন। সেখানে গিয়ে দেখা হয় এডিসি হারুনের সঙ্গে। পরে হাতাহাতিতে জড়ায় দুই পক্ষ। এক পর্যায়ে হারুন ও সানজিদা ঢুকে পড়ে হাসপাতালের ইটিটি রুমে। পরে শাহবাগ থানায় নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করে হারুন ও তার সহযোগীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, প্রথমে তদন্ত শেষ করতে না পারায় আমরা সময় নিয়েছিলাম। দায়ী ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। ঘটনার তদন্তে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া সব কিছু প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যার যতটুকু দায়-দায়িত্ব ও সংশ্লিষ্টতা ছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
কার কার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আমরা ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেসন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এরপর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, সহ-সম্পাদক: সুব্রত দেবনাথ, নির্বাহী সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী, বার্তা সম্পাদক : শহীদুর রহমান জুয়েল। ঢাকা-১২৩০ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।