‘চক্ষু ডাক্তার যখন ভূমিদস্যু’ তখন আর কি বলা যায় আর কি বলা যায়না তা বলা বড়ই মুশকিল। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে রাজশাহী মহানগরীতে। ঐ ডাক্তারের নাম নূরুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: নুরুল ইসলাম নকল দলীলের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে লক্ষিপুরে একটি জমি ক্রয় করেছেন। অথচ প্রকৃত মালিক জানেননা তিনি কবে তার জমি বিক্রি করেছেন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: নুরুল ইসলামের বাড়ি উপশহর এলাকায়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে – ডা: নুরুল ইসলাম এখন একজন পুরো দস্তুর ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ২১ জুলাই রাজশাহী নগরীর লক্ষিপুর মৌজা এলাকায় নকল দলিলের মাধ্যমে অন্যের জমি ক্রয় বিক্রয়ের ঘটনা ঘটায় রাজশাহী প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন রাজশাহী লক্ষীপুরের মফিজুল ইসলাম ও তার পরিবার। মফিজুল ইসলাম মরহুম বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিল্পপতির বাক্কার হাজ্বীর সন্তান।
ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম গনমাধ্যম কর্মীদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান – তার বাবা মরহুম আবু বক্কর ১৯৯২ সালে লক্ষিপুর মৌজার উক্ত জায়গাটি ৯৯৯৪/৯২ দলিল মূলে ক্রয় করেন। যার আর.এস খতিয়ান নং: ২২৩,হোল্ডিং নং ২৩৪, জেএল নং: ০৭, সার্ভে নং: ১৩৮। জমির পরিমাণ .১৬ (দশমিক ষোল) একরের কাত .০৯০০ (দশমিক ০৯ নয় শূণ্য শূণ্য) একর উত্তরাংশ। তিনি আরো জানান, পিতার অবর্তমানে ওয়ারিশসূত্রে ঐ জমির মালিক হন ৩ ভাই বোন।
এরা হলেন, মফিজুল ইসলাম, শাহানাজ বেগম,ও সুলতানা আজমেরী। ক্রয়সূত্রে জমির প্রকৃত মালিক মরহুম আবু বক্কর ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করার পর থেকে এখন অবদি ওয়ারিশগণ কোন প্রকার ঝালেমা ও বাধাবিঘ্ন ছাড়াই বিবাদমান জায়গাটি ভোগ দখল করে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ভূমিদস্যুদের সহযোগীতায় উক্ত জায়গাটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন তিনি। দ্বারে দ্বারে ঘুষ দিয়ে জমিটিকে বৈধ করার চেস্টায় নেমেছেন তিনি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) বরাবর গত আগস্ট মাসে এ বিষয়ে অভিযোগ দ্বায়ের করেন ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম। অভিযোগ দ্বায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলামকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) নির্মান কাজ আগামী ১৭/১০/২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলাম রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) আদেশ অমান্য করে পুনরায় কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপরে বিষয়টি পুনরায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিয়াউল হককে জানালে তিনি অথারাইজড অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম আজাদকে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলামকে চিঠি দেন। নিম্নে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নোটিশ ও নিষেধাজ্ঞার কপি দেয়া হল।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বড়কুঠির এসিল্যান্ড শাহিনের সাথে মযোগাযোগ করা হলে তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান — ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম জমি নিয়ে কোর্টে একটি মামলা দ্বায়ের করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি তদন্ত করে কোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাই। যে প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে উক্ত জমির মালিক মৃত আবু বক্কর কিন্তু বর্তমানে ছেলে মেয়েরাই উক্ত জমির ওয়ারিশ। কিন্তু জমি উপর বহুতল নির্মান বিষয়ে তিনি বলেন জমির প্রকৃত মালিক জমি বিক্রয় না করলে তিনি কিভাবে নির্মান কাজ করতে পারেন ? যদিও এটি আমাদের বিষয় নয় এটি দেখবে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু অন্যদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়া দেখা যায় ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলাম রাতেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমতবস্থায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানায় ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম অভিযোগ দ্বায়ের করলে ওসি উক্ত কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও সাময়িক বন্ধ রেখে ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলাম কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। আর তার এই কাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন সোহেল ও রুবেল নামের মিস্ত্রি নামধারী সন্ত্রাসী।
অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলাম কাজ করা শ্রমিকদের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়েছেন – আমি মহানগর আওয়ামী লীগের মোস্তাক নেতা, ডাবলু সরকারের সাথে কথা বলেই কাজ শুরু করেছি। পারলে কে ঠেকান।
পরিশেষে ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম জানান- জোড় পূর্বক উক্ত জমিটির দখল নিতে গেলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বাঁধা দেবার চেষ্টা করলে তারা ভাড়া করা গুন্ডাবাহিনী দিয়ে আমাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা ছাড়াও নানাভাবে লাঞ্চিত করেন। এছাড়াও একাধিকবার তাদের গুন্ডাবাহিনী আমার উপর আক্রমন চালায়। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনিতায় ভুগছি।
এদিকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলামের এহেন কর্মকান্ড নিয়ে বলেন বিব্রত অবস্থায় পরেছেন। তারাও বলছেন – একজন ডাক্তার হয়ে কিভাবে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও তিনি আইন পরিপন্থি কাজ করে চলেছেন তা উদ্বেগের বিষয়। প্রয়োজনে ভূমিদস্যু ডা: নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি, সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটিভিস্ট এম.এ. হাবীব জুয়েল বলেন – যারা ডাক্তার, তারা সমাজের মহান পেশার মানুষ। তারা যদি ভূমিদস্যুতায় নেমে পড়ে তবে বুঝেই নিতে হবে আমাদের সামাজিক অবক্ষয় ঘটেছে। বিধায় একটি পেশার একটি মানুষের জন্য এই মহান পেশাকে কলংকিত না করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিৎ। নতুবা ডাক্তার যদি নিজেই জমি জালিয়াতি চক্রের সদস্য হয় তবে তাকেও আইনের আওতায় আনা উচিত। কেননা আমরা কেউ আইনের উর্ধ্বে নই।