দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা) জাহিদ মালেক এবং মানিকগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের বিপরীতে জনপ্রিয় কোন প্রার্থী না থাকায় তাঁরা দুজন এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কিন্তু মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা) মমতাজ বেগমের জনপ্রিয়তার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু বেশ শঙ্কিত রয়েছেন বলে অভিমত নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের।
মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়) আসনে এডভোকেট আব্দুস সালামকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক কারণে তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহারের মাধ্যমে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ আসনে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, গণফ্রন্ট এবং একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের শরিক দল হলেও মানিকগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন বলে মন্তব্য ভোটারদের। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী (লাঙল) জহিরুল আলম রুবেল।
মানিকগঞ্জ-১ আসনের ভোটাররা জানান, এডভোকেট আব্দুস সালাম মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই প্রকাশ্যে সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের পক্ষে কাজ করছেন। বিশেষত, সাবেক দুই সাংসদ এ.এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় এবং আনোয়ারুল হক সালাউদ্দিনকে সমর্থন দেয়ায় এই আসনের সিংহভাগ নেতাকর্মী তাঁর জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন।
তাঁরা আরো জানান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম রুবেল এই আসনের বাসিন্দা নন। তাছাড়া নির্বাচনের আগে এ এলাকার কোন লোকের সাথে তাঁর কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। এখনও এলাকার মানুষ তাঁকে চিনে না। এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও মুষ্টিমেয় আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়া তাঁর পাশে তেমন কেউ নেই। মাঠেও নেই তেমন প্রচার-প্রচারণা। তিনি মানিকগঞ্জ-৩ (সদর) আসনেও প্রার্থী হয়েছেন। মানিকগঞ্জ-১ আসনে মোট চারজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করছেন সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টি। এ কারণে চাপবিহীন প্রচারণায় রয়েছেন জাহিদ।
প্রতীক বরাদ্দের দিন জহিরুল আলম রুবেল গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আসনটি তাঁর জন্য নতুন হওয়ায় সেখানে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তবে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের সমর্থনে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।
মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর, হরিরামপুর ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন) আসনে ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। তাঁর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু, তাঁর চাচাতো ভাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, সিংগাইর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চল। এদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন- কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলু (ট্রাক)।
এ আসনের ভোটাররা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু ইতিমধ্যেই এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। তবে, মমতাজ বেগমও এ আসনের পুরাতন জনপ্রতিনিধি। তিনি এলাকায় উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দিতে না পারলেও তাঁর দ্বারা এ পর্যন্ত কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এ কারণে, জনপ্রিয়তার দিক থেকে মমতাজ বেগম এখনও বেশ এগিয়ে আছেন। তাছাড়া, এ আসনে ৪জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় সবার ভোটই ভাগাভাগি হয়ে যাবে। কিন্তু মমতাজের ভোটের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়বে। যোগ বিয়োগ শেষে আগামী নির্বাচনে মমতাজ বেগমই এ আসনে পুনরায় এমপি হবেন বলে ভোটারদের ধারণা।
মমতাজ বেগম জানান, তিনি কোন চাঁদাবাজি করেননি, কমিশন বাণিজ্য করেননি, উপকার ব্যতীত কারো কোন ক্ষতি করিনি, যথা সম্ভব নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন করেছি। তাই এলাকার সর্বসাধারণ বিপুল পরিমাণ ভোট দিয়ে নৌকা মার্কাকেই বিজয়ী করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে (সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ আসনে জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীসহ ৬জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে নির্বাচনের মাঠে শক্ত কোন প্রতিপক্ষ না থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন জাহিদ মালেক। এ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গণফোরাম ও জাতীয় পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
সূত্র: ভোরের কাগজ
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, সহ-সম্পাদক: সুব্রত দেবনাথ, নির্বাহী সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী, বার্তা সম্পাদক : শহীদুর রহমান জুয়েল। ঢাকা-১২৩০ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।