আল মামুন, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: পিঠা শুধু লোকজ খাবার নয়, এটা বাংলা ও বাঙালির লোকজঐতিহ্য। এর সঙ্গে মিশে আছে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পারিবারিক ও সমাজজীবন থেকে পিঠা তৈরির আয়োজন কমে যাচ্ছে। তবে এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে একশ্রেণির মৌসুমী নারী-পুরুষ ব্যবসায়ী।
সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে ভাপা পিঠার সুগন্ধি ধোঁয়ায় মন আনচান করে ওঠে। সরষে বা ধনেপাতা বাটা অথবা শুঁটকি ভর্তা মাখিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে ঝালে কান গরম হয়ে শীত পালায়। শীতের আমেজেই মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় অলি-গলির ফুটপাতে জমে উঠেছে ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রির ধুম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চর্বাইলজুরী পঞ্চরাস্তা মোড় ও ঘিওর স্টেশনের বিভিন্ন অলি-গলিতে রাস্তার ফুটপাতে ও মোড়ে মোড়ে চলছে বাহারী পিঠা বিক্রির ধুম। শীতের সময়ে পিঠার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠায় আড্ডা জমে উঠে পিঠার দোকানে। স্থায়ী বা মৌসুমি পিঠার দোকানগুলোর অধিকাংশই পরিচালিত হয় নারীদের মাধ্যমে। সংসারে পুরুষের পাশাপাশি উপার্জনে বাড়তি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য দিন দিন বেড়েছে নারীদের এই পিঠার দোকান। এতে করে সংসারে কিছুটা বাড়তি উপার্জন হচ্ছে।
ভাঁপা পিঠার পাশাপাশি বিক্রি করছে চিতই পিঠাও। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরেই জমে উঠে এসব পিঠা বিক্রি। এই পিঠার স্বাদ পেতে রিকশা-চালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, ছুটির দিনে চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী সব শ্রেণি-পেশার মানুষই পিঠার দোকানে ভিড় করছে। আবার কেউ কেউ বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের জন্যও পিঠা কিনে নিয়ে যান। এসব পিঠার মধ্যে ভাপা ও চিতই ১০ টাকায় বিক্রি হয়।
পিঠা কিনতে এসে অপেক্ষায় থাকা রাজিব মিয়া জানান, শীতের সময় চিতই, ভাপা পিঠা খেতে ভালো লাগে। বিশেষ করে নানা রকম ভর্তা দিয়ে গরম চিতই পিঠার স্বাদই আলাদা। এটা গরমের সময় ততটা খাওয়া যায় না। তা ছাড়া ভাপা পিঠাও বেশ মজার। এ সময় পিঠার জন্য দোকানে সিরিয়াল দেওয়া লাগে। বিকেলের নাশতায় চিতই আর ভাপা পিঠা যোগ করে আলাদা স্বাদ।
পিঠা কিনতে আসা রুপালী আক্তার বলেন, ‘শীত আর পিঠা কেমন যেন একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। ছোট বেলায় মা পিঠা বানিয়ে দিতো আর সন্ধ্যার সময় বই নিয়ে পড়তে পড়তে পিঠা খেতাম। সেগুলো স্মৃতি হলেও শীত আসলে পিঠা খেতেই হবে। তাই দোকানে আসা পিঠা খাওয়ার জন্য।’
ঘিওর স্টেশনে আলাপের সময় পিঠা বিক্রেতা সালমা বেগম জানান, ‘শীতে চিতই পিঠার চাহিদা বাড়ে। নানা রকম ভর্তা দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পিঠা খেতে ভিড় লেগে থাকে। একই সঙ্গে ভাপা পিঠাও প্রচুর বিক্রি হয়। শীতের দিনে গরমের যন্ত্রণা থাকে না। লোকজন শান্তি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে খেতে পারে। এ কারণে শীতে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে পিঠা বিক্রি দুই থেকে তিনগুণ বাড়ে’।
আরেক পিঠা বিক্রেতা রেনু বেগম জানান, ‘শীত আসতেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। পিঠা বানানো থেকে সবকিছু করতে হয়। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার হয়। তিনি ৫টি চুলায় পিঠা তৈরি করেন। প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পিঠা বানানো ও বিক্রি’।
পিঠা বিক্রেতারা আরও জানান, ‘বছরের এই সময়টা শীতকালীন পিঠার বেচা-বিক্রি বেশি হয়। তাইতো এই সময়ে দোকানিরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে পারেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, সহ-সম্পাদক: সুব্রত দেবনাথ, নির্বাহী সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী, বার্তা সম্পাদক : শহীদুর রহমান জুয়েল। ঢাকা-১২৩০ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।