প্রত্যেক বছর বাংলা একাডেমি সৃজনশীল সাহিত্য কর্মের জন্য পুরস্কার প্রদান করে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ জানুয়ারী, ২০২৪ তারিখে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ ঘোষণা করেছে বাংলা একাডেমি।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা- সমালোচনা। তারই মাঝে একজন সরকারী আমলার কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলা একাডেমি ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ২৮ জানুয়ারী ইমেইলে চিঠি দিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার মনজুরুল ইসলাম মেঘ।
ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন ", বাংলাদেশের সৃজনশীল মেধা ও মননশীলতার নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। প্রত্যেক বছর বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করে থাকেন, যা বাংলাদেশী সৃজনশীল কাজের মর্যাদা ও সম্মান বহন করে। অত্যান্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০২৩ এ কথাসাহিত্যে পুরস্কার প্রদান করার জন্য জনাব নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের নাম ঘোষনা করা হয়েছে, যিনি ড. জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন সরকারী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে কর্মরত আছেন।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক চলচ্চিত্র অনুদান প্রদান করা হয়। গেজেট নং ১৫.০০.০০০০.০৪১.২৪.০০১.২০.১৩৮ উক্ত গেজেটের সিরিয়াল নং ১৬ বিলডাকিনি চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে গেজেট ঘোষণার আগে তৎকালীন তথ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি আমার সাক্ষাৎকার নিয়ে আমার নাম মনজুরুল ইসলাম পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ জাল-জালিয়াতির মাধ্যম ড. জাহাঙ্গীর আলম তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিচালকের পদ থেকে আমাকে বঞ্চিত করে উক্ত গেজেটের সিরিয়াল নং ৩ এ উল্লেখিত ফজলুল কবীর তুহিন কে দিয়ে বিলডাকিনি ও গাংকুমারী নামে দুটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন, যা চলচ্চিত্র অনুদান আইন বিরধী। আরো উল্লেখ্য যে, বিলডাকিনি চিত্রনাট্য আমার রচিত এবং আমার নামে কপিরাইট অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হয়েছে। কপিরাইট নিবন্ধন নং ঈজখ-২৩৪৫৮। অথচ জনাব নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর আমার সৃজনশীল কর্ম অবৈধ ভাবে আংশিক পরিবর্তন করে সিনেমা নির্মাণ করে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন ও সৃজনশীল কর্ম চুরির অপরাধ করেছেন। সরকারী অর্থ আত্নসাতের জন্য নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর নিজের স্ত্রী খাতিজা বেগম মিতাকে বিলডাকিনি চলচ্চিত্রের নির্বাহী প্রযোজক এবং ঘনিষ্ঠবন্ধু জনাব আব্দুল মমিন খানকে প্রযোজক বানিয়ে সরকারী অর্থ উত্তোলণ করেছেন।
জনাব আব্দুল মমিন, তথ্য গোপন করে অসাধু পন্থা অবলম্বণ করে যোগ্যতা ছাড়াই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে চলচ্চিত্র অনুদান হস্তগত করেছেন, এই বিষয়ে বিগত ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে সময় টিভির একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় গণমাধ্যম সমূহে বিলডাকিনি চলচ্চিত্রের অনিয়ম নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।
ন্যায় বিচার ও সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি ও প্রাপ্য সম্মান-অধিকার চেয়ে আমি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি দিয়েছি, যার প্রেক্ষিতে তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মহোদয় বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন যার একটি রিসিভ কপি আমার কাছে আছে, বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। আমার অপর একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্তের জন্য পুলিশ প্রশাসন আমার বক্তব্য নিয়েছেন, সেটির চূড়ান্ত ফলাফল এখনো আমি পাইনি। এমতাবস্থায় প্রশাসনের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, যার বিরুদ্ধে সৃজনশীল জালিয়াতির বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, তাকে বাংলা একাডেমি কর্তৃক পুরস্কার প্রদান করা হলে বাংলা একাডেমির সুনাম ক্ষুন্ন ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ঠ হবে একই সাথে আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারি।
অতএব বিষয়টি আমলে নিয়ে বিলডাকিনি চলচ্চিত্র অনুদানে আমার অধিকার ও ন্যায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত এবং নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জনাব নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের বাংলা একাডেমি পুরষ্কার প্রদান স্থগিত করে এবং কথাসাহিত্যে জনাব নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে তার কথাসাহিত্যের মান বিচারের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।" চিঠিতে উল্লেখ করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার মনজুরুল ইসলাম মেঘ।
উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমি পুরস্কারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অযোগ্যদের পুরস্কার প্রদানের প্রতিবাদে ২৮ তারিখ বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের সাহিত্য যোগ্যতা এবং সরকারী আমলা ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলা একাডেমি পুরস্কার হাতিয়ে নেওয়ার সমালোচনা চলছে।
দেশের সাহিত্যিক মহল বলছেন, কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার এবং সরকারী আমলা ড. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর দীর্ঘ দিনের বন্ধু। নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ায় তার সাহিত্য যোগ্যতা নিয়ে সমালোচনা চলছে দেশের সাহিত্য মহলে এবং চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আছে তার নামে। নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর আমলা ক্ষমতা ব্যবহার করে এই পুরস্কার ভাগিয়ে নিয়েছে এমনাটাই ধারণা করছেন দেশের সাহিত্যিকরা। আমলাতান্ত্রিক অনিয়মের সমালোচনার প্রতি সমর্থন দিয়ে জাকির তালুকদান বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন জাকির নিজেই।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক বেশ কয়েকজন সাহিত্যিক জানিয়েছেন, নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাতিল বা স্থগিত করে সঠিক নিরপেক্ষ কমিটি দ্বারা যদি তদ্বন্ত না করা হয়, তাহলে বাংলা একাডেমি দেশের মানুষ বয়কট করবে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অনিয়মের কারণে সরকার সমালোচনায় পড়বে।
চলচ্চিত্র পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘের ফেসবুক পোস্টে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য প্রমাণ করে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে নয়, ক্ষমতা ব্যবহার করে অসৎ পন্থায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ইতোপূর্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক চলচ্চিত্র অনুদানের অনিয়ম ও জালজালিয়াতি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মনজুরুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গতকাল ২৮ তারিখ ডিবি কার্যালয় থেকে কল করে আমাকে আজ ২৯ তারিখ ডিবি কার্যালয় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ডিবি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করবো। গতকাল ২৮ জানুয়ারী ফেসবুক লাইভে আমরা ঘোষণা করেছি ৩০ তারিখ দুপুর ১২ টা থেকে অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রতিবাদ করবো আমরা, সারাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে যারা ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করেন, সেই সকল জায়গায় অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ জানাবেন দেশবাসী।
মনজুরুল আরো বলেন, বাংলা একাডেমিসহ সরকারের সব মন্ত্রণালয়ে ইমেইলে চিঠি দিয়েছি, বাংলা একাডেমি যদি নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ওরফে ড. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে ৩১ তারিখ থেকে লাগাতর রাস্থায় কর্মসূচী দিবো আমরা। সেই কর্মসূচীর সকল দায়ভার বাংলা একাডেমিকে নিতে হবে। নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের অবৈধ শক্তির থাবা বন্ধ করে ন্যায় বিচার করতে হবে আমাদের দাবি। আমরা সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছিনা, আমরা কথা বলছি অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারী কর্মকতার বিরুদ্ধে। সরকার ও প্রশাসন সঠিক তদ্বন্ত করে দুর্নীতিগ্রস্থ অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশ ও জাতির মঙ্গল হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, সহ-সম্পাদক: সুব্রত দেবনাথ, নির্বাহী সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী, বার্তা সম্পাদক : শহীদুর রহমান জুয়েল। ঢাকা-১২৩০ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।