নাজমুল হাসান নিরব,ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরে জীবন্ত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরে বন বিভাগে জমা দেয়ার পর আওয়ামী লীগের ঘোষিত পুরস্কারের অর্থ পেয়েছেন সেই তিন ব্যক্তি। মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তিন ব্যাক্তির হাতে পুরস্কারের অর্থের চেক তুলে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইশতিয়াক আরিফ।
পুরস্কার পাওয়া ব্যাক্তিরা হলেন, ফরিদপুর সদরের রেজাউল করিম, আজাদ শেখ ও শাহজাহান খান। পুরস্কারের অর্থের চেক পাওয়া আজাদ শেখ জানান, তিনি জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত পুরস্কারে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। এ সময় তিনি কথা রাখার জন্য জেলা আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদও জানান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নিয়াজ জামান সজীব বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ওই তিন ব্যাক্তিকে ডেকে তাদের হাতে পুরস্কারের টাকার চেক তুলে দেয়া হয়। এ সময় তিন জনকে আলাদাভাবে ৫০ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী ওই তিন ব্যক্তিকে পুরস্কার বাবদ ৫০ হাজার করে মোট দেড় লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ তাদের কথা রেখেছে। তবে যেহেতু এই ঘোষণা বন্য প্রাণী আইনের পরিপন্থী তাই ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন থেকে সাপ জীবিত বা মৃত আনলে কোনো পুরস্কার দেয়া হবে না।
ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা করা অপরাধ। শুধু বিষধর সাপই নয়, কোনো বন্যপ্রাণী মারা বা আটক করা যাবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধার করা তিনটি রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা আমাদের এখানে জমা দিয়েছেন তিন ব্যক্তি। সাপগুলোকে খুলনায় পাঠানো হয়েছে সংরক্ষণের জন্য। এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং সাপ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, গত তিন মাসে ৫ ব্যক্তিকে সাপে ছোবল দিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে চারজন মারা যান। জেলার হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। তবে এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত এ্যান্টিভেনম রয়েছে। রোগীকে ওঝার কাছে না নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে আনার পরামর্শ দেন সিভিল সার্জন। এ ছাড়া চরাঞ্চলের সাপের ছোবলে আহত রোগীদের শহরে আনার জন্য স্পিডবোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, মানুষের মধ্যে রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাপের কামড়ে খুব বেশি মানুষ আহত বা মারা গেছে এমন নয়। তবে চরাঞ্চলের চাষিদের মধ্যে গামবুট দেয়া হবে। এ ছাড়া স্পিডবোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সাপে কাটা রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে আনার জন্য। সচেতনতার জন্য মাইকিং সহ বিবিধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে প্রথমে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) মারতে পারলে গত ২০ জুন ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। এ নিয়ে সমালোচনা হওয়ার একদিন পর গত ২১ জুন জেলা আওয়ামী লীগ ওই ঘোষণা থেকে কিছুটা সরে আসে।
তখন, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, নিজে সুরক্ষিত থেকে জীবিত রাসেল ভাইপার ধরে বন বিভাগে জমা দেওয়া হলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হব। এ ঘোষণার পর রাসেল ভাইপার জীবিত ধরার জন্য তোড়জোর শুরু হয়ে যায় ফরিদপুর সদরসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, সহ-সম্পাদক: সুব্রত দেবনাথ, নির্বাহী সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী, বার্তা সম্পাদক : শহীদুর রহমান জুয়েল। ঢাকা-১২৩০ কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।