আজ ১৮ই জুলাই কবি, সংগঠক, নির্মাতা জায়েদ হোসাইন লাকীর জন্মদিন। জায়েদ হোসাইন লাকী ১৮ জুলাই ১৯৭৫ সালে ঢাকা (বিজি প্রেস অফিসার্স কোয়ার্টার) জন্মগ্রহন করেন। পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলাস্থ গজারিয়া গ্রাম।
জায়েদ হোসাইন লাকী নব্বই দশকের একজন প্রতিভাবান কবি। যদিও তিনি এ সময়ে এসে ঝলসে উঠেছেন এবং আলোচিত হচ্ছেন বিভিন্ন সাহিত্য মহলে। তার কবিতার একজন মুগ্ধ পাঠক হিসেবে বলতে পারি, তিনি সমকালকে ধারণ করে পরম একাগ্রতায় সমৃদ্ধ আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি, যে কবিতা অন্যকে ছুঁয়ে যেতে পারে না; তা কবিতা নয়। জায়েদ হোসাইন লাকীর কবিতা আমাকে ছুঁয়ে যায় বলেই সেগুলোকে আমি কবিতা বলি। একই কারণে এর রচয়িতাকে আমি কবি হিসেবেই গণ্য করি।
জায়েদ হোসাইন লাকী ফরিদপুর সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস (১৯৯৮) করেছেন। এছাড়াও তিনি মানব সম্পদ ব্যাবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা (পিজিডি-এইচআরএম) (২০১১), ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইয়েন্স এন্ড টেকনোলজি (ডিসিএসটি) করেছেন ঢাকার স্বনামধন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। গোপালগঞ্জের সরকারী মুকসুদপুর কলেজ ছাত্রসংসদ থেকে ‘জিএস’ পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ১৯৯৩ সালে এবং একটি ছাত্র সংগঠনের উপজেলা পর্যায়ে এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে শীর্ষ পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। প্রথাগত রাজনীতি থেকে সরে আসেন ২০০৩ সালে।
পেশা জীবনে জায়েদ হোসাইন লাকী আশা, প্রশিকা, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফিনান্স, হোমল্যান্ড ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, পিএসটিসি, সোপিরেট, সূর্যের হাসি ক্লিনক, ইউএসএআইডি, সেভ দ্য চিলড্রেন, এসএমসি, কনসার্নড উইমেন ফর ফ্যামেলি ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং ইনোভেশন ফর হেল্থ প্রজেক্ট, দেশের বৃহত্তম আরএমজি প্রতিষ্ঠান মডেল গ্রুপ এবং এমিনেন্স এসোসিয়েট ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে চাকুরী করেছেন দীর্ঘ ২২ বছর চাকুরী করেন।
স্ত্রী নুরুন নাহার শ্রাবণী (কবি, ছড়াকার, সংগঠক, শিক্ষক, গৃহিণী)। দুই কন্যাসন্তান সাদিয়া মিকি (ক্যামব্রিয়ান কলেজে অধ্যয়নরত) এবং রোজা মুসকান (আইডিয়াল স্কুলে অধ্যয়নরত)। বর্তমানে সবপরিবারে ঢাকায় বসবাস করছেন।
১৯৮৮ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসরে তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। প্রথম গ্রন্থ ১৯৯২ সালে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ মোট ১৫টি। ১৯৯৫ সালে তাঁর সম্পাদনায় সাহিত্য পত্রিকা ‘মুক্তি’ ঢাকার স্বামীবাগ থেকে প্রকাশিত হয়। এরপরে প্রকাশিত হয় আরো ৯টি লিটল ম্যাগ। লেখক হিসেবে ১৯৯৬ সালে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি’ কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় কোষগ্রন্থ (এনসাইক্লোপিডিয়া) ‘বাংলাপিডিয়া’তে। উক্ত গ্রন্থটি মোট ১৪ টি খণ্ডে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় মুদ্রিত হয়।
লেখালেখির পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন ধরে টিভি নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনা করে আসছেন। নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘রাজশ্রী ফিল্মস’ এর ব্যানারে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৯ টি ডকুমেন্টরি ফিল্ম ১১ টি নাটক, বেশ কিছু টিভি বিজ্ঞাপনচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র এবং মিউজিক ভিডিও বানিয়েছেন। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত মেরিল-প্রথম আলো আগামীর নির্মাতা প্রতিযোগিতায় তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের তালিকায় ছিলেন। নাটক, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পাশাপাশি তিনি দেশের জনপ্রিয় দুটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সংবাদ পাঠ করেছেন কিছুদিন। আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ‘সাহিত্য দিগন্ত’ নামে তার একটি টিম আছে যা ঢাকার শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে খুবই পরিচিত। সাহিত্য দিগন্ত টিম থেকে তার নেতৃত্বে ও উপস্থাপনায় গত ৬ বছরে (২০১৭-২০২৩) মোট ৮৩ টি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তিনি এসডি টেলিভিশন এর পরিচালক এবং সোনার বাংলা আইপি টিভির প্রোগ্রাম নির্বাহী হিসেবেও কাজ করেছেন।
তার ‘ফ্রেন্ডস অব হিউমেনিটি বাংলাদেশ’ নামে একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে। উক্ত সংগঠন দুটির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্বরত আছেন। ‘ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি বাংলাদেশ’ সংঠনের মাধ্যমে তিনি এবং তার টিমের সদস্যরা গত ৬ বছরে ১১.৩১০ জন হতদরিদ্র মানুষকে সরাসরি খাদ্য, বস্ত্র এবং ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন, পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে। এই প্রকল্পের কাজ বর্তমানেও চলমান।
বর্তমানে তিনি দেশের জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা ‘ত্রৈমাসিক সাহিত্য দিগন্ত’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়াও সাপ্তাহিক ‘অপরাধ সূত্র’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, দৈনিক ‘বাঙ্গালীর কণ্ঠ’ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক গণবার্তা পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ডেইলি নববার্তা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন।
তার সম্পাদিত ছোট কাগজ গুলোর মধ্যে মুক্তি, মানবজীবন, জাগরণ, মানচিত্র, সময়, ভুমিপত্র, বাংলাকাগজ, ও কালেরবৃক্ষ উল্লেখযোগ্য। ‘মনোভুমি’ নামে তার একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছিল, এখন নেই। তিনি নিয়মিত লিখছেন শব্দনীড়, উইবলি, বিডিনিউজ, সামহোয়ার ইন ব্লগ সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।
শিল্প-সাহিত্যের অর্জন হিসেবে তিনি বেশ কিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
❑ অধ্যাপক সত্যেন বোস সাহিত্য পদক-২০১১
❑ আমরা করব জয় সাহিত্য সম্মাননা-২০১৪
❑ জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬
❑ সাপ্তাহিক ‘খোলাচোখ’ সাহিত্য সম্মাননা-২০১৮
❑ মেরিল-প্রথম আলো আগামীর নির্মাতা-২০১৯ (সেরা চিত্রনির্মাতা-২৩)
❑ ইন্টারন্যাশনাল এম্বাসেডর অব পিচ-২০২১
(জাতিসংঘের নিবন্ধিত ও অনুমোদিত ‘ওয়ার্লড লেটারারি ফোরাম ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইটস’ ভুটান)
❑ বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটি সম্মাননা-২০২২
❑ বাংলাদেশ কালচারাল কল্যাণ পরিষদ পুরস্কার-২০২২
❑ শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক, রেওয়া আন্তর্জাতিক শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-২০২২ (ইন্ডিয়া)
২০২১ সালে তিনি জাতিসংঘের নিবন্ধিত ও অনুমোদিত ‘ওয়ার্লড লেটারারি ফোরাম ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইটস’ থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল এম্বাসেডর অব পিচ’ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ‘ঢাকা সাহিত্য পরিষদ’ এর বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাহী সভাপতি এবং জাগো নারী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
'সত্য প্রকাশে আপোসহীন দৈনিক' স্লোগান সংবলিত দৈনিক নববার্তা'য় থাকছে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৫ উপজেলার খবর।