বিগত সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার মধ্যে অন্যতম আরও একটি ব্যর্থতা হচ্ছে ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে আনতে না পারা। ফলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভারতে গিয়ে ভিসা সাক্ষাৎকারের সম্মুখীন হতে হয়।
ভারতে ভিসা সাক্ষাৎকারের জন্য প্রবেশ করতে গেলে তাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ী ডাবল এন্ট্রি ভিসা করতে হয়। কিন্তু তাদের শর্ত অনুযায়ী সব বৈধ প্রমাণপত্র দেয়ার পরও তারা বিনা কারণেই ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রত্যাখ্যান করে দেয়। এতে যেমন শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট হয়, তেমনি আর্থিক দিক দিয়েও তারা ক্ষতির সম্মুখীন হন।
বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী স্কলারশিপ পাওয়ার পরও তাদের এই ডাবল এন্ট্রি ভিসা জটিলতার জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। পাশাপাশি যারা নিজস্ব অর্থায়নে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে টিউশন ফি দিয়ে থাকে, তারা নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরিরে উপস্থিত থাকতে না পারলে টিউশন ফি’ও ফেরত দেয় অনেক ক্ষেত্রে।
চলতি বছর অন্য ইউরোপিয়ান দেশের তুলনায় রোমানিয়াতে সবেচয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য তাদের মিনিস্ট্রি কর্তৃক প্রদানকৃত অফার লেটার পেয়েছে। ভারতীয় ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কিছু শর্তসাপেক্ষে বিকল্প দুটি দেশ ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের অনুমতি পান শিক্ষার্থীরা। তাদের শর্তে ছিল ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলে আবার ভারতেই ভিসা সাক্ষাৎকার দিতে হবে।
ভারতীয় ভিসা জটিলতার জন্য যারা তখনও টিউশন ফি দেয়নি, এই নোটিশটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে টিউশন ফি পরিশোধ করে এবং ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদনও করে। কিছু শিক্ষার্থী ভিসা পেয়ে ভিয়েতনামে চলেও গেছেন। ভিয়েতনামে ভিসা, প্লেনের টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং এসব মিলিয়ে অলরেডি অনেকেই ৮০-৯০ হাজার টাকার মতো এখানে খরচ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ভিয়েতনাম থেকে জানানো হয় ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় তারা এখন থেকে আর কোনো বাংলাদেশিকে নতুনভাবে সাক্ষাৎকারের অনুমতি দেবে না।
প্রকৃতপক্ষে ভারত এখনও ঠিকঠাকমতো ভিসা ইস্যুই করছে না। তারা দু-তিনদিন পরপর নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু স্লট দেয় যেখানে পাঁচ-সাতজন ভারতীয় ভিসার আবেদন করতে পারে। কিন্তু ওই পাঁচ-সাতজনও প্রায় ১০-১৫দিন অপেক্ষার পরে ভিসাহীন খালি পাসপোর্ট ফেরত পায়। সব প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র দেয়ার পরও কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
ফলে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। যারা এরইমধ্যে ৩-৫ লাখ টাকা টিউশন ফিসহ একোমোডেশন বাবদ প্রায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা খরচ করেছে। এখনও রোমানিয়ান প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীসহ অন্য ইউরোপিয়ান দেশের শিক্ষার্থী মিলিয়ে প্রায় হাজারও শিক্ষার্থী তাদের অফার লেটার পেয়ে একবছরের টিউশন ফি পরিশোধের পরও ভিসা সাক্ষাৎকার দিতে পারছে না।
তাই স্বপ্ন রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি পরবর্তী শিক্ষাবছরে যেন বাংলাদেশ থেকেই বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দেয়া যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।