বাড়ন্ত বয়সে শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে প্রায় সব অভিভাবকই চিন্তায় থাকেন। শিশু ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, শিশুর ওজন ঠিক আছে কি না, সময়মতো উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না–এসব নিয়ে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ নেই।
যদিও একটি শিশুর বিকাশ তার জিনের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। তবে শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাবারেরও প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, ছোটবেলা থেকে শিশুকে সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে তার বৃদ্ধি দ্রুত হবে।
এমন কিছু খাবার রয়েছে যা শিশুকে নিয়মিত খাওয়ালে শিশুর উচ্চতা ও বৃদ্ধি নিয়ে বাবা-মায়ের চিন্তার অবসান হতে পারে। চলুন জেনে নেই খাবারগুলো কি কি…
১. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে দুগ্ধজাত খাবার : শিশুর স্বাভাবিক লম্বা বৃদ্ধিতে দুধের পাশাপাশি দুগ্ধজাত খাবারও খাওয়া উচিত। পনির, মাখন, ঘি, দই ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবারে ভিটামিন এ, বি, ডি এবং ই রয়েছে। এ ছাড়া এসব খাবারে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামও রয়েছে। ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম শিশুর বিকাশ ও উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন ডি-এর অভাবের ফলে উচ্চতা কম হতে পারে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও গুরুত্বপূর্ণ শিশুদের জন্য, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময়।
২. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে সবুজ শাকসবজি : পালং শাকের মতো গাঢ় সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফাইবার, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। শিশুর সামগ্রিক বৃদ্ধি ও লম্বার জন্য এগুলো অপরিহার্য। সেজন্য আপনি যদি চান আপনার সন্তান লম্বা হোক, তাহলে তার উচ্চতা বাড়াতে নিয়মিত খাবারে সবুজ শাকসবজি রাখুন।
৩. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে স্টার্চ এবং শস্য : স্টার্চ এবং শস্য আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। এ ছাড়াও, তারা ভিটামিন বি, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম এবং সেলেনিয়াম সরবরাহ করে। এসব জাতীয় খাবারে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পাওয়া যায়, তাই বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময়, যখন শিশুরা দ্রুত বৃদ্ধির পর্যায়ে থাকে তখন শিশুদের এ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ানো উচিত। বাদামি চাল, পপকর্ন, গম এবং শস্যের তৈরি পাস্তা শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
৪. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে সয়াবিন : সব নিরামিষ খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন থাকে সয়াবিনে। সয়াবিনে থাকা বিশুদ্ধ প্রোটিন হাড় এবং টিস্যুর ভর উন্নত করে। উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য, প্রতিদিন ৫০ গ্রাম সয়াবিন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা। এ ছাড়া নিরামিষাশীরা তাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে সয়াবিন থেকে।
৫. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে মটরশুটি : মটরশুটি প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়ামে ভরপুর অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। শিশুদের বাড়ন্ত বয়সে এটা অত্যন্ত জরুরি একটা খাবার।
৬. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে ডিম : প্রোটিনের আরেকটি ভালো উৎস হল ডিম। ডিমের সাদা অংশ অ্যালবুমেন ১০০ শতাংশ প্রোটিন। এ ছাড়া ডিমে ভিটামিন বি২ থাকে, যা রিবোফ্লাভিন নামেও পরিচিত। তাই উচ্চতা বাড়াতে চাইলে শিশুর নিয়মিত খাবারে ডিম রাখতে হবে।
৭. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে কলা : শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল কলা। এটি পটাশিয়াম, ম্যাংগানিজ, ক্যালসিয়াম, দ্রবণীয় ফাইবার, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং স্বাস্থ্যকর প্রোবায়োটিকের মতো অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। সন্তানের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সুষম খাদ্য বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার প্রথমে কলার নাম আসে।
৮. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে সামুদ্রিক মাছ : শিশুর সামগ্রিক বিকাশের পাশাপাশি উচ্চতা বৃদ্ধিতে মাছ অনেক উপকারী খাবার। কারণ এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর একটি খাবার। সাধারণত ১০০ গ্রাম স্যামন মাছে ২.৩ গ্রাম ওমেগা-৩, পাশাপাশি আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন রয়েছে।
২০১৭ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি মানসিক বিকাশের পাশাপাশি হৃরোগ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শিশুদের বেড়ে উঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৯. শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাদাম : বাদাম জাতীয় খাবার যেমন কাজুবাদাম, কাঠবাদামে লম্বা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলস এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে যা শিশুর হার্টের জন্য খুবই উপকারী। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া