dailynobobarta logo
আজ বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | কনভার্টার
  1. অন্যান্য
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. গণমাধ্যম
  6. ধর্ম
  7. প্রযুক্তি
  8. বাংলাদেশ
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ নিবন্ধ
  11. লাইফস্টাইল
  12. শিক্ষা
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সারাদেশ
  15. সাহিত্য

হুমায়ূন আহমেদের একাদশ প্রয়াণ দিবস আজ

প্রতিবেদক
দৈনিক নববার্তা ডেস্ক
বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩ | ২:৫৯ অপরাহ্ণ
হুমায়ূন আহমেদ

বাংলাদেশের লোকপ্রিয় হিমু, মিসির আলী, শুভ্রসহ অসংখ্য জনপ্রিয় চরিত্রসৃষ্টিকারী, সেই নান্দনিক কথাসাহিত্যিক কিংবদন্তীতুল্য চলচ্চিত্রনির্মাতা বরেণ্য এই মানুষটিরই (হুমায়ূন আহমেদের) একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মরিলে কান্দিস না আমার দায়/ রে যাদু ধন, মরিলে কান্দিস না আমার দায়….।

হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় গান ছিলো এটি। হুমায়ূন আহমেদ চাননি তার মৃত্যুতে কেউ কাঁদুক। তবে নান্দনিক এই কথা সাহিত্যিকের এই ইচ্ছা পূরণ করতে পারেননি তারা স্বজন-ভক্ত, পাঠক, বন্ধু-সহকর্মী কেউই। অশ্রুসিক্ত শেষ বিদায়ের পর ছয় বছর পার হয়ে গেলেও এখনও প্রিয় হুমায়ূন আহমেদের জন্য চোখের পানি ফেলছেন অনেকেই।

আজ থেকে এগারো বছর আগে অর্থাৎ গত ২০১২ সালের ঠিক আজকের এই দিনেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের বেলভ্যু হাসপাতালে ক্যান্সারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাত্র ৬৪ বছর বয়সে অগণিত ভক্তকে চোখের জলে ভাসিয়ে চিরতরে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশের মহান লেখক, নন্দিত কথাসাহিত্যিক, জননন্দিত নাট্যকার, খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকার এবং জনপ্রিয়তম চলচ্চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। মৃত্যুর পাচঁ দিন পর ২৩শে জুলাই তার লাশ দেশে আনা হয় এবং ২৪শে জুলাই তার লাশ দাফন করা হয় তারই গড়ে তোলা নুহাশ পল্লীতে।
এক নজরে হুমায়ূন আহমেদ

জীবনযুদ্ধে নানা দুঃখ-কষ্টের মুখোমুখি হতে হলেও লেখক হিসাবে তিনি প্রথম থেকেই বাংলার পাঠকের হূদয়ে স্থান করে নেন। নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার এ দুটি উপন্যাস দিয়ে যাত্রা শুরু তার। এরপর গত চার দশকে তার জনপ্রিয়তা আকাশ স্পর্শ করেছে। তাকে ছাপিয়ে আর কোন লেখকই আজ পর্যন্ত পাঠকের মনে স্থান করে নিতে পারেনি। লেখক হিসাবে ঈর্ষণীয় অবস্থানে বিরাজ করছেন তিনি। শুধু উপন্যাস বা ছোট গল্প নয় সংস্কৃতির যে মাধ্যমে হাত দিয়েছেন জনপ্রিয়তা যেন তার পায়ে লুটোপুটি খেয়েছে। টিভি নাটক, চলচ্চিত্র এমনকি কবিতা রচনা সবকিছুই পাঠক পরম আদরে বুকে তুলে নিয়েছে।

ছোটবেলায় হুমায়ূনের নাম ছিল শামসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর তিনি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান আহমদ, মা রত্নগর্ভা আয়েশা আখতার খাতুন। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি শহীদ হন। তার অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের আরেক জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট।

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তার তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে জন্মগ্রহণ করে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নূহাশ আহমেদ। ১৯৯০ সালে শীলা আহমেদের বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা হয়। পরে ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি শাওনকে বিয়ে করেন। শাওনের ঘরে তার তিন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। প্রথম কন্যাটি মারা যায়। পরের দুছেলের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।

সত্তরের দশকে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হলে সাহিত্যমহলে তুমুল ঝড় ওঠে। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’ও সাহিত্যানুরাগীদের মধ্যে আলোড়ন তোলে। উপন্যাস দিয়ে শুরু হলেও তিনি শিল্পের নানা মাধ্যমে বিচরণ করেছেন সফলভাবে। গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী, সায়েন্স ফিকশন, আত্মজীবনীমূলক উপাখ্যান, ভ্রমণ কাহিনী, অনুবাদ, কবিতা, সংগীত, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ ইত্যাদিতেও তিনি ছিলেন পাঠকপ্রিয়। শুধু পাঠকপ্রিয় বললে ভুল হবে, তার মতো জনপ্রিয় হওয়ার সৌভাগ্য বাংলা লেখককুলে খুব কমজনের ভাগ্যেই জুটেছে।

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে লেখালেখিতেই সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন।

’৮০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান তিনি। এরপর বহুব্রীহি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাতের মতো জনপ্রিয় নাটকও আসে তার হাত দিয়ে। বিভিন্ন গল্প ও উপন্যাসে তার নির্মিত দুই চরিত্র হিমু ও মিসির আলী নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয়তম। নাটক লেখার এক পর্যায়ে নির্দেশনায়ও নামেন হুমায়ূন। নাটক নির্দেশনায় হাত পাকিয়ে নামেন চলচ্চিত্র পরিচালনায়। আগুনের পরশমনি দিয়ে শুরু করে শ্রাবণমেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামলছায়ার মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমনি কয়েকটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। তুমুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তিনি আড়ালযাপন করতেন। লেখালেখি ও নাটক-সিনেমা পরিচালনায় নিজেকে সবসময় ব্যাপৃত রাখতেন।

তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। উল্লেখযোগ্য হলো- নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প, এইসব দিনরাত্রি, মধ্যাহ্ন, দারুচিনি দ্বীপ, মন্দ্রসপ্তক, বহুব্রীহি, আগুনের পরশমণি, কোথাও কেউ নেই, বলপয়েন্ট, কাঠপেন্সিল, ফাউন্টেইন পেন ইত্যাদি। সংলাপধর্মী রচনার অনন্য প্রতিভা ছিল তার। পাঠককে এক লহমায় টেনে আনার মতো প্রবল আকর্ষণক্ষমতা ছিল তার সমগ্র লেখালেখিতে। এর মধ্যে অনেক রচনাই পরবর্তীতে টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়, যেগুলো সমান দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া’ অস্কারে প্রদর্শনীর জন্যও মনোনীত হয়। ‘আগুনের পরশমণি’, ‘দুই দুয়ারী’ ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘নিরন্তর’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ও সর্বশেষ ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ বহুল প্রশংসিত ও দর্শননন্দিত চলচ্চিত্র।

এ পর্যন্ত সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পুরস্কারই তিনি পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, শিশু একাডেমী পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৩, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪) লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূধন পুরস্কার, বাচশাস পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক ইত্যাদি।

আমি জনাব হুমায়ূন আহমেদের এই অকাল মৃত্যুতে মর্মাহত, ব্যাথিত। আমি আমার প্রিয় এই মহান লেখকের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর উদ্দেশ্য আমার পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক ভালবাসা – প্রাণঢালা শুভেচ্ছ। আমি তার পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং দোয়া করছি, যেন তার পরিবার তার এই অকাল প্রয়াণ সইতে পারেন এবং দোয়া করছি আললাহ যেন তাকে বেহেস্ত নছীব করেন।

লোকপ্রিয় হিমু, মিসির আলী, শুভ্রসহ অসংখ্য জনপ্রিয় চরিত্রসৃষ্টিকারী বাংলাদেশের মহান লেখক, নন্দিত কথাসাহিত্যিক, জননন্দিত নাট্যকার, খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকার এবং জনপ্রিয়তম চলচ্চিত্রনির্মাতা সেই নান্দনিক কিংবদন্তীতুল্য বরেণ্য এই মানুষটির (হুমায়ূন আহমেদের) একাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি আমার প্রিয় মানুষকে আমার মনের মণি-কোঠায় আজন্ম বেঁচে থাকবেন বলে মনে করি, আর তাঁর মতো মানুষের বিদায় দেয়া কি এতই সহজ? আর আমার মনের মণি-কোঠায় যার অবস্থান সে কখনও বিদায় নিতে পারে না। আজন্ম বেঁচে থাকে ভক্তদের হৃদয়ে।

হুমায়ূন আহমেদ সারা জীবন মানুষকে উৎসাহ দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর মতো মানুষের প্রয়োজন রয়েছে পৃথিবীতে। তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন এ বাংলার লোকপ্রিয় নির্যাতিত মানুষের মুক্তির ও সংগ্রামের আশার প্রতীক হয়ে এবং বাংলার ইতিহাসের সকল জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রখ্যাত মহান লেখক হিসেবে। তিনি হারাবার নন। ২০১২ সালের এই দিনে দেহবসান হলেও অগণিত ভক্ত-অনুরাগী-হিমুদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন হুমায়ূন আহমেদ এটাই আমাদের সবার কামনা।

সর্বশেষ - মানিকগঞ্জ

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com