সেপ্টেম্বর মাস হচ্ছে প্রোস্টেট ক্যান্সার সচেতনতার মাস। পুরুষরা সবচেয়ে বেশি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর পরেই রয়েছে প্রোস্টেট ক্যান্সার। ৫০ শতাংশ রোগীর বয়স সাধারণত ৬৫-এর বেশি হয়। কারও পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২-৩ গুণ বেড়ে যায়।
লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত বেশি লক্ষণ থাকে না। তবে প্রস্রাবে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন– প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সমস্যা ও ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা, সহবাসের সময় ব্যথা করা, প্রস্রাবে বা মিলনে রক্ত যায়, পিঠে বা কোমরে যন্ত্রণা ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ নিয়ে আসে।
পরীক্ষা
প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে কয়েক ধরনের পরীক্ষা করা হয়। যেমন–
১. রক্তের পিএসএ/প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষা। সাধারণত রক্তের পিএসএর মাত্রা ১ থেকে ৪-এর মধ্যে থাকে। ৪-এর বেশি হলে ক্যান্সারের আশঙ্কা আছে।
২. ডিজিটাল রেক্টাল টেস্ট সাধারণত একজন ইউরোলজিস্ট রোগীর পায়ুপথে আঙুল দিয়ে করে থাকেন।
৩. মাল্টিপ্যারামেট্রিক এমআরআই (প্লাজম অন্ত্রনাস)
৪. প্রোস্টেট বায়োপসি (ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য)
৫. স্টেজিং পরীক্ষা (ক্যান্সার অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে কিনা)
চিকিৎসা
প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন– রোগীর বয়স, রোগীর অন্যান্য রোগ ও পারফরম্যান্স, ক্যান্সার স্টেজ ও গ্রেড এবং রোগীর ইচ্ছা।
১. রোগী স্টেজ ওয়ান ও টু-এ থাকলে সার্ভিলেন্স, প্রোস্টটেকটমি, রেডিওথেরাপি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
২. স্টেজ থ্রিতে থাকলে প্রোস্টটেকটমি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি পদ্ধতিতে চিকিৎসা চলে।
৩. রোগী স্টেজ ফোর-এ থাকলে সিমসি রিলিজ করা, অ্যান্ডজেন ডিক্রাইজেশন থেরাপি/ কেসথেরাপি/রেডিওথেরাপি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রতিরোধে করণীয়
প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের সবজি, যেমন– টমেটো, রসুন, মাশরুম, বেগুন, ব্রুকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম রাখুন। এ ছাড়া পেঁপে, তরমুজ, আম, বেল খান। সয়া সিড, তিসির বীজ, বাদাম, আখরোট এবং ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ মাছ ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া গ্রিন টি ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ক্যান্সার প্রতিরোধে দুগ্ধজাতীয় দ্রব্য, রেডমিট কম খেতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
সাধারণত রক্তের পিএসএ পরীক্ষা করে আমরা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে পারি। যত দ্রুত রোগ শনাক্ত করতে এবং চিকিৎসা দিতে পারব, রোগীর সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল তত বাড়তে পারে।
লেখক: ইউরোলজিস্ট অ্যান্ড ইউরো অনকোলজিস্ট ও কনসালট্যান্ট, মনোয়ারা হসপিটাল (প্রা.) লিমিটেড, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।