ঝালকাঠিতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সাক্ষর জাল করে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান ওরফে মিলনসহ ১২জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে ঝালকাঠি সদর থানায় মাসুদ সিকদার নামে এক যুবলীগের এক কর্মী এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলো, ১ হাদিসুর রহমান ওরফে মিলন (৩৮), মিলন হাওলাদার (৩৬), তরিকুল ইসলাম (৩০), মো. মনিরুজ্জামান (৩৮), শাখাওয়াত হোসেন (৩৬), মো. মরিয়াজ হাওলাদার (৩৫), আল আরাফাত (২৩), আসাদুজ্জামান তালুকদার (৪০), আলীম আল রজিব (৪০), মাহমুদুল সাগর (২৫), মোহাম্মদ রনি হাওলাদার (৩৫) ও বশির আহম্মেদ খলিফাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জন। আসামিরা অধিকাংশই সাবেক জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, আসামিরা কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সীল ও সাক্ষর জালিয়াতি করে জেলা যুবলীগের ২২ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়াইয়া দেয়। পাশাপাশি তা শত শত মানুষের মাঝে ছড়াইয়া দেয়। গত ৬ সেপ্টম্বর শহরের ডাক্তার পট্টি এলাকায় বাদী বিষয়টির কারণ জানিতে চাইলে ১ নম্বর আসামি সৈয়দ হাদিসুর রহমানসহ আসামিরা বাদিকে কিল ঘুষি মারিয়া জখম করে। বাদি বিষয়টি আহবায়ক রেজাউল করিম ও যুগ্ন আহবায়ক কামাল শরীফকে জানালে তাঁরা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এ ধরণের কোন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
গত ৩ সেপ্টেম্বর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত অনুমোদিত একটি কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে আহবায়ক করা হয়েছে জেলা যুবলীগের আহবায়ক রেজাউল করিমকে এবং যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমানকে। অথচ বর্তমানে এ কমিটির যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন মো. কামাল শরীফ। পরে এ নিয়ে শহরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ শহরে উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে সৈয়দ হাদিসুর রহমানের অনুসারি ৮জনকে আটক করে পরে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে গত বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জেলা যুবলীগের আহবায়ক রেজাউল করিমের কাছে প্রেরণ করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কে বা কারা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ঝালকাঠি জেলা শাখার কোন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কমিটি ছড়ানো হয়েছে সেটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। যারা এই গুজব ও অপপ্রচারের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছা জানাতে থাকেন তাঁদের সমর্থকরা। এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান বলেন, আমাকে জড়িয়ে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেগুলো সবই ভিত্তিহীন। কোন কুচক্রী মহল আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার নোংরা খেলায় মেতেছে। তাঁদের নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যার মামলার তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের আহবায়ক রেজাউল করিম বলেন, একটি কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি সম্পূর্ণ ভূয়া। এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করেছে। ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলন ও তার একাধিক অনুসারীকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ ঝালকাঠি শহরের ডাক্তার পট্টি কার সৈয়দ টাওয়ার নামে মিলনের মালিকানাধীন একটি ভবন থেকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে মিলন ও তার অনুসারীদের নামে একাধিক মামলা হয়। এই মামলা এখনও বিচারাধীন আছে।