রাসূল (সা.)সারা জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ,অবশ্যই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাকের রাসুল।(সুরা আলে ইমরান-১৪৪) আল্লাহ আমাদের জন্য তথা সারা আলমের জন্য তার হাবিব মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবচেয়ে বড় উছিলা বানিয়েছেন। আল্লাহ পাক তার হাবিবকে কেন্দ্রীয় অবস্থানে রেখে সারা আলমের সব আয়োজনকে সুসম্পন্ন করেছেন।
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধারে আবির্ভাব ও তিরোধান সারা আলমের জন্য আল্লাহ পাকের রহমত এবং ফজল ও করমস্বরূপ। সারা বিশ্বে আল্লাহ পাকের হাবিব হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত পাক, সিরাত সুরাতকে গুরুত্ব সহকারে পালন করে আসছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমামগণ।
কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস মোতাবেক এই আনুষ্ঠানিকতা সুন্নতে উম্মত মুস্তাহসান। এর উছিলায় বিশ্ব মুসলিম নানাভাবে আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টি-রেজামন্দি হাসিলের সুযোগ পায়। আল্লাহ পাক বলেন, আপনার প্রতিপালকের নিয়ামত বর্ণনা করুন (সুরা দোহা-১১)।
অন্য আয়াত শরিফে আল্লাহ পাক বলেন, আপনি বলে দিন আল্লাহ পাকের ফজল ও রহমতের জন্য তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে (সুরা ইউনূস-৫৮)। এখানে আল্লাহর রহমত মূলত তার হাবিব সাইয়িদ্যুত হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কেননা আল্লাহ পাক বলেন, আমি আপনাকে সারা জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি (সুরা আম্বিয়া-১০৭)। ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজন, আনুষ্ঠানিকতা কেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মাশায়েখগণ মহব্বতের সঙ্গে করে থাকেন তা গভীরভাবে উপলব্ধি করার জন্য নিম্নে বর্ণিত দ্বীন-ইসলামের মহান বুজুর্গগণের কওল সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য।
হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মিলাদ শরিফ পাঠ (মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকেন (সুবানাল্লাহ) (আন নেয়ামাতুল কুবরা)। হজরত উমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (বেলাদত দিবসকে) বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করল (সুবহানাল্লাহ) (আন নেয়মাতুল কুবরা)।
হজরত ওসমান (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল, সে যেন বদর ও হুনায়েন যুদ্ধে শরিক থাকল (সুবহানাল্লাহ) (আন নেয়মাতুল কুবরা)। হজরত আলী (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলেন, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ইমাম হাসান বসরি (র.) বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সম্পদ থাকত, তাহলে তা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ব্যয় করতাম (সুবাহানাল্লাহ) (আন নেয়ামাতুল কুবরা)। সাইয়িদ্যূত ত্বিফা হজরত জুনাইদ বোগদাদি (র.) বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে উপস্থিত হলো এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করল। সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশতি হবে (সুবাহানাল্লাহ) (আন নেয়ামাতুল কুবরা)।
হজরত মারুফ কারখি (র.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিশে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন লেবাস পরিধান করে, মিলাদুন্নবীর তাজিমার্থে সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে। আল্লাহ পাক তাকে নবী (আ.) গণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে অধিষ্ঠিত হবেন (সুবাহানাল্লাহ) (আন নেয়ামাতুল কুবরা)।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (র.) বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদ শরিফ পাঠ করে বা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে, লবণ, গম বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের ওপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্যদ্রব্য অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যেকোনো কিছুর ওপরই পাঠ করুন না কেন। (তাতে বরকত হবেই) (সুবাহানাল্লাহ) (আন নেয়ামাতুল কুবরা)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন নবী সা. উদযাপন করার তাওফিক দান করেন আমীন।