dailynobobarta logo
আজ মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | কনভার্টার
  1. অন্যান্য
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. গণমাধ্যম
  6. ধর্ম
  7. প্রযুক্তি
  8. বাংলাদেশ
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ নিবন্ধ
  11. লাইফস্টাইল
  12. শিক্ষা
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সারাদেশ
  15. সাহিত্য

শেরপুরে কালো আখ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের

প্রতিবেদক
বেলায়েত হোসাইন, শেরপুর প্রতিনিধি
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
কালো আখ

প্রচণ্ড গরমে এক গ্লাস আখের রস প্রাণে তৃপ্তি আনে। ফলে গরমকালে আখের চাহিদা বহু গুণ বেড়ে যায়। চিনির জন্য আখের চাহিদা সবসময় থাকলেও গ্রীষ্মকালে এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কারণ গরমে আখের মিষ্টি ও সতেজ রস প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। আখের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে স্বল্প খরচে অধিক ফলন, ওষুধি গুণ, দেশীয় আখের চেয়ে মোটা, অধিক রসালো এবং দ্বিগুণ লম্বা ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার জাতের বা কালো রঙের আখ সম্প্রতি বাংলাদেশে গবেষণা পর্যায়ে থাকলেও শেরপুরে এ আখ চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে কৃষদের মাঝে।

ফিলিপাইনের এই ব্ল্যাক সুগার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের উত্তরপ্রদেশে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা বিভাগ শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ শুরু করলেও মাত্র ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে এ আখ পরিপক্ক হওয়ায় এবং রসালো ও প্রচুর ফলন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বানিজ্যিকভাবে এ আখ চাষে ব্যাপক আগ্রহ শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, ফিলিপাইনের কালো রঙের বা ব্ল্যাক সুগার আখ শুধু গরমে তৃপ্তিই নয়, এর রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। মুখে ব্রন ওঠা, মুখের ওপর বলি রেখা দূর করে এই আখের রস। ফলে ঢাকায় এ রসের ভীষন চাহিদা। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো জাতের আখ হলো এই ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ। বাজারে যেসব আখ পাওয়া যায় অনেক সময় সেগুলো শক্ত, মিষ্টি ও রস কম থাকে। কিন্তু ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের এই আখ সেইদিক দিয়ে বেশ ভালো জাতের।

এ আখের মিষ্টতা অনেক বেশি ও নরম থাকায় বৃদ্ধ ও শিশুরা এই আখ অনায়াসেই চিবিয়ে খেতে পারে। এর খোসা হাতের আঙ্গুল দিয়েও ছাড়ানো যায়। বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। তাই শেরপুরে এ ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ বাণিজ্যিকভাবে শুরু করার চিন্তা ভাবনা করছে স্থানীয় কৃষকরা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে বেড়েছে শেরপুরের কৃষকদের, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা গ্রামের ঢাকায় একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আব্দুর রহিম তার গ্রামের বাড়িতে গত বছর থেকে তার নিজস্ব ৫০ শতক জমিতে ১২ হাজার এবং সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের কেন্দুয়ারচর গ্রামের দুই বন্ধু প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান ও সোহেল আহমেদ যৌথভাবে ‘তালুকদার এগ্রো’ ফার্মের ভেতর ৩০ শতক জমিতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পিছ এই ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের আখের চারা রোপণ করেছেন। বাজারে দেশীয় যে আখগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো সাধারণত সবোর্চ্চ ১০ ফিট বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু ফিলিপাইন জাতের আখের উচ্চতা প্রায় দ্বিগুণ হয় অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ ফুট।

এ আখের নানা গুণের পাশাপাশি চাষেও রয়েছে ভিন্নতা ও অধিক লাভের সুযোগ। প্রতিটা চারার গোড়া থেকে আরও প্রায় ১০ থেকে ১১ টি চারা গজায় এবং প্রতিটা গাছ লম্বা হয় প্রায় ১৪-১৫ ফুট। সার-পানি খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। ফলে স্বল্প খরচেই এ আখ চাষ করা যায়। একবার এ চারা রোপণ করলে পরবর্তী ৩ বছর আর নতুন করে রোপণ করার প্রয়োজন হয় না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকেই নতুন করে আখের চারা গজিয়ে ওঠে এবং তার থেকে পরবর্তী বছরে আবারও ফলন পাওয়া যায়।

এছাড়া প্রতিটি আখ থেকে প্রায় ৩ কেজি রস বের করা যায়। যা দেশীয় আখ থেকে সম্ভব নয়। বাজার মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবে বেশি। প্রতিটা আখ ৫০ থেকে ৭০ টাকায় পাইকারী বিক্রি করা যায়। তবে খুচরা বিক্র হয় প্রায় ১শত টাকা। উল্লেখিত আখ বাগানে বা ক্ষেত আসছে আশপাশের মানুষ এবং এ আখ চাষের চিন্তাও করছে কেউ কেউ। শ্রীবর্দীতে ওই চাষির আখ দেখে ইতিমধ্যে তার কাছ থেকে চারা নিয়ে পাশ্ববর্তী মালাকুচা গ্রামে এক কৃষক প্রায় এক একর জমিতে আবাদ শুরু করেছে। এদিকে সদর উপজেলার তালুকদার এগ্রো থেকেও আখ বিক্রি শুরু করেছে।

শ্রীবর্দী উপজেলার আখ চাষি রহিম মিয়া জানান, ফিলিপাইনি এ আখের চারা তিনি রাজশাহী থেকে নিয়ে আসেন। এরপর তার ক্ষেতের পরিপক্ক আখ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন শুরু করেন। এ আখে পোকামাকড় বা রোগ বালাই নেই বললেই চলে। শুধু সামান্য কিছু সার এবং শুষ্ক মৌসুমে কিছু সেচের প্রয়োজন হয়। আগাছা পরিষ্কার ও চাষ পদ্ধতির নিয়মনীতি মানলে এ আখ পরিপক্ক হতে সাধারণত ৮-১০ মাস সময় লাগে এবং উচ্চতাও অনেক বেশি হয়।

তিনি জানান, এ আখ ক্ষেতের পুর্ণাঙ্গ আখের চেয়ে এর চারার বেশ চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি তার আখ গাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার চারা বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করেছেন। আর প্রতিটা আখ ১০০ টাকা করে প্রায় ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। রোকেয়া-নবাব এগ্রো ফার্ম নামে একটি অনলাইন পেজ খোলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চারার অর্ডার পাচ্ছেন। বর্তমানে অর্ডার রয়েছে আরও ১৫ হাজার চারা।

এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলার তালুকদার এগ্রোর পরিচালক সোহেল আহমেদ জানান, আমরা দিনাজপুর থেকে চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলক চাষ করে বেশ সফল হয়েছি। দামও ভালো পাচ্ছি। এটি খেতেও বেশ সুস্বাদু। তাই আগামীতে আরও বেশি জমিতে আবাদ করার চিন্তা করছি।

এদিকে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, ফিলিপাইনের এ ব্ল্যাক সুগার জাতের আখটি এখনও গবেষণা পার্যায় থাকলেও এর ফলনে কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এটি ২০১৮ সাল থেকে নটিফাইট ক্রপ হিসেবে গবেষণা চলছে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এর গবেষণার ডাটা হাতে আসলে এবং ভ্যারাইটি যাচাই-বাছাই শেষে বাণিজ্যিকভাবে যখন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে তখন কৃষকরা অধিক লাভের এ আখ চাষে আরও বেশি আগ্রহ হয়ে উঠবে এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ আখ চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ - মানিকগঞ্জ

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com