বগুড়ার নন্দীগ্রামে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও লাগামহীনভাবে কৃষিজমি ধ্বংসের প্রবণতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোয়ালিটি লাইভস্টক লিমিটেডের বিরুদ্ধে শতবিঘা ধান আবাদি কৃষি জমি ভরাট ও ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণের মাধ্যমে কৌশলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার অভিযোগ করা হয়েছে।
কৃষি জমি সুরক্ষা, ভূমি ব্যবহার আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন না মেনে কৃষি জমি ভরাট করে ইন্ডাস্ট্রি ও শিল্প-কারখানা নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ হলে কমবে ফসলী জমি এবং কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এ ব্যাপারে গত সোমবার (২ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ। কৃষি জমিতে নির্মাণাধীন স্থাপনা সরিয়ে ফেলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে। নন্দীগ্রাম উপজেলা ধান চাষ ও চাল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। উপজেলার খাদ্য ঘাটতি মিটিয়ে এখানকার উৎপাদিত ধান, চাল, সরিষা এবং আলুসহ কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, পৌরসভার ঢাকুইর মোড় সংলগ্ন কাথম-কালিগঞ্জ সড়কের পাশে উপজেলার বাদলাশন মাঠে তিন ফসলী কৃষি জমি পতিত রেখে ভরাট ও নির্মাণকাজ করছে কোয়ালিটি লাইভস্টক লিমিটেড। কৃষি জমির মাঝখানে টাঙানো হয়েছে সাইনবোর্ড। নির্মাণকাজ তদারকি করছেন কাথম কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেডের কর্মকর্তারা।
কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে জমিগুলো ক্রয় করে কৌশলে কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। একারণে উপজেলার খাদ্য শস্য উৎপাদন হুমকির মুখে রয়েছে। কৃষি জমি গিলে খাচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি ও মিল-কারখানা। কোয়ালিটি লাইভস্টক লিমিটেড প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা ঢাকুইর-চাকলমা সড়কের পাশে ইট-বালি রাখে এবং রাতের আধাঁরে কৃষি জমি ভরাটকাজ করছে।
কীভাবে ধান আবাদি কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসসহ সরকারি কোনো দপ্তরের কর্মকর্তারা এই অনিয়মে জড়িত আছেন কিনা! কৃষি জমিতে ইন্ডাস্ট্রি ও মিল-কারখানা স্থাপন-নির্মাণে পরিবেশগত ছাড়পত্র আছে কিনা, তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক আতাউল হক মোহন বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে শ্রেণি পরিবর্তনের পরই জমিগুলো রেজিস্ট্রি হয়েছে। পরিবেশগত ছাড়পত্র এখনো হাতে পাইনি, এক সপ্তাহের মধ্যে পাব। এদিকে বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহথীর বিন মোহাম্মদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোয়ালিটি লাইভস্টক লিমিটেড অবস্থানগত ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছে। তবে অনুমোদন হয়নি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কয়েক বছরপূর্বে বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক সংলগ্ন নন্দীগ্রাম উপজেলার কাথম বেড়াগাড়ি এলাকায় কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে ধান আবাদি কৃষি জমি ক্রয় এবং ভরাট করে কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়েছিলো। শুরু থেকেই ওই কারখানা থেকে ব্যাপক দুর্গদ্ধ ছড়ায়। দুষিত পরিবেশে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। বর্তমানেও দুর্গন্ধের কারণে মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের যাত্রীরা এবং স্থানীয় জনগণ স্বাস্থ্য ঝুকিতে আছেন। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা ওই কারখানার তিনপাশের ধান আবাদি কৃষি জমিতে ফলন কমে গেছে। দুষিত বর্জ্যে আশপাশের জমির কৃষকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে গিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্রমতে, কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে কৃষিজমি সুরক্ষা করার বিষয়টি আইনের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। কোনোভাবেই জমির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। কৃষিজমি নষ্ট করে আবাসন, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কৃষিজমি যে কেউ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারলেও তা আবশ্যিকভাবে শুধু কৃষিকাজেই ব্যবহার করতে হবে।