কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়কে মাটি না থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের। সেতুতে উঠতে এখন আলাদা বাঁশ-কাঠে গড়া সংযোগ সাঁকোই ভরসা। ফলে চলাচলকারীরা এ সেতুর নাম দিয়েছেন ‘অচল সেতু’।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এ উপজেলায় অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা ও কিছু পাকা হলেও অনেক স্থানে রয়েছে ভাঙা। পক্ষান্তরে কিছু কাঁচা রাস্তাও কয়েক দফা বন্যার কারনে ভেঙে গেছে।
রৌমারীর এমন একটি জায়গা কোমড়ভাঙ্গী ভিটাপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধের খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক সেতু। কিন্তু এ সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক এখনও না হওয়ায় চলাচল করতে মারাতœক ভোগান্তিতে রয়েছেন এখানকার মানুষজন।
প্রায় ৭০লাখ টাকারও বেশি অর্থ খরচ করে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও কোন কাজে আসছেনা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ স্কুল-কলেজ,মাদ্রাসাগামী অনেক শিক্ষার্থী।আর এ এলাকায় সড়কের অভাবে সেতুতে উঠতে বাঁশের তেরি মই ব্যবহার করেও চলাচল করছেন অনেকেই। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ এলকাবাসীরা।
সরেজমিনে জানা যায়, রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইনিয়নের কোমড়ভাঙ্গী ভিটাপাড়া, কোমড়ভাঙ্গী জামাইপাড়া, পুরাতনপাড়া, শিবেরডাঙ্গী, পাখিউড়া, কোমড়ভাঙ্গী উত্তরপাড়াসহ ১০ গ্রামের মানুষ কাঁচা রাস্তা হলেও এ রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করেন। এসব মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ৭০ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে কোমড়ভাঙ্গী ভিটাপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধের খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
এ সেতুটির কোনদিকেই সংযোগ নেই। সেতু থেকে দুদিকে অনেক নিচু সড়কের মাটি। পূর্বদিকে সামান্য মাটি ফেলা হলেও পশ্চিমদিকে অনেকেই বাধ্য হয়ে বাঁশের মই দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এ কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলার ১০ গ্রামের ৫০হাজারেরও বেশি মানুষকে। দীর্ঘ দিন থেকে সেতুটি এভাবে সংযোগ সড়ক বিহীন হয়ে থাকায় ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
সেতু পাড়ের শিবেরডাঙ্গী এলাকার কৃষক মনির হোসেন জানান, সেতুর দুইপাশে মাটি না ফেলায় আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমাদের জমির উৎপাদিত ফসল বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছিনা। এত টাকা খরচ করে যদি রাস্তাই না থাকে তাহলে লাভ কী!
পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও ছাত্রী লিমন মিয়া, আসাদুল্লাহ, সুমাইয়া খাতুন, ফাতেমা খাতুন, আলপনা খাতুন ও মাজেদা খাতুন জানায়, আমরা প্রতিদিন সেতুতে উঠে ভয় পাই। তাও বাধ্য হয়ে পশ্চিমদিকে বাঁশের মই বেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে যাই। সব সময় ভয়ে থাকি কখন যে কী হয়। দ্রæত সেতুটির দু’পাশে মাটি ভরাটের দাবি জানায় এসব শিক্ষার্থী।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ ও আব্দুল হামিদ বলেন, সেতুটি নির্মাণ করার কারনে আমাদের যেমন ভালো হয়েছে তেমনি এখন ঝুঁকিও বেড়েছে। একপাশে সামান্য মাটি ও আরেকপাশে কোনো মাটি না ফেলায় কাজে আসছে না সেতুটি। সেতুতে উঠতে হয় বাঁশের মই বেয়ে।আমাদের কৃষিপণ্য প্রায় ৪ কিলোমিটার ঘুরে স্থানীয় হাট-বাজারে নিয়ে যেতে হয়।ফলে আমাদের এতে বাড়তি টাকাও গুনতে হয়।এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুদ্দিন জানান,এখনও সেতুর চুড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি।ঠিকাদারকে বলা হয়েছে,আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটি চলাচলের উপযোগী করা হবে।