সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপির টানা ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শেষ না হতেই আবার একই কর্মসূচির ঘোষণা দিলো দলটি। আগামী রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা আবারও সর্বাত্মক অবরোধ পালন করবে বিএনপি। মাঝে শুক্রবার কর্মসূচি চলাকালে নিহত নেতাকর্মীদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও আহতের সুস্থতা চেয়ে দোয়ার আয়োজন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) বিকেলে শাহজাহানপুর থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান তিনি।
অবরোধের পাশাপাশি শুক্রবার বিশেষ দোয়া কর্মসূচিও ঘোষণা করেন রিজভী। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে চলমান আন্দোলনে মারা যাওয়া নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিএনপির পক্ষ থেকে শুক্রবার দেশজুড়ে মসজিদে মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত করা হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন ২৮ অক্টোবর একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। সেই সমাবেশে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। সাধারণ মানুষের এই গণজোয়ার ক্ষমতাসীনরা সহ্য করতে পারেনি। সে জন্য একটি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেই দিনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশটি পণ্ড করে দেওয়া হয়। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রমাণিত হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াটি সরকারের পূর্ব পরিকল্পিত।
রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ দলের ২৭২ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আহত হয়েছে ৪৮ জন। এক দফার আন্দোলন বিজয়ের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা করছে। আবার কোথাও-কোথাও পুলিশ ও আওয়ামী লীগ যৌথ হামলা করছে। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছে। অনেকে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। তারপরও গণতন্ত্রকামী মানুষ আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দেশে চলমান বিচারহীনতা, অপশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেটবাজির ফলে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৩০ অক্টোবর সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি।
পরে আবার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৩১ অক্টোবর এবং ১ ও ২ নভেম্বর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি ও এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল ও জোট অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা ও সমর্থন করে। তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষ না হতেই আবার একই কর্মসূচির ঘোষণা দিলো বিএনপি।