মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চারনেতার হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই কেবল গুটিকতক অস্ত্রধারীর কাজ নয়, এটি ছিল জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে, দেশকে মুক্তি সংগ্রামের চেতনার বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে স্বাধীনতার শত্রুদের ঘোরতর ষড়যন্ত্রের অংশ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার করা হয় তার ঘনিষ্ঠ চার সহচর, মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ চার সংগঠক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।
৩ নভেম্বর জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় চারনেতা- স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান।
কারাগারের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন এই হত্যাকাণ্ড জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা এবং তাদের হত্যার পেছনে ঘাতক চক্রের উদ্দেশ্য ছিল বাংলার মাটি থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ক্রমাগত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাতীয় চার নেতা। যুদ্ধের পাশপাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুনিপূন কূটনীতি চালিয়ে গিয়েছিলেন তারা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই সহচরদের হাত ধরেই এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়ার কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই চার নেতা। মুজিবনগর সরকারের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা।
পৃথিবীর ইতিহাসে যে কোন যুদ্ধের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে তাদের নেতৃত্বের ওপর। হাইকমান্ডের সামান্য ভুলে পাল্টে যেতে পারে যুদ্ধের গতি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ক্রমাগত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাতীয় চার নেতা। যুদ্ধের পাশপাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুনিপূন কূটনীতি চালিয়ে গিয়েছিলেন তারা। তাদের হাত ধরেই এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
এই চার নেতা একই ভাগ্য বরণ করে মৃত্যুর পথে যাত্রা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর চার নেতাকে একইসঙ্গে কারাবন্দি করা হয় এবং সেবছরই ৩ নভেম্বর জেলখানার ভেতর একইসঙ্গে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আপোস নয়, সমঝোতা নয়, কাপুরুষতা নয়, হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার নজিরবিহীন ইতিহাস তারা বিনির্মাণ করে আদর্শের রাজনীতির এক উজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন বিশ্ব রাজনীতির দরবারে। ক্ষমতার লোভকে দু’হাতে সরিয়ে এবং খুনীদের তীব্র ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে মরণের এই নিশ্চিত আহ্বান ক’জন জানাতে পারেন? বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর অনেক আওয়ামী লীগ নেতার নীরবতা ও আত্মসমর্পণের ঘটনায় যখন সমগ্র জাতি শোকে ও যন্ত্রণায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল, তখন ক্ষমতাকে প্রত্যাখ্যান করে এই জাতীয় চার নেতা ৩ নবেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে প্রমাণ করেছেন কাপুরুষের মতো বাঁচার চেয়ে মৃত্যতেও গৌরব।
আমরা জাতীয় এ চারনেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। জাতীয় চার নেতা বাঙালী জাতির ইতিহাসে এবং বাঙালীর অন্তরের অন্তঃস্থলে চির জাগ্রত, চির অম্লান, চির ভাস্বর।
লেখকঃ জুয়েল হোসেন শ্রাবণ
চেয়ারম্যান,স্মার্ট বাংলা ইন্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
(বন ও পরিবেশ কেন্দ্রীয় উপকমিটি)