ক্রিকেট একটি খেলার নাম। ক্রিকেট খেলা নিয়ে আমাদের তথা সারাবিশ্বে মাতামাতি। অনেক দেশ এই খেলাটি পছন্দ করে না আবার এমন কিছু দেশ আছে যে দেশে এই খেলাটিই এখন আনন্দের খোরাক। তার মধ্যে বাংলাদেশ আমি এক বাক্যে বলতে পারি। আমরা সবাই ক্রিকেট খেলা নিয়ে অনেক মাতামাতি করি কিন্তু এই খেলা কোনদিন থেকে শুরু আর কিভাবে এই খেলার উৎপত্তি সেটা কি আমরা কেউ জানি ? অনেকে হয়তো অনেকটা জানে আবার বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ এই খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাও মনে রাখেন না কিংবা জানেন না। তাই আজ আপনাদের মাঝে আমি ক্রিকেটের উৎপত্তি নিয়ে কিছু আলোচনা করব।
১৭২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রিকেটের ইতিহাস শিরোনামের এই নিবন্ধে মূলত ক্রিকেটের উৎপত্তি থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডে একটি প্রধান ক্রীড়ায় এর উত্তরণ। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ক্রিকেট-বিষয়ক সবচেয়ে পুরনো তথ্যসূত্রটি ঘেটে পাওয়া যায় ১৫৯৮ সালে এই খেলাটির নাম প্রকাশিত হয়েছিল এবং সেটি অনুসারে ১৫৫০ সালের দিকেও ক্রীড়াটি প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু ক্রিকেটের আসল উৎপত্তি এখনও এক রহস্যের ভেতর রয়ে গেছে। তবে মোটামুটি দৃঢ়ভাবেই বলা যায় যে ১৫৫০ সালের আগেও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট, সাসেক্স ও সারি দেশগুলিতে, বিশেষ করে Weald নামের অঞ্চলটিতে, ক্রিকেটের প্রচলন ছিল। ব্যাট-বল-ফিল্ডার দিয়ে খেলা হয়, এমন অন্যান্য ক্রীড়ার থেকে ক্রিকেটের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, এটি খেলার জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট দৈর্ঘ্যে ঘাসবিশিষ্ট মাঠের প্রয়োজন হত, কেন না, ১৭৬০-এর দশকের আগ পর্যন্তও ব্যাটসম্যানকে মাটিতে গড়িয়ে বল করা হত। এ কারণে যে সমস্ত জায়গায় বনাঞ্চল সাফ করা হয়েছিল, কিংবা ভেড়া চরানো হত, সেই সমস্ত জায়গাই ক্রিকেট খেলার জন্য উপযোগী ছিল।
ক্রিকেটের শুরুর দিকের বছরগুলির উপর তথ্যের অভাব দেখে বোঝা যায়, এটি আসলে সম্ভবত ছোট বাচ্চাদের খেলা ছিল। ১৭শ শতকে এসে শ্রমিকেরা এটি খেলা শুরু করে। রাজা ১ম চার্লসের সময় অভিজাত শ্রেণী খেলাটির প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আজও দেখা যায় ক্রিকেট নিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকার জুয়ার আসর বসায় বিশ্বের বড় বড় জুয়ারি গুলো। আসলে এটা সেই প্রথম থেকেই ক্রিকেট খেলার চেয়ে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে জুয়া খেলার সুযোগই তাদের বেশি আকৃষ্ট করেছিল। দিনে দিনে ক্রিকেটে প্রচুর বিনিয়োগ হওয়া শুরু হয় এবং লন্ডন ও দক্ষিণ ইংল্যান্ডে এটি একটি জনপ্রিয় বিনোদনে পরিণত হয়। এসময় বড় বড় ক্লাব ও পেশাদার ক্রিকেট খেলোয়াড়ের আবির্ভাব ঘটে।
এভাবেই চলতে থাকে ক্রিকেটের অগ্রগতি। কিন্তু খেলার নিয়মকানুন নিয়ে নানান সংশয় তৈরী হয়। মাটিতে গড়িয়ে বল দেয়া হলে নানান সমস্যার সৃষ্টি হতো, মাটি কামড়ে বলগুলো অনেক সময় বিরক্তির সৃষ্টি করত। আর এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতেই বোলিং-এ বল ছুঁড়ে মারার নিয়মের উপস্থাপন ও হ্যাম্বলডন ক্লাবের প্রতিষ্ঠা । চাহিদার প্রেক্ষিতে বিনোদনের কথা বিবেচনা করে দিনে দিনে ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর সেকারনেই ১৭২৭ সালে ক্রিকেট লন্ডন ও দক্ষিণ ইংল্যান্ডের একটি প্রধান ক্রীড়া হয়ে আবির্ভাব হয়। ঐ শতাব্দীতে বাজিকরদের আগ্রহের কারণে ক্রীড়াটিতে প্রচুর অর্থলগ্নি করা হয়। ধনী ব্যক্তিদের অনুদানে ও বিনিয়োগে কাউন্টি দল, পেশাদার খেলোয়াড় এবং প্রথম বড় ক্লাবগুলির আবির্ভাব ঘটে। ১৭২৬ সালে লন্ডন ও ডার্টফোর্ড ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাব। কেন্ট, মিডলসেক্স, সারি ও সাসেক্সের কাউন্টি দলগুলি ছিল প্রথম সারির ক্রিকেট দল। আর্টিলারি গ্রাউন্ড, ডার্টফোর্ড ব্রেন্ট, কেনিংটন কমন, মুলজি হার্স্ট এবং রিচমন্ড গ্রিন ছিল তখনকার দিনের সুপরিচিত ক্রিকেট মাঠ।
১৬৯৭ সালের আগে সংবাদপত্রগুলিতে ক্রিকেটের কোন উল্লেখ নেই। কিন্তু ১৭২০-এর দশকের মাঝামাঝি নাগাদ ক্রিকেট-সংক্রান্ত রিপোর্ট বাড়তে থাকে। তবে এই রিপোর্টগুলি বহুদিন যাবৎ পূর্ণাঙ্গ ছিল না। আসল খেলার বিবরণের চেয়ে খেলার সময়সূচি কিংবা খেলার উপর বাজির দর নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনাই ছিল এগুলির মূল বিষয়বস্তু। ক্রিকেট আবিষ্কারকদের সবচেয়ে আসর হতো অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মাঝে। আ্যাশেজ নামের টেস্ট সিরিজ।
আমাদের অনেকের নিকট মনে হয় এইতো সেদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট অঙ্গনে পা রেখেছে। আসলেই কি তাই? ১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এশিয়ার ৩টি দেশ অংশ নেয়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ অনেক দেরিতে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায়।
বাংলাদেশ ১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) সহযোগী সদস্যে পরিণত হয়। পরবর্তীতে রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করে। চার ম্যাচের দু’টিতে তারা হেরে যায় এবং দু’টিতে জয়লাভ করে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয়। এর পর গাজী আশরাফ হোসেন লিপু’র নেতৃত্বে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ১৯৮৬ সালের ৩১শে মার্চ বাংলাদেশ সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে অংশগ্রহণ করে।
আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালের এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে। এটাই ছিল বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। ভয়াবহ বন্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আয়োজক হিসেবে সফলতার পরিচয় দেয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পর বাংলাদেশ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম জয়ের দেখা পায় ১৯৯৮ সালে। দীর্ঘ ২২ খেলায় হারের পর মোঃ রফিকের অসাধারণ নৈপুণ্যে (৭৭ রান ও ৩টি উইকেট) কেনিয়ার বিপক্ষে ভারতে অনুষ্ঠিত খেলায় বাংলাদেশ এই জয়লাভ করে। আতহার আলী খান-মোহাম্মদ রফিক জুটি ১৩৭ রান গড়েছিল। আতহার আলী খান করেন ৪৭ রান। পরবর্তীতে অক্টোবর মাসে আইসিসি নক-আউট ট্রফি আয়োজন করে বাংলাদেশ যেখানে সকল টেস্ট খেলুড়ে দল এই একদিনের আন্তর্জাতিক নক-আউট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার নিয়মিত সদস্য পদ লাভ করে। প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। দলের অসাধারণ ফিল্ডিং এবং খালেদ মাহমুদের ব্যক্তিগত বোলিং (৩/৩১) নৈপুণ্যে বাংলাদেশ ১৯৯৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তানকে ৬২ রানে পরাজিত করে। ম্যাচ সেরা বিবেচিত হন খালেদ মাহমুদ। স্কটল্যান্ড এবং পাকিস্তানকে হারানোর পরও বাংলাদেশ বিশ্বকাপের পরবর্তী রাউন্ডে যেতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই জয় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেস্ট দলের সদস্য হতে সহায়তা করে।
নিজেদের ইতিহাস টানতে টানতে জানতে ইচ্ছে হলো ক্রিকেটের জনক কে, কে প্রথম ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি করেছে। ফুটবলের মতো ক্রিকেটের জনক কে তা নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন মত। তবে বেশিরভাগ মতই বলছে ক্রিকেটের জন্ম হয় ইংল্যান্ডে। কিন্তু বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত থেকে জানা যায় ক্রিকেটের প্রচলনটা শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব অঞ্চলের ‘দোয়াব’ এলাকায়। ৭ম শতাব্দীতে এই এলাকায় ব্যাট এবং বল নামে এক ধরনের খেলা হতো। তাদের মাধ্যমে ৮ম শতাব্দীর আরও কিছু পরের সময়ে খেলাটি পারস্যের দিকে প্রচলিত হতে থাকে। ইউরোপে খেলাটির প্রচলন সম্পর্কে জানা যায়, ১০ম শতাব্দীর আগে প্রাচীন ভারতীয় মরুভূমিতে বসবাসকারী ‘নরম্যাডিক জিপসি’রা তুরস্ক হয়ে ইউরোপে যায় এবং সেখানে দিয়ে তারা তাদের মধ্যে প্রচলিত এই খেলাটি খেলে থাকে। তাদের দেখাদেখিই ইউরোপীয়দের মধ্যে খেলাটির প্রচলন হয়। বল নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের খেলা প্রচলিত ছিল। তবে বলের সাথে ব্যাটের উদ্ভব হয়েছে দক্ষিণ ভারতে। সেখানে ব্যাটকে ‘ডান্ডা’ বলা হতো।
ক্রিকেটের আদি সংস্করণ:
১০৬৬ খ্রীষ্টাব্দে ইংল্যান্ড বিজয়ের পর নরম্যানরা চিত্ত-বিনোদনের জন্য ব্যাট-বলের খেলার ধারণাটি গ্রহণ করে। তাদের হাত ধরেই গোড়াপত্তন হয় ক্রিঘ (creagh)/ ক্রিকে (cricke) নামক খেলার। সে সময় শুধুমাত্র সপ্তাহের রবিবার এই খেলাটি খেলা হতো। খেলাটির ধরন ছিল এরকম – একটি বল একজন ব্যাটসম্যানের দিকে ছুড়ে মারা হতো। ব্যাটসম্যানের ঠিক পেছনেই আজকের স্ট্যাম্পের মতো এক ধরনের কাঠামো থাকতো। ব্যাটসম্যান সেই কাঠামোকে বলের আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য তার হাতে থাকা কাঠের তক্তা দিয়ে বলটিকে বাড়ি মারতো। ব্যাটসম্যানের বাড়ি মারা বলটিকে ধরার জন্য তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকজন ফিল্ডারও থাকতো। ১১৮৩ খ্রীস্টাব্দে জোসেফ অব এক্সেটার নামক লেখকের লেখা থেকে এরকমটিই জানা যায়।
ক্রিকেটের অন্ধকার যুগ:
১৪০০ খ্রিস্টাব্দে এসে শুরু হয়ে যায় রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে এ প্রতিযোগিতা। এ সময় ক্রিকেটের উপর নেমে আসে নিষেধাজ্ঞা। কেননা ক্রিকেট খেলার কারণে যুদ্ধ করার মতো প্রয়োজনীয় সৈনিক পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করেন সে সময়টাতে। যদি কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্রিকেট খেলতো, তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হতো।
আবার ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়া:
১৫০০ খ্রিস্টাব্দের পর ইউরোপে রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা প্রায় বন্ধ হয়। সেই শতকের শেষের দিকে ইতালিয় রেনেসার প্রভাবে ইউরোপের শিল্প-সংস্কৃতির খোলস পাল্টে যেতে শুরু করে। যার ছিটেফোটা খেলাধুলার গায়েও লাগে। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের আগে যেই খেলাটির নাম ছিল ক্রিঘ (creagh) বা ক্রিকে (cricke), সেটিই ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে এসে পরিচিতি লাভ করে ক্রিকেট (crickett or crickette) নামে। আস্তে আস্তে ক্রিকেট খেলার কারণে যে শাস্তির বিধান করা হয়েছিল সেটি উঠে গেছে ধারণা করলেও এক ধরনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞাকে সাথে নিয়েই আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে ক্রিকেট। বিশেষত ধর্মযাজকরা এই খেলাটির ঘোর আপত্তি করতে থাকে। তাদের মতে, ক্রিকেট হলো অলস, অকর্মন্য আর জুয়াড়িদের খেলা। ধর্মযাজকরা এর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থাও করেছিল। কিন্তু কোনো বাঁধাই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ক্রিকেটের চলার পথে।
আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা:
কাউন্টি ম্যাচের মাধ্যমে আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয়। ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও কেন্ট দলের মধ্যকার ম্যাচটির মাধ্যমে। ১৭২১ সালে ভারতবর্ষে আধুনিক ক্রিকেটের প্রচলন হয় ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে। তবে ১৭৪৪ সালের আগে ক্রিকেট পুরোপুরি আধুনিক হয়ে উঠেনি। কেননা সে সময়ও নিয়ম-কানুন মেনে ক্রিকেট খেলা হতো না। ১৭৪৪ সালে আধুনিক ক্রিকেটের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন করা হয় এবং সেই নিয়ম মোতাবেক ক্রিকেট খেলা শুরু হয়।
টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম:
১৮৭৭ সালে এসে টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম হয়। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ১৮৭৭ সালের ১৫ ই মার্চ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও অংশ গ্রহণ করে এই দুটি দল। দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া জয় লাভ করে। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে ‘ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। পরে ১৯৫৬ সালে ‘ইম্পেরিয়াল’ কথাটি পরিবর্তন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল’ শব্দটি যোগ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল’ রাখা হয়। সংক্ষেপে আইসিসি। ১৮৮২-৮৩ সাল থেকে শুরু হয় মর্যাদাপূর্ণ অ্যাশেজ লড়াই। এরপর থেকে অন্যান্য দেশ টেস্ট ক্রিকেটে একে একে পদার্পণ করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮৮৮-৮৯, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯২৮, নিউজিল্যান্ড ১৯২৯-৩০, ভারত ১৯৩২, পাকিস্তান ১৯৫২-৫৩, শ্রীলঙ্কা ১৯৮১-৮২, জিম্বাবুয়ে ১৯৯২ এবং বাংলাদেশ ১৩ নভেম্বর, ২০০০।
ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম:
শুরুর দিকে টেস্ট ম্যাচগুলো অনেক দিন ধরে চলত। কেননা এখনকার মতো নির্দিষ্ট কোনো দিনের হিসাব ছিল না। তখন ম্যাচ দেখার জন্য প্রচুর দর্শক হতো। এই সময়েই টিকিট কেটে খেলা দেখার প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কারণে অনির্দিষ্ট দিন ধরে চলতে থাকা এই খেলা প্রায়ই বন্ধ থাকতো। এই নিয়ে আয়োজক ও দর্শকদের মধ্যে লাগতে থাকে গন্ডগোল। একই সাথে কমতে থাকে ক্রিকেটের দর্শক। ক্রিকেট মাঠে দর্শক ফিরিয়ে আনা ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে রাগনেল হার্ভের উদ্যোগে রথম্যানস কো. ৪০ ওভারের একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। খেলা হতো রোববারে। তাতে খেলতেন কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে চলতি ও প্রাক্তন তারকা খেলোয়াড়দের সম্মিলনে গড়া ইন্টারন্যাশনাল কার্ভেলিয়ার্স। এই ম্যাচগুলো লাইভ প্রোগ্রাম দেখাত বিবিসির ২ নম্বর চ্যানেল। ফলাফল অভূতপূর্ব সাফল্য। যেসব দর্শক তিন দিনের ফলাফলবিহীন অসমাপ্ত ম্যাচ না দেখার জন্য মাঠ ত্যাগ করেছিলেন, তারাই সকাল-বিকালের ম্যাচে জয়-পরাজয় প্রত্যক্ষ করার জন্য নাড়ির টানে মাঠে আসতে শুরু করল।
পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে জিলেট কাপ নামে ৬০ ওভারের এক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ইংল্যান্ডে। এই টুর্নামেন্টই ১৯৮১ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি নামে পরিচিতি লাভ করেন। এর আগে ১৯৬৯ সাল থেকে ৪০ ওভারের একটি টুর্নামেন্ট এর প্রচলন ছিল। খেলা হতো প্রতি রবিবার। টুর্নামেন্টটির নাম ছিল ‘জনপ্লেয়ার স্পেশাল লিগ’। ইংল্যান্ডের দেখাদেখিই টেস্ট খেলুড়ে অন্যান্য দেশগুলোতেও সীমিত ওভারের খেলার প্রচলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের শুরু হয়। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয়ী হয়।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট:
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘আইসিসি’ ক্রিকেট খেলুড়ে সবগুলো দেশ একসাথে নিয়ে নতুন এক টুর্নামেন্টের চিন্তা করে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই ১৯৭৫ সালের ৭ জুন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা ওঠে। প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড এবং সেই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, পূর্ব আফ্রিকা, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে। এতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন ক্লাইভ লয়েড।
ক্রিকেট নিয়ে এতো কথা ভাবা হলো জানা হলো কিন্তু ক্রিকেট খেলায় আউট কত প্রকার ও কি কি সেটা কি আমরা সবাই জানি? আসুন এবার সেই বিষয় নিয়ে একটু চিন্তা করি এবং পড়ি।
ঘুরেফিরে আমরা সাধারণত পাঁচ-ছয় ধরনের আউটই দেখে থাকি—ক্যাচ, বোল্ড, এলবিডব্লু, রান আউট এবং স্টাম্পিং। হিট উইকেটও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তবে ক্রিকেটে খুব বিরল কিছু আউটের নজিরও আছে। তবে কম প্রচলিত বা অপ্রচলিত হলেও হ্যান্ডেল দ্যা বল, টাইম আউট, অবস্ট্রাকটিং দ্যা ফিল্ড এবং হিট দ্য বল টোয়াইস নামে আরও কিছু আউট সহ ক্রিকেট আইনে অন্তর্ভূক্ত মোট আউটের সংখ্যা দশ। তবে রিটায়ার্ড আউট নামে ১১ তম আরেকটি আউটের কথা ক্রিকেট আইনে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষ উল্লেখ পাওয়া যায়।
১) ক্যাচ আউট
২) বোল্ড আউট
৩) রান আউট
৪) এলবিডাব্লিউ
৫) স্ট্যাম্প আউট
৬) হিট উইকেট
৭) হ্যান্ডেল দ্যা বল আউট
৮) টাইম আউট
৯) অবস্ট্রাকটিং দ্যা ফিল্ড আউট
১০) হিট দ্যা বল টোয়াইস আউট
১১) রিটায়ার্ড আউট (১১তম এই আউটটি আইনে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে ব্যবহার হয়।
ক্রিকেট বল
ক্রিকেট খেলাকে ভালবাসি আর ক্রিকেট খেলার বল সম্পর্কে ধারণা নেই এটা কি হয়? যে খেলা ভালবাসি তার আগাগোড়া সবার জানা উচিত। ভালবাসার মানুষটি যেমন সবার নিকট জানা শোনার যেখানে গোপনীয়তা থাকে না। প্রিয় খেলা কিংবা প্রিয় দলটিও ঠিক একই রকম।
ক্রিকেট বল নিয়ে এবার আসুন একটু কথা বলিঃ
ক্রিকেট বল এর আয়তনের ৩ ভাগের ১ ভাগ আকারের একটি কালো বল থাকে। এর ওপর প্রথমে কিছু সুতা প্যাঁচানো থাকে। তার ওপর নরম কিন্তু নমনীয় প্লাস্টিকের একটা আবরন দেওয়া হয়। এই আবরনের ওপর নরম কাপড়ের একটা আবরনের ওপর আবার ও নমনীয় লাল বা সাদা রঙের প্লাস্টিকের আবরন লাগানো হয়। এর পর থাকে মুল চামড়ার আবরন যা সুন্দর ভাবে রাউন্ড করে সেলাই করা থাকে (একে সিম বলে)।
ভেতরের কাপড় ও প্লাস্টিক গুলোর নমনীয়তার ওপর বল এ গুণগত ম্যান নির্ভর করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যেমন kukabura, am, dingdong, adidas, salanzer বল তৈরি করা হয়ে থাকে। এই বলের আন্তর্জাতিক নাম হচ্ছে ক্রিকেট বল। কাঠের বল বলে মূলত কিছু নেই। আমাদের দেশে আর ভারতীয় উপমহাদেশের কিছুদেশেই এই “কাঠের বল” নামটি মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে ভিতরের কালো কাঠের বল টির জন্য।
আমরা কি ক্রিকেট বল এর ওজন কত কিংবা নিদির্ষ্ট যে একটা ওজন আছে সেটা কি জানি?
অবশ্যই ক্রিকেটের নিজস্ব একটা ওজন আছে এবং প্রতিটি বলের একই পরিমান ওজন থাকতে হয়। ক্রিকেট বল এর ওজন কত? এমন প্রশ্ন আমার মনে হয় কেউ চিন্তাও করেন না এবং ভাবনার প্রয়োজনও মনে করে। এজন্য আপনাদের নিকট এমন একটি তথ্য শেয়ার করলাম আজ। প্রতিটি ক্রিকেট বল এর ওজন ১৫৫.৯ গ্রাম থেকে ১৬৩ গ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে।
বল এর ওপরের চামড়ার রঙটা বহুদিন ধরে শুধু লাল রঙেরই ছিল। এরপর যখন দিবা-রাত্রি ক্রিকেট ম্যাচ শুরু হল, তখন থেকেই সাদা রঙের বল ব্যবহারের শুরু। রাতের বেলা ফ্লাড লাইটের আলোয় লাল রঙের বল সহজে দেখা যায় না। আর সেজন্যই লালের বদলে অন্য কোনো রঙ খোঁজা হচ্ছিল। এজন্য হলুদ আর কমলা রঙের বল দিয়ে খেলা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সাদাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন মনের ভেতর যদি জাগ্রত হয় তাহলে যে কত প্রশ্ন জেগে থাকে তা বলে বোঝানো যাবে না। এমন প্রশ্ন হতে পারে প্রথম কোনদিন দিবা-রাত্রির ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল? যতদূর জানা যায়, ১৯৭৯ সলের ২৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম দিবা-রাত্রি ম্যাচ।
আম্পায়াররা অনেক সময়ই খেলা চলতে চলতে বল পরিবর্তন করেন, দেখেছ? কেন করেন? অনেকেই বলবেন কুয়াশায় বল নষ্ট হয়েছে কিংবা অমসৃণ হয়েছে কিংবা বল নরম হয়ে গেছে বড় জোর বল ফেটে গেছে। আসলে বলের সাইজ নষ্ট হয়ে যায় বলে বল পরিবর্তন করা হয়। একটি কথা না বললেই নয় ক্রিকেটের বল কিন্তু পুরোপুরি গোল নয়! এর একদিকের পরিধি ২২৪ মিঃমিঃ আর আরেক দিকের ২২৯ মিঃমিঃ!
আশ্চর্যজনক না ব্যাপারটা সত্য। বলের সাইজের পাশাপাশি আরেকটা ব্যাপার জানা প্রয়োজন সবার। সবদেশে কিন্তু এক টাইপের বল দিয়ে খেলা হয় না। সব একদিনের ম্যাচ হয় অবশ্য কুকাবুরা বল দিয়ে। কিন্তু এই উপমহাদেশে যখন টেস্ট ম্যাচ হয়, তখন খেলা হয় এসজি ক্রিকেট বল দিয়ে। ইংল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ হয় ডিউক ক্রিকেট বল দিয়ে। আবার অস্ট্রেলিয়া, দ.আফ্রিকা কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট ম্যাচ হলে তখন আবার চলে আসে কুকাবুরা বল।
এসজি কিংবা ডিউক বল পেস বোলারদের বেশ উপকার করে। কারণ কুকাবুরা বলের তুলনায় এই বলের সিম (বলের উপরের সুতা) বেশ ভালো হয়। যা কিনা বাতাসে সুইং কিংবা পিচে পড়ে আরও ভালো সুইং করতে পারে। আর বল যত পুরনো হতে থাকে, দেখা যায় ফিল্ডাররা খুব ভালো করে শুধু একদিকেই ঘষতে থাকে। এতে করে বলের একদিক পুরনো হয়, অন্যদিক চকচক করতে থাকে। আর তাতেই ফাস্ট বোলাররা রিভার্স সুইং করতে পারে।
এবার বল নিয়ে অবাক করা একটি গল্প বলতে হয়। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কায় একটা ক্রিকেট বল তৈরি করা হয়। বলটা ছিল হীরার তৈরি! ওজন ৫৩.৮৩ ক্যারেট আর পুরো ১২৫ গ্রাম দিয়ে স্বর্ণের বলের সিম বানানো হয়েছিল। প্রিয় খেলাটা নিয়ে কত মানুষের কত ভাবনা। ক্রিকেট বল নিয়ে অনেক কথাই বলা হলো এবার ক্রিকেট যেখানে খেলা হয় মানে ক্রিকেট মাঠের কিছু নিয়মকানুন আছে সেটাও জানার প্রয়োজন।
এবার আসুন ক্রিকেট ব্যাটের ইতিহাস জেনে নিইঃ
১৬২৪ সালের দিকের ঘটনা তখনকার বোলাররা বল করত আন্ডার আর্ম। এক ব্যটসম্যান তার ক্যাচ ধরা প্রতিহত করতে গিয়ে এক ফিল্ডারের মাথায় আঘাত করে। যার ফলশ্রুতিতে তার মৃত্যু হয়। তখন আসলে কোন নির্ধারিত আইন ছিল না যে ব্যাটসম্যান কি করতে পারবে কি পারবে না। আর তখনকার ব্যাটের আকার ছিল কিছুটা বর্তমান হকি ব্যাটের মত।
১৭৭০ সালের ঘটনা ঐ সময় ব্যাটের আকারে পরিবর্তন আসল যা চওড়ায় ৪.২৫ ইঞ্চি করা হয় যা এখন পর্যন্ত বলবত আছে কিন্তু তখন অপেক্ষাকৃত ভারি ব্যাটে খেলা হত। বোলিং তখন পর্যন্ত আন্ডার আর্মেই করা হত কিন্তু লেন্থ বলিংটা তখন চালু হয়। ১৮০০ শতাব্দীর পর রাউন্ড আর্ম বলিং চালু করা হয় যাতে বলাররা আরো বাউন্সার দিতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে অপেক্ষকৃত হালকা ও চওড়া ব্যাটের প্রবর্তন হয়।
১৮৩০ সাল পর্যন্ত ব্যাট গুলি সাধারনত একক উইলো কাঠের দ্বারা তৈরি হত। কিন্ত ব্যাটের ভাঙার প্রবণতা বাড়াতে এবং বলের গতি ও বাড়ার কারনে ব্যাটে আলাদা ভাবে হাতল সংযুক্ত করা হয়। হাতল গুল সাধারণ উইলো গাছ বা এ্যাস গাছ দ্বারা তৈরি করা হতো।
১৮৩৫ সালে ব্যাটের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৩৮ ইঞ্চিতে যা এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত আছে। ১৮৪০ শতাব্দীর দিকে ব্যাটের হাতলে স্প্রিং এর ব্যবহার শুরু হয়। তখনকার দিনে কচ্ছপের খোলোস ব্যবহার করা হত স্প্রিং হিসেবে কিন্তু পরবর্তীতে ভারতীয় রাবার এর ব্যবহার করা
১৮৫৩ সালে টমাস নিক্সন নার্টিংহামশেয়ারের এক ক্রিকেটার সর্বপ্রথম হাতলে বেতের ব্যবহার শুরু করেন। ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দে ওভার আর্ম বলিং চালু হওয়ার কারনে অপেক্ষাকৃত হালকা ব্যটের প্রয়োজন হয়। তখন ব্যাটের ব্লেডের শেপেও পরিবর্তন আসে। তখন ব্যাটের হাতল বেত ও ইন্ডিয়ান রাবার দ্বারা প্রস্তুত করা হত। ১৮৭০ খৃষ্টাব্দে বর্তমান ব্যাটের যে আকার এই আকারে রূপদান করা হয়।
সাধারণ ক্রিকেট ব্যাট ইংলিশ উইলো কাঠ দ্বারা প্রস্তুত করা হত এবং এতে লিনসিড অয়েল (তিসির তেল) এর প্রলেপ ব্যবহার করা হত। এই তেলের প্রয়গের ফলে এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। বলে যখন আঘাত করা হয় তখন ক্ষতি সাধন কম হয়। ব্যাট গুলির বিপরীত পার্শ্বে ভি শেপ রাখা হয় যার কারনে মোটা উইলো কাঠ দ্বারা যখন ব্যট বানন হয় উল্টা পাশে ভি শেইপ আনার জন্য অতিরিক্ত কাঠ ছেঁচে ফেলা হয়। আর ভি শেইপ আনার উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যটের পাওয়ার বৃদ্ধি করা।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একটা ব্যাট ৪.২৫ ইঞ্চি চওড়া এবং ৩৮ ইঞ্চি লম্বা হয় ব্যটের ওজন নিয়ে কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। কিন্তু সাধারণ ব্যট গুলি ১.২-১.৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। ব্যটের হাতলে রাবারের গ্রীপ ব্যবহার করা হয় যার কারনে এটি ধরার জন্য সুবিধা জনক হয়।
আমরা সবাই জানি আধুনিক নতুন একটি ব্যাট কিনে আনলাম আর কিন্তু সাথে সাথে ম্যাচে খেলার পুরোপুরি উপযোগী হয় না। ব্যাটের পাওয়ার দীর্ঘস্থায়িত্বতা বৃদ্ধির জন্য আগে নক করতে হয়। পুরাতন বল এবং কাঠের হাতুড়ি দ্বারা। এর ফলে নতুন ব্যাট ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা কমে এবং ব্যটের পূর্ণ শক্তি যেন শটে ব্যবহার করা যায়।
১৯০০ সালের দিকে ব্যাটের ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব শুরু হয় তখন কাশ্মীরি উইলো খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। যেগুলি ওজনে ইংল্যান্ডের গুলির কাছা কাছি ছিল। কিন্ত ওগুলি তুলনামূলক কম টেকসই ছিল।
বড় পরিবর্তন আসলো যখন গেরি নিকোল আর জন নিউবেরি তাদের স্কুপ ব্যাট এর প্রবর্তন করলেন। এ ব্যাট গুলির বীপরিত প্বার্শে কিছুটা ফাঁপা ও ডিজাইন করা থাকে।
শচীন টেন্ডুলকার ও ল্যান্স ক্লুজনার অপেক্ষাকৃত ভারি ব্যাট ব্যবহার করতেন। যার ফলশ্রুতিতে ব্যাক ইঞ্জুরির দেখা দেয়। তখন তুলনা মুলক হালকা ব্যাটের দিকে সবাই মনযোগ দেয়। ব্যাটের ওজন নির্ভর করে উইলো কাঠের মধ্যে আদ্রতা কি পরিমান আছে তার উপরে। যত কম আদ্রতা থাকবে ব্যট তত হালকা হবে।
১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ডেনিস লিলি একবার এলুমিনিয়ামের ব্যাট নিয়ে খেলতে নামেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তখন এই ব্যাটের কমপ্লেইন আসে যে বল অতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন ঐ ব্যাট নিষিদ্ধ করা হয়। এর পর থেকে ব্যাট তৈরির কাঁচামাল সবসময় কাঠ ই ছিল।
২০০৫ সালে কোকাবুরা কার্বোন ফাইবারের এক ব্যট তৈরি করে যে ব্যাট দিয়ে সর্বপ্রথম খেলেন রিকি পন্টিং যা বড় বিতর্কের জন্ম দেয়। ঐ ব্যাট দিয়ে পন্টিং তখন বেশী রান পাচ্ছিলেন । এবং বল তুলনামূলক বেশি গতি পেত ঐ ব্যাট দিয়ে মারলে। তৎকালীন সময়ে আইসিসি ঐ ব্যাট ব্যান করে।
ক্রিকেটের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অনেক পরিবর্তন এসেছে ক্রিকেট ব্যাটে অনেক গবেষণা হয়েছে। এখনো চলছে সামনেও চলবে। আমরা হয়ত সামনে আরো পরিবর্তন দেখব কালের বির্বতনে।
আসুন জেনে নেই ক্রিকেট খেলার মাঠ সম্পর্কেঃ
ক্রিকেট মাঠ একটি বিশাল বিশাল বৃত্তাকার অথবা ডিম্বাকার ঘাসবহুল জমিনের উপর নির্মিত হয়। যদিও মাঠের আকারের বেলায় সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবে এটির ব্যাস সাধারণত ৪৫০ ফুট (১৩৭ মি) থেকে ৫০০ ফুট (১৫০ মি) এর মধ্যে হয়ে থাকে। অধিকাংশ মাঠেই দড়ি দিয়ে মাঠের পরিসীমা ঘেরা দেয়া থাকে যা সীমানা নামে পরিচিত।
ক্রিকেট মাঠের পর এবার মাঠের পিচ ষ্ট্যাম্প নিয়ে কিছু কথা। ক্রিকেট খেলার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে থাকে মাঠের মাঝে যা সাধারণত ছোট করে ছাটা ঘাস অথবা ঘাসবিহীন চতুর্ভুজাকৃতির অংশ। এটিকে পিচ বলা হয়। পিচের পরিমাপ হচ্ছে ১০ × ৬৬ ফুট (৩.০৫ × ২০.১২ মি)।
পিচের দুইপ্রান্তে তিনটি করে খাড়া কাঠের দন্ড মাটিতে গাঁথা থাকে, যা স্টাম্প নামে পরিচিত। স্টাম্পের উপরে দুটি কাঠের টুকরা থাকে যা বেইল নামে পরিচিত।, তিনটি স্ট্যাম্পের উপর দুটি বেইল স্ট্যাম্পগুলোকে সংযুক্ত করে। একটি উইকেট তিনটি মাটিতে পোতা স্ট্যাম্পের সমন্বয়ে গঠিত। স্ট্যাম্পের উপরে দুইটি বেইল থাকে।
ক্রিকেটে স্ট্যাম্পে লেগে আউট হওয়ার ক্ষেত্রে যেকোন একটি বেইল ফেলা বাধ্যতামূলক। তিনটি স্ট্যাম্প ও দুটি বেইলের সমষ্টিগত সেট নামে উইকেট নামে পরিচিত। পিচের একপ্রান্তের নাম ব্যাটিং প্রান্ত, যে প্রান্তে ব্যাটসম্যান দাঁড়ায় এবং অপর প্রান্তের নাম বোলিং প্রান্ত যেখান থেকে বোলার দৌড়ে এসে বল করে। দুটি উইকেটের সংযোগকারী রেখার মাধ্যমে মাঠটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়; তার মধ্যে যেদিকে ব্যাটসম্যান ব্যাট ধরেন সেদিকটিকে অফ সাইড এবং যে দিকে ব্যাটসম্যানের পা থাকে সেদিকটিকে বলে অন সাইড। অন্য ভাবে বলা যায় ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের ডান দিক এবং বাম-হাতি ব্যাটসম্যানের বাম দিক হচ্ছে অফ সাইড এবং অন্যটি অন সাইড বা লেগ সাইড। পিচে যে রেখা আঁকা থাকে তাকে বলে ক্রিজ। ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বোলার বৈধ বল করেছেন কি না তা যাচাইয়ের জন্যও ক্রিজ ব্যবহৃত হয়।