জামালপুর জেলা কারাগারে এক রাতেই দুই কারাবন্দীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের একজন ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও অপরজন মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন মেলান্দহের কাংগালকুশা গ্রামের মৃত মেরাজ আলীর ছেলে ইয়াকুব আলী (৫২)। তার বিরুদ্ধে মেলান্দহ থানায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা হয়। অপরজন মাদারগঞ্জের কোয়ালিকান্দি গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিন ফকিরের ছেলে শাহীন হাওলাদার (৫৪)। তার বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জ থানায় একটি এবং জামালপুর সদর থানায় মাদক আইনে ২টি মামলা ছিল।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামালপুর কারাগারের জেলার আবু ফাত্তাহ দুই কারাবন্দির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কারাবন্দী দুজন সোমবার (৬ নভেম্বর) রাতে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এর আগে অসুস্থ অবস্থায় তাদেরকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কারাগার সূত্র জানায়, কারাবন্দী শাহীন হাওলাদার ও ইয়াকুব আলী রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারাগারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাতে তাদেরকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টা ৪৬ মিনিটে শাহীন হাওলাদার মারা যান। ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে মারা যান ইয়াকুব আলী।
শাহীন হাওলাদারের স্ত্রী হালিমা খাতুন বলেন, ‘গত মাসের ২৯ তারিখে আমরা খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছি। এরমধ্যে টিনের গেট খুলে দরজা খুলে রুমের মধ্যে আমার স্বামীকে হাতকড়া পড়িয়ে যখন টান দিচ্ছে পুলিশ, তখন আমরা চেতন পাই। তারা আমাদের ফাঁকি দিয়ে তাকে মির্জা আজম চত্বর পর্যন্ত নিয়ে আসে। পুলিশ বলেছে, টাকা দাও ছেড়ে দেব। এরপর টাকা দিয়েছি তাও ছাড়ে নাই। এক লাখ আশি হাজার টাকা দিয়েছি তারপরও আমার স্বামীকে ৫ গ্রাম হেরোইন আর ১শ ইয়াবা দিয়ে চালান দিয়েছে। রিমান্ড ডাকছিল রিমান্ডও টাকা দিয়ে বাঁচাইছি।
তারপর দুই মাস ধরে তিনি জেলখানায় আছেন। গেল ৬ নভেম্বর জামিন হবার কথা ছিল। এখানে জামিন না হবার কারণে হাইকোর্টের কাগজপত্র রেডি করেছি। পরে আমার স্বামীর সাথে দেখা করি। তিনি বলছিলেন হাইকোর্টে গেলে ৭ দিনের মধ্যে জামিন হয়ে বের হতে পারবো। এরপর জেলখানায় তাকে ৩ হাজার টাকা খরচ দিয়ে গেছি। আর ১ হাজার টাকা দোকান থেকে কেনাকাটা করে দিয়েছি। এরপর আমাদের বলেছে তোমরা চলে যাও আমি এক সপ্তাহের মধ্যে বের হয়ে যাবো। আজ রাত ৩টায় বাড়িতে খবর গেছে আমার স্বামী মারা গেছে।’
জামালপুর জেলা কারাগারের জেলার আবু ফাত্তাহ বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত ইয়াকুব আলীর যাবজ্জীবন সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি। তিনি হার্ট এটাকের কারণে অসুস্থ বোধ করলে কারাগারের ডাক্তারের পরামর্শে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। অপরজন শাহীন হাওলাদার মাদক মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা রয়েছে। তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। রাত আনুমানিক ১২টার সময় তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাকে তাৎক্ষণিক জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ২০১৮ সাল থেকে তিন মাদক মামলায় শাহীন হাওলাদারকে আদালত চলতি বছরের ৩১ আগস্ট কারাগারে প্রেরণ করে।’
মৃত দুজনের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।