মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বরংগাইল সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের বাউণ্ডারির মধ্যে স্থানীয় কতিপয় ব্যবসায়ী ও দলিল লেখক কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত ভবন নির্মাণ করে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) স্থানীয়রা জানান, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের জায়গায় দীর্ঘদিন যাবৎ মো. জরিফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুনিপ কুমার হোড় ও সদস্য আব্দুর রশিদ মিয়া কুটি এণ্টারপ্রাইজ ও মেসার্স হিরু এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। অফিসের জায়গায় ব্যবসায়ীদের দোকানপাট এবং দলিল লেখকদের ব্যক্তিগত অফিস নিয়ে কর্তাব্যক্তির যেন কোন মাথা ব্যথাই নেই। এই দুনিয়ার মানুষ লাভে লোহার বোঝা বহন করে, বিনা লাভে তুলার বোঝাও বহন করে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী, দলিল লেখক, নকলনবীশ জানান- নির্বাচনের মাধ্যমে দলিল লেখক সমিতির কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও যেনতেনভাবে একটি নামসর্বস্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির বাস্তবমুখী কোন কার্যক্রম নেই। তবে তারা সেরেস্তার নামে দলিল লেখকদের কাছ থেকে দলিল প্রতি অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন। সমিতির একটি গোপনীয় সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের পরই দলিল যায় সাব-রেজিস্ট্রারের টেবিলে। ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও কাগজের ত্রুটি থাকলে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে দলিলের প্রকারভেদে আদায় করা হয় লাখ টাকা পর্যন্ত। দলিল লেখকদের নিয়ন্ত্রণ করছেন সাধারণ সম্পাদক সুনিপ কুমার হোড় আর নকলনবীশদের নিয়ন্ত্রণ করছেন তার স্ত্রী অঞ্জনা রানী হোড়। একসময় তাদের সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরালেও এখন তারা গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়। গত বছর সুনিপের স্ত্রী অঞ্জনা রানী হোড় সকলের অজান্তে ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট বাসা কিনতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে ১৩ লক্ষ টাকা খুয়িয়েছেন। কিন্তু এতে যেন তাদের কিছুই হয়নি! এই টাকার উৎস কি?
দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মজিবর রহমান বাবুল জানান, সরকারি অফিসের বাউণ্ডারির মধ্যে ব্যক্তিগত অফিস নির্মাণ করে ব্যবসা করার কারণে সুনিপ কুমার হোড় ও আব্দুর রশিদ মিয়া জেলা রেজিস্টারকে (ডিআর) বাৎসরিক একটা টাকা দিয়ে থাকেন। তবে, এখানে ব্যক্তিগত অফিস বানানোর এখতিয়ার কারো নেই।
দলিল লেখক সমিতির বর্তমান সভাপতি মো.আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি সভাপতি হলেও স্থানীয় প্রভাব না থাকায় সুনিপ হোড়ের ব্যক্তিগত অফিসে তার জায়গা হয়নি। তিনি আরো বলেন, এই টিনসেড ভবনটি ২০১৮-১৯ সালের দিকে তৎকালীন সাবরেজিষ্টার আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও ডিআর সাহেবের মৌখিক অনুমতিতে সমিতির সভাসমাবেশ ও মহিলাদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কয়েকজন সদস্য ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন।
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুনীপ কুমার হোড় জানান, অনেকদিন আগে সাব-রেজিষ্টার খায়রুল আনাম এ ভবন করার জন্য লিখিত অনুমতি দিয়েছিলেন। লিখিত অনুমতির অনুলিপি আপনার কাছে সংরক্ষিত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তার কাছে কোন কপি নেই।
বরংগাইল অফিসের সাব-রেজিষ্টার আশিষ কুমার সরকার বলেন, তিনি এ অফিসে অল্পদিন যাবৎ যোগদান করেছেন। তিনি এবিষয় সম্পর্কে ভাল অবগত নন। তবে জেলা রেজিস্টার যা বলবেন, তাই হবে।
মানিকগঞ্জ জেলা রেজিষ্টার মো. জাহিদ হোসেন জানান, সাব-রেজিষ্টার অফিসের বাউণ্ডারির মধ্যে কোন দোকান বা ব্যক্তিগত অফিস নির্মাণের কোন বিধান নেই। সরকারি জায়গায় এধরনের কোন দোকান বা দলিল লেখকদের ব্যক্তিগত অফিস থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অনতিবিলম্বে তা অপসারণের নোটিশ দেয়া হবে।