ভুলে গেছ কী!—পৃথিবীর দেহে প্রোথিত প্রেমের জলে মানুষের ভ্রূণবীজ
নক্ষত্রের মতো অবাধ অগাধ! শাশ্বত নীরব, তুঁহু অন্তর্জলে—
সত্য তুমি! অথচ কী জানি, তোমার আমার প্রেমে অবোধ হাহাকার!
হতাশার চাদরে ঢাকা আশাহত মন, দৈব ঘটনার ঘটে নিরাশার গহ্বর
একেবারেই চুপচাপ চুপ!
এ কী হৃদয়ে খোদিত খোদার প্রেমবোধ?
বুঝতে চায় মানুষ! এ আকাশ ভরা অন্তর-বিশ্বাসে প্রেমের কী অভিধান?
কী বোধ জ্ঞানে, প্রেমের স্বপ্ন পুঁতে রেখে—শেষ করে পৃথিবীর নিশি-ভোর
মহাবিশ্বের মতো স্ফূর্ত প্রেম, স্ফীত স্থান-কালে—কী অপার অবোধ!
অনন্তর ভেসে যায় যত তারার পুঞ্জ-দলে বোধের অনুভূতি—
তত গহন গভীর! বোধের গভীরে ফুল ফোটে বু্দবুদ্!—নিশার অন্ধকারে
নেবুলা-ভ্রূণ প্রগাঢ় সংগমে! জানে কি প্রেম-পৃথিবী—কীভাবে এল মানুষ?
জানি শূন্যজগৎ, মানুষের তরে—নেবুলাই ভ্রূণ-প্রেমে তারাদের ইতিকথা!
যে ভাবে লিখে জ্ঞানাকর রূপে কবি-কথাকার যত জগতের উপমা—
জ্ঞানের ঘরে চির জাগরুক, প্রেমের প্রেষণা এক পবিত্র প্রেম-বোধ!
কত যে কথা, কত কী উপমা— প্রেমের প্রবল স্রোতে অবলা নিশিভোর—
নীরব প্রেমের ঋণ—না-বলা কথায়, জানবে না কোনোদিন খ-প্রেমের নিশিদিন!
চাঁদের মতো অপলক চোখে চেয়ে থাকে তার প্রেম নিঃসঙ্গ নীরব!
অনন্ত ছায়াপথে দেখি কাল-বোধ, তোমার প্রেমের জলে আমার আধেক রূপ!
যে-রূপ প্রেমে—গ্রহণের কালে চন্দ্র-সূর্য মিলে পৃথিবীতে পড়ে ছায়া—
এ প্রেমের দর্পণে—তোমার আমার উর্ব—ঊষর বুকে দিবা-রাত হয় লেখা!
জানে কি কেউ, কার অন্তরে কী লুকানো আছে, আর কে মনের মানুষ?
সে নিগূঢ় নিশ্চুপ! যতদিন ভবে, না-পাবে আধেক রূপে তার প্রেমের মানুষ—
শূন্য থাকে প্রেমের আসন—অবোধ অবুঝ!—শূন্য প্রেমে হাহাকার!
অথচ সৃজন-স্রোতে প্রেমে বু্দবুদ্—মহাশূন্যের মাঝে ধরা মানব স্বরূপ!
এক সত্য মানুষের প্রেম! ঠিক পৃথিবীর মতো, আগুনে পোড়া ক্ষত—
খোদিত জন্মদাগ পাথরে অক্ষত!—স্তরে স্তরে সঞ্চিত জগতের ইতিহাস
তার ভিতর অন্তঃকোড়ে গুপ্ত অগ্নিজল—তো আগুন আগুন!
তাই দিবানিশি ভিজায় দেহের মাটি অথ আটলান্টিক প্রশান্ত-প্রেমের স্রোত!
যথা সত্য পৃথিবীর প্রেম, ঠিক মানুষের মতো পোড়া মাটির দেহ—
মাটির প্রলেপে ধরা বিগুপ্ত জল—অরি অন্তর্জলে রক্তলাল হৃদয়!
তার ভিতর অন্তর-প্রেমে—জল ভাঙে হুহু হাহা চন্দ্র—দিবাকর—
এক বিস্ময় যতি প্রাণে প্রেমে অতি! তুমি-আমি একদেহে যুগল প্রেমের স্রোত!
দুই জলের ব্যবধানে লুপ!—সুসম সঞ্জননে—সে—লিঙ্গ প্রভেদে—
সঞ্চারি সংগোপন! নর-নারী আধি প্রোথিত প্রেমের জলে মানুষের ভ্রূণবীজ!
তবু কী তুমি, বলবে কি হা-হুঁ—! তোমার আমার বোধে, জ্ঞানের ব্যবধান :
অথই আঁধার খুঁড়ি, ভুল বোঝাবুঝি, দৈব-ঘটনার ঘটে রাখি প্রেমের কফিন
যে কষ্টের কাফনে মোড়ানো অবহেলা অনাদর!—প্রেমের ভাঙা মনে—
নীরব প্রেমের ঋণ! সময়ের স্রোতে তিথি তার ডুবজল—উড়ে যায় প্রাণ-পাখি
পাবে কি সবে মনের মানুষ—সত্য-বিশ্বাসে খাঁটি—ঐ মানুষের প্রেম?
যে প্রেমের হাহাকারে আশার স্বপ্ন পুঁতে রেখে ঘুমহীন—এক পৃথিবী মানুষ!
যে ছোটো ছোটো প্রেম-ভালোবাসা, আদুরে প্রিয় মুখে—হা!—চুঁ-চো রসে বু্দবুদ্—
হা-প্রেমের ব্যঞ্জনা অবাক অবোধ! কত যে তথ্যস্রোতে চুমে গুগুল পৃথিবী
প্লুত সময়ে আসক্ত সবে— হা-হাঁ চমক—চুমু দে ভাইরাল ছবি সে—
বাসনার দেহে নাই বাসন্তী শাড়ি! কী প্রেমের আগুনে ভিজে কামনার দেহ?
উহুঁর বিষে বেজে ওঠে শিস—ইস্ ইস্! ছলনা কী উলঙ্গ খবিস—
ক্যামব্রিয়ান প্রাচীন—হ্যাক-হোক-ইল—তেলাপোকা চেটে খায় এ সময়ের ফসিল!
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ঘিরে কৃত্রিম (এআই) মানুষের লুতুপুতু ঠাট— উঁ!
কথার ট্রিকি-ট্র্যাকে লো—লুটপাট সব মানবিক পাঠ; আর মোবাইল ম্যাসেঞ্জারে
সাড়াক্ষণ হা করে থাকে আ! কী প্রেম, আফসোসে লো চিন্তার অসুখ?
লেফাফা-কথার লোলে লু-প্রেমের ফাঁদ! লোলুপ যৌবনে ঘটে প্রেমের সর্বনাশ
বলি কী আর!—প্রেমের-সত্যে যারা বিশ্বাসহীন, জাগবে না কোনোদিন
সভ্যতার মহিমা ভুলে গেছে যারা, দম্ভ অহমে পোড়ে তারা শান্তির ঘর!
তারা দেখে না শিশুদের মুখে চাঁদের হাসি; আহা! প্রসূতী-মায়ের প্রেমে—
তুঁহু সত্যের ঘর! প্রেমের জঠরে এখন নষ্ট ভ্রূণ!—প্রেমের অসুখ বড়ো!
বাড়ছে তাপ—হুহু হাঁপ-চাপে কাঁপে পৃথিবীর ভূমি! তার জ্বালামুখে বমি—
ভূখা আগুনের ঘোরে মাতাল সময়! ধুলি-মেঘ ফুঁড়ে কাঁপে আদ্য তারার জ্যোতি
তার অক্ষ প্রেমের কী যে হাল! যে প্রেমের হাহাকারে অস্থির মানুষ!
শ্বাস কষ্টে বায়ু, পৃথিবীর জল—ছলছল অবিরল, জলের চোখে নেই জল
বেহাল দূষণ!—বেহাত প্রেমে কাঁদে মাটির পরান!—পৃথিবীর অসুখ!
জানে জগতের প্রাণ! তু প্রেম না পেলে, পৃথিবী কিংবা স্বর্গে থাকবে না মানুষ! তো
অনাদি প্রেমে ঋতু দোল খায়— সিন্ধু জোয়ারে খেলে মাধুরী নিশাকর—
সবুজ ঘাসের বুকে চুমু খায় তারা—ভেসে যায় দিগন্তে সাদা ঘোড়ার স্রোত!
প্রেমের জলে ভ্রূণ-বীজ পুঁতে আধি’র জমিন দেহে—হেসে ওঠে প্রভাকর—
শুনি অনাগত প্রাণে পৃথিবীর গান! নতুনের আশ্বাসে—জেগে উঠি অবিরাম!
তু শান্তিতে বিশ্বাসী যারা, আশার স্বপ্ন পুঁতে ঐ বীজয়ী মানুষ—
সংগুপ্ত প্রেমের অভিসারে তার অনাদি অভিযাত্রা!—আহারে প্রেমের মানুষ!
বুঝে, মানুষ সত্যের রূপ! অভেদ প্রেমের কায়া মহাবিশ্ব রূপ—
তুঁহু প্রেমের সত্যে নীরব নিগূঢ়! যার অন্তর-প্রেমে পড়ে স্বর্গের ছায়া—
সে প্রাণে প্রমা—হাসাহাসি প্রেমে!—মৃত্যুর মাঝে দেখে অমৃত আলোর স্রোত!
প্রেমের হাসিতে প্রিয় পৃথিবীর হাসি!—জগতের ইতিহাস লেখে বিশ্বপ্রেমের-কবি
অভেদ প্রেমে দেখিবে সেদিন, মানবিক-বিশ্বের অবাক বিস্ময়!—
এই বাংলায় কবিদের জাগরণ—সবুজ ঘাসের বুকে রক্তলাল হৃদয়!
লেখক: প্রাকৃতজ কবি শামিমরুমি টিটন