পাকা রাস্তার পাশে স্কেভেটর দিয়ে পুকুর কেটে বড় ট্রলিতে করে মাটি বিক্রি করায় কয়েকদিন আগে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে মাটিকাটা বন্ধ করে দেন এসিল্যান্ড। এরপর ইউএনওর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে ফের পুকুর কেটে ইটভাটাসহ আশপাশে মাটি বিক্রি শুরু হয়।
প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ৮ থেকে ১০টি বড় ট্রলিতে করে সদ্য পাকা করা সড়ক দিয়ে মাটি টানায় একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে রাস্তা অন্যদিকে ধুলোবালিতে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। দ্রুত গতিতে ট্রলি চলাচল করায় ঝুঁকিতে আছেন এলাকাবাসী ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়া থাকায় এবং পুকুর কাটার জন্য ইউএনওর লিখিত অনুমতি থাকায় এলাকাবাসী বারবার বাধা দিয়েও মাটি বিক্রি বন্ধ করাতে পারছেন না। মণিরামপুর উপজেলার বাকোশপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে কিছু দূরে পাকা রাস্তার পশ্চিমপাশে রাশেদ মোড়লের ৩ একর আয়তনের এই পুকুর কাটার কাজ করছেন দেবিদাসপুর গ্রামের আব্দুর রহিম ও বাকোশপোল গ্রামের আবু মুছা।
পুকুর কেটে তাঁরা কাশিমনগরে একটি ইটভাটাসহ আশপাশে এলাকায় ৫০০-৭০০ টাকায় প্রতি ট্রলি মাটি বিক্রি করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে আব্দুর রহিম ও মুছা ঘের কেটে মাটি বিক্রি করছেন। গেল মাসের শেষের দিকে একদিন এসিল্যান্ড আলী হাসান ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ কাজ বন্ধ করে দেন। পরে ইউএনওর অনুমতি নিয়ে আবার তারা মাটি বিক্রি শুরু করে।
বাকোশপোল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান বলেন, গ্রামে একটি মাদরাসা, একটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পুকুর কেটে যে সড়ক দিয়ে তাঁরা ট্রলিতে করে মাটি ভাটায় দিচ্ছে সে সড়ক দিয়ে বহু শিক্ষার্থী নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করে। দ্রুত গতিতে ট্রলি চলাচল করায় ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হচ্ছে।
ইউএনওকে একাধিকবার মৌখিকভাবে জানিয়ে কাজ বন্ধ হয়নি। গতকাল রোববার তাঁর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এখনো একমাস মাটি টানা কাজ চলবে বলে জানতে পেরেছি। দিনরাত ট্রলিতে মাটি নেওয়ায় ধুলোবালিতে এলাকার পরিবেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পুকুর পাড়ের রাস্তাটি দুই মাস আগে পাকা হয়েছে। এভাবে বড় ট্রলিতে করে মাটি টানলে রাস্তা টিকবে না।
এদিকে আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে একটি স্কেভেটরে মাটি কেটে ৩টি ট্রলি ভর্তি করা হচ্ছে। পুকুর পাড়ে বসে কাজ দেখাভাল করছেন আবু মুসা। এসময় সেখানে আব্দুর রহিমকে পাওয়া যায়নি।
পুকুরের মালিক রাশেদ মোড়ল বলেন, পুকুর কাটতে যেয়ে কয়েকদিন আগে এসিল্যান্ড এসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে অনুরোধ করে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। তখন অনুমতি নেওয়া ছিল না। পরে ইউএনওর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি এনে পুকুর কাটা শুরু করেছি।
মাটি কাটার কাজের দায়িত্বে থাকা আবু মুছা বলেন, এই পুকুরে মাছ চাষ হয়। শুকনো মৌসুমে পুকুরে পানি থাকে না। এজন্য পুকুর খনন করা হচ্ছে। আমরা মাটি কেটে পাড় বাধার কাজ করছি। এলাকায় ৬০০ টাকা করে কিছু মাটি বিক্রি করা হয়েছে। ইটভাটায় কয়েক ট্রলি মাটি দিয়েছি। অনেকে আবার টাকা না দিয়ে মাটি নেচ্ছেন।
আবু মুছা বলেন, মাটি কাটার শুরুতে স্থানীয় কয়েকজন ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তাঁদের পিকনিক করতে ২-৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। বাকি টাকা না দেওয়ায় আমাদের মার খেতে হয়েছে। পরে এই নিয়ে মামলাও হয়েছে। টাকা না পেয়ে মূলত ওরা বারবার মাটি কাটা বন্ধ করতে আসছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, জরিমানা করার পর ওরা ইউএনওর কাছে অনুমতি চেয়েছিল। পুকুর থেকে মাটি কেটে পাড় বাধার শর্তে স্যার অনুমতি দিয়েছিলেন। এখন অভিযোগ পড়েছে। আমি আব্দুর রহিমকে অফিসে ডেকেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, পাড় বাধার জন্য মাটি কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মাটি কেটে বিক্রি করা যাবে না। শর্ত ভঙ্গ করলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।