কিশোর কুমার দত্ত, লক্ষ্মীপুর: মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকুরি হয়েছে দরিদ্র বাবার কন্যা বিবি জয়নবের। চাকুরি নামের সোনার হরিণ পাওয়ায় এখন ছোট্টবেলার স্বপ্ন পূরণ হলো তার। এদিকে কোন ধরণের ঘুষ ছাড়াই অভাব অনটনের সংসারে ৪র্থ মেয়ের চাকুরির খবর শুনে অনেকটাই হতবাক হলেন তার শ্রমিক বাবা শাহ আলম। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পাঁচ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা তারা। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষা ২০২৪ এর চুড়ান্ত ফলাফলের পর শনিবার (২৩ মার্চ) রাতে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন বাবা ও মেয়ে। একইভাবে জেলার মোট ৪৪ জনের চাকুরি হয়েছে বলে জানায় পুলিশ সুপার। ফলাফলের পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছেন পরিবারসহ উত্তীর্ণরা সবাই।
জানা যায়, স্ত্রী ডলি আক্তার ও ৫ মেয়েকে নিয়ে অভাব অনটনের সংসার চলছিল ৬৫ বছর বয়সী শ্রমিক শাহ আলমের। জীবনযুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে একটি দূর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পাওয়ার পর এখন বৃদ্ধ বয়সে বেকার তিনি। এমন প্রেক্ষপটে এসে ৪র্থ মেয়ে বিবি জয়নবের সরকারি চাকুরির খবর পেয়ে অনেকটাই আশ্চার্য হন তিনি। চোখের জল টলমলে অবস্থায় অনভূতি প্রকাশ করেন এই বাবা। কোন ধরণের ঘুষ ছাড়াই মেয়ের চাকুরি হওয়ায় সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরবে এখন এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
জয়নব বলেন, ছোট বেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা আমি, আমি মহা খুশি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্যই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমার নিয়োগ হয়েছে, পুলিশ সদস্য হিসেবে সততার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করবো। সকলের কাছে দোয়া ছাই।
একইভাবে চাকুরি হয়েছে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের দক্ষিন মজুপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে ইউছুফ হোসেনের। তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমার চাকুরি হয়েছে, এতে আমি আনন্দিত। ইউচুপ পড়ালেখার পাশাপাশি বড় ভাইয়ের সাথে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন।
সঙ্গে থাকা তার ভাই খুরশিদ আলমও পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। এ সময় খুরশিদ জানান, ৪ ভাই এর মধ্যে ছোট ভাইয়ের ১২০ টাকায় পুলিশে চাকুরি হওয়াতে এখন আমাদের পরিবার মহা খুশি। উত্তির্ণরা সবাই অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ করেন।
জানা যায়, পুলিশে চাকুরি পেতে প্রার্থীদের ভিড় জমে পুলিশ লাইন্সে। সারি সারি লাইনে দাঁড় করিয়ে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী মোট আবেদনকারী ছিল ১৭৪৩ জন। তিন দিনব্যাপী (২০,২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি) চলে মাঠ পরিক্ষা (শারিরিক)। এর পর বাছাইকৃত ৩৮৪ জন অংশ নেন লিখিত পরিক্ষায়। এদের মধ্যে উত্তির্ন হন ১০০ জন। এর মধ্যে ৯৯ জন পরিক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৪০ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী চূড়ান্তভাবে মনোনিত হন। শনিবার (২৩ মার্চ) রাতে পুলিশ লাইন্সের ড্রিল সেডে ফলাফল ঘোষনা করা হয়। এসময় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশীদ বলেন, স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ গঠনে বদ্ধ পরিকর বাংলাদেশ পুলিশ। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া হলো তারই অংশ, নতুন যারা নিয়োগ পেয়েছে সবাই জনসেবায় আত্ম নিয়োগে আগামীর বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।