dailynobobarta logo
আজ সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | কনভার্টার
  1. অন্যান্য
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. গণমাধ্যম
  6. ধর্ম
  7. প্রযুক্তি
  8. বাংলাদেশ
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ নিবন্ধ
  11. লাইফস্টাইল
  12. শিক্ষা
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সারাদেশ
  15. সাহিত্য

আদর্শিক যুব সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজন সুস্থ ক্রীড়া, সংস্কৃতির বিকাশ

প্রতিবেদক
আমিনুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ১:১০ অপরাহ্ন
আদর্শিক যুব সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজন সুস্থ ক্রীড়া, সংস্কৃতির বিকাশ

আমিনুল ইসলাম: পৃথিবীব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এবং পরবর্তীতে অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়ায় পড়ালেখার চেয়ে মোবাইল গেম এবং বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ভিডিওর প্রতি শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।

পড়ালেখার চেয়ে মোবাইলে গেম খেলাকে তারা সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মারাত্মকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রকমের সামাজিক সমস্যা চরমভাবে বিস্তার লাভ করছে‌। পথে ঘাটে, রাস্তার পাশে, দোকানে সর্বত্রই যুব সম্প্রদায়ের আড্ডা দেখা যায়। এভাবে যুব সমাজ দল বেঁধে বিভিন্ন মোবাইল গেমিং এ আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে এবং তাদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করছে। এই নেশার আসক্তির কারণে শিক্ষার্থীরা অ্যাপস ভিত্তিক বিভিন্ন গেম, ইউটিউবে পর্নোগ্রাফি এবং নানারকম ম্যাসেজিং, চ্যাটিং এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন আইসিটি ভিত্তিক অপরাধ এর সাথে জড়িয়ে পড়ছে‌।

এই নেশা এমন একটি নেশা, যার কারণে পাড়ায় মহল্লায় দলবেঁধে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অনৈতিক নানা রকম কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ইভটিজিং এর মতো ভয়ংকর কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে। পাড়ায় মহল্লায় গড়ে উঠছে কিশোরগ্যাং কালচার ।এই কিশোরগগ্যাং এর সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং পাড়া মহল্লার বড় ভাইয়েরা। তাদের ব্যবহার করে ছিনতাই, মহল্লার আধিপত্য দখলে রাখা, ব্যবসা বাণিজ্য ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা, রাজনৈতিক দলের মিটিং মিছিল নিয়ন্ত্রণ করা সহ বিভিন্ন কাজে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

একটি আদর্শিক সমাজ গঠন ও যুব সমাজকে সঠিক পথে আনতে প্রয়োজন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।তাদেরকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ক্লাবগুলোকে সক্রিয় করা ও ‌তাদেরকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি আকৃষ্ট করা।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন ক্লাব এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোকে সক্রিয় করে সুস্থ ধারার ক্রীড়া, সংস্কৃতি আবহ সৃষ্টি করতে পারলে কিশোরগ্যাং কালচার, মোবাইল কালচার এবং ইভটিজিংয়ের সাথে যারা দলবেঁধে যুক্ত তাদেরকেও সঠিক পথে আনা সম্ভব হবে।

একটি জাতি গঠনের অন্যতম পূর্ব শর্ত হচ্ছে একটি আদর্শিক এবং শিক্ষিত জ্ঞানী যুবসমাজ। আর শিক্ষিত, জ্ঞানী ও আদর্শিক যুবসমাজ গঠনের পূর্ব শর্তই হলো ক্রীড়া, সংস্কৃতি কর্মকাণ্ডের বিকাশ ও বিস্তার লাভ করাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পাঠাগার ভিত্তিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে যুব সমাজকে নিয়ে পাঠাবার গড়ে তোলার বিভিন্ন ফলপ্রসুখ কার্যক্রম গ্রহণ করা।

মোবাইল আসক্তির কারণে লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে নানাভাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ২৮ শতাংশ তরুণ তরুণী দিনে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা মোবাইল গেম ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদির সাথে সংযুক্ত হয়ে সময় পার করছে। ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বা ছাত্রছাত্রীরা দিনে কমপক্ষে ৪ ঘন্টা মোবাইল নিয়ে সময় অতিবাহিত করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবারে পরিণত হওয়ায় ছাত্র, যুবকরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এতে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গ্রামগঞ্জের ছেলে-মেয়েদের মাঝে এখন টিক টক, লাইকি , ভাইবার ইমো ব্যবহারকারি সংখ্যা বাড়ছে। টিকটক করে মানসিকভাবে বিকৃত হয়ে অনেকে আত্মহত্যা এবং অপরকে খুন করার মত মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে।

শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে একজন মানুষের প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী, যুবক-যুবতী, এমনকি চাকরিজীবী বয়স্করাও রাত্রি জাগরণ করে দীর্ঘ সময় ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটিয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

মোবাইল ফোনের সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের শিশু থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আকৃষ্ট হয়ে তাদের মূল্য জীবন নষ্ট করছে । অনলাইন ভিত্তিক পাবজি গেম এর মত অনেক গেম খেলে পরিবারের অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে। অনেক শিক্ষার্থী তাদের পিতা-মাতার নিকট থেকে লেখাপড়ার জন্য গৃহীত অর্থ দিয়ে লেখাপড়ার কাজে ব্যয় না করে পাবজি গেম এবং অনলাইন ভিত্তিক ক্যাসিনো গেমের সাথে যুক্ত হয়ে শিক্ষা জীবন ধ্বংস করছে এবং পরিবারের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনছে।

যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বাধুনিক এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি হচ্ছে মোবাইল ফোন। এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে এর চেয়ে সহজ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সৃষ্টি হয়নি। এজন্যই এই পন্থা থেকে কাউকে বিরত রাখাও সম্ভব হয় না। যুব, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশের আপামর যুব সমাজকে বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করে এবং বই পাঠাভ্যাস সাথে যুক্ত করার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে এই মোবাইল আসক্তির কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং দেশের যুবসমাজ সঠিক ধারায় পরিচালিত হবে।

লেখক: আমিনুল ইসলাম,
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ - মানিকগঞ্জ

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com