মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা অধিদফতরের অধীনে চলমান কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের অধীনে সারাদেশে এরইমধ্যে ৪ হাজার ৮৮৩ টি কিশোর কিশোরী ক্লাব গঠন করা হয়েছে। দক্ষ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০ জন কিশোর কিশোরীকে।
আত্মরক্ষার্থে তাদের ক্যারাটে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তারা প্রশিক্ষণ পেয়েছে বল্য বিবাহ প্রতিরোধ, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ, জেন্ডার ভায়োলেন্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ, আবৃতি ও সংগীত বিষয়ে। এই প্রকল্পের কাজ পুরোদমেই এগিয়ে চলছিল। তবে প্রকল্পের মেয়াদ আর কয়েক মাস বাকি থাকতে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হওয়ায় কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, উপ প্রকল্প পরিচালকের (ডিপিপি) চেয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ব্যাচ ভিত্তিতে জুনিয়র হওয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে প্রকল্পের কাজও অনেকটা থমকে গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বছরের শুরুর দিকে এই প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক ইকবাল হোসেন। তিনি প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি এই প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) মো. লিয়াকত আলীকে প্রকল্পের পরিচালক হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিপিডি প্রকল্পের প্রায় শুরু থেকেই এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন। ফলে প্রকল্পের সব কার্যক্রমও তার নখদর্পনে। তবে গত ৩ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. আলমগীরকে কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক করা হয়। প্রসঙ্গত, লিয়াকত আলী ২১ তম বিসিএসের কর্মকর্তা। আর আলমগীর ২২ তম বিসিএসের। সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিপিডি লিয়াকত আলীর চেয়ে পিডি মো. আলমগীর জুনিয়র। এর ফলে প্রকল্পে এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ডিপিডি ও অন্যান্য কর্মকর্তারা। প্রকল্পের ডিডিপি মো. লিয়াকত আলী বলেন, আমি ২১ তম ব্যাচের কর্মকর্তা। অথচ পিডি ২২ তম ব্যাচের। সিনিয়র জুনিয়রে জটিলতা তৈরি হওয়ায় কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিষয়টি জানিয়েছি।
জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা অধিদফতরের অধীনে চলমান এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে। প্রথম ধাপে ২০২১ সালে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। তবে পরে সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৮ বিভাগের ৬৪ জেলার ৪ হাজার ৫৫৩ টি ইউনিয়ন ও ৩৩০ টি পৌরসভায় ৪ হাজার ৮৮৩ টি ক্লাব গঠনের লক্ষ্য ছিলো। জানা গেছে, এরইমধ্যে সারাদেশে ৪ হাজার ৮৮৩ টি কিশোর কিশোরী ক্লাব গঠন করা হয়েছে।
এসব ক্লাবের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কিশোর কিশোরীদের যুক্ত করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ, মাদকাসক্তি ও সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে ক্লাবের সদস্যদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০ জন কিশোর কিশোরীদের জীবন দক্ষতামূলক বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বল্য বিবাহ প্রতিরোধ, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ, জেন্ডার ভায়োলেন্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ, আবৃতি ও সংগীত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০ জন কিশোর কিশোরীকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, ফলে এসব কিশোর কিশোরীরা আত্মরক্ষায় পারদর্শী হয়েছে।
পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমস্যা বিষেয় সচেতনকরণ এবং নৈতিক চর্চার মাধ্যমে কিশোর কিশোরীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং কমিউনিটি পর্যায়ে তা বাস্তবায়নে কিশোরীদের স্থানীয় পর্যায়ে সোস্যাল চেঞ্জ মেকার হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যও রয়েছে। প্রকল্পের প্রায় সব কাজই এগিয়ে চলছিলো। তবে শেষ সময়ে এসে ডিপিপির চেয়ে ব্যাচ ভিত্তিতে জুনিয়র কর্মকর্তাকে পিডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়ায় প্রকল্পের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে বিভিন্ন কার্যক্রমেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।