মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ পেয়েছেন এক মৃত ব্যক্তি এবং ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামী। এনিয়ে জেলা জুড়ে চলছে নানা আলোচনা–সমালোচনার ঝড়। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ।
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পর গত ৩০ জুলাই উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন এবং সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। ১১৪ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে সম্পাদকীয় পদে আছেন ৩৬ জন, সদস্য পদে ৩৫ জন এবং উপদেষ্টা পদে আছেন ৪৩ জন।
পূর্ণাঙ্গ এ কমিটিতে উপদেষ্টা পদে (২৮ নম্বর সদস্য) বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহারুল ইসলাম সিদ্দিকীর নাম রয়েছে। কমিটি অনুমোদনের প্রায় এক মাস আগে তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাতিজা এনায়েত উল্লাহ। তিনি জানান বছরের গত ২৮ জুন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর চাচা মারা যান উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ভুলবশত তাঁর চাচার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০২২ সালের ৭ জুন দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে পুনরায় দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আজিজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবদুল কুদ্দুসের নাম ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে কমিটিতে আলমগীর হোসেন ওরফে ভিপি আলমগীরকে ১১ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। তিনি ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার সমেতপুর গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, আলমগীর হোসেন বিয়ের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এক নারীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। বিয়ের নামে প্রতারণা করে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। মৃত ব্যক্তি এবং সাজ্জাপ্রাপ্ত আসামীর নাম কমিটিতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তৃণমূলের একাধিক নেতাঁর ভাষ্য, ত্যাগী অনেক নেতাকর্মী রয়েছে যাদেরকে কোন পদ-পদবী দেওয়া হয়নি। যারা আ’লীগের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে রাজ পথে ছিল। কিমিটির বিষয়ে নেতারা বলেন- কমিটি ঘোষণা অথবা অনুমোদনের আগে নেতারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি। কমিটিতে মৃত ব্যক্তি এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত করা গাফিলতি এবং উদাসীনতা প্রমাণ করে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আদালতের দেওয়া সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামি দলীয় পদে থাকার সুযোগ নেই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস বলেন, প্রায় চার মাস আগে প্রস্তাবিত উপজেলা কমিটির কাগজ জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু তখন আজাহারুল ইসলাম মারা যাননি এবং আলমগীর হোসেনেরও সাজার রায় হয়নি। উপজেলা কমিটি অনুমোদনের আগে জেলা কমিটিকে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন ছিল।
কমিটিতে মৃত ব্যক্তি এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি অবগত নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’