dailynobobarta logo
আজ সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০২৩ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | কনভার্টার
  1. অন্যান্য
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. গণমাধ্যম
  6. ধর্ম
  7. প্রযুক্তি
  8. বাংলাদেশ
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ নিবন্ধ
  11. লাইফস্টাইল
  12. শিক্ষা
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সারাদেশ
  15. সাহিত্য

লোককবির লোকগানে জাগ্রত বঙ্গবন্ধু

প্রতিবেদক
মোঃ ইসলাম মোল্লা
সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০২৩ | ৩:৩২ অপরাহ্ণ
লোককবির লোকগানে জাগ্রত বঙ্গবন্ধু

স্বাধীন বাংলাদেশরে অভ্যুদয়ের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু একটি অনিবার্য নাম। বাঙালি জাতীয়তাবাদের অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অধিষ্ঠিত, ইতিহাসের প্রাণপুরুষ, বাঙালি জাতির গৌরব-অহংকার, পথপ্রদর্শক ইতিহাসের রাখাল রাজা মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, চেতনা ও মুক্তির প্রতীক শেখ মুজিবুর রহমান।

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, বাবার মুখে শুনে শুনে, ইতিহাস পড়ে কিংবা গান ও কবিতায় যে নামটি আমার হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে তিনিই বঙ্গবন্ধু। সত্যি, জাতির পিতাকে নিয়ে গবেষণা বা লেখালেখির অন্ত নেই। আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থপঞ্জিতে বলেন- ‘‘বর্তমানে প্রায় ৬০০টি বই বাজারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশ থেকে প্রায় ৪০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর উপর প্রায় ৪-৫ হাজার প্রবন্ধ-নিবন্ধ দৈনিক সাময়িকী ও সঙকলন বের হয়েছে। আর ১৯৯৮ এ বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু চর্চা শিরোনামে কেবল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রণীত গ্রন্থপঞ্জিতে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১০০০টি। ’’(আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, ২০১৪: ১৬)

লোকসংস্কৃতির লোকগান, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু যেভাবে প্রভাবিত হয়েছেন তা দেশপ্রেম ও চেতনারই বহি:প্রকাশ। স্বাধীনতার শর্তে সবার সম্মিলিত প্রয়াস একটি স্বাধীন জাতির মানদন্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা বিশেষ করে অনার্য শ্রেণিকে বেশি প্রভাবিত করেছে লোক কবির লোকগীতি। আব্দুল ওহাব বলেন- ‘‘বাংলার সমাজ সংস্কৃতি জাতীয়তা তার দৈনন্দিন সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাক্সক্ষা, ধর্ম, বিশ্বাস, জয়-পরাজয় সফলতা, ব্যর্থতা পার্থিব-অপার্থিব মতাদর্শ জীবন জগতের ভাবনার ইতিবাচকতা, প্রেরণা- আকুতির সার্বিক পরিচয় মেলে লোকগীতিতে।’’

এজন্য ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেন- ‘‘বাংলাদেশকে জানিতে হইলে গানের মধ্য দিয়ে ইহাকে জানা যত সহজ, অন্যকোন বিষয়ের মধ্য দিয়া জানা তাহা তত সহজ নহে। প্রাচীনতম কাল হইতে আরম্ভ করিয়া আধুনিকতম কাল পর্যন্ত বাঙালির ধ্যান ধারণা সামাজিক আচার-আচরণ, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী জীবনের সুখ-দুঃখের অনুভুতি সবই সঙ্গীত সাধনায় যে বৈচিত্র্য পাইয়াছে তাহার সঙ্গে পরিচয় স্থাপন করিতে না পারিলে বাঙালির চরিত্র এবং তাহার জাতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যাইবে না।’’(আব্দুল ওহাব, ২০০৭: ২৮২)

১.
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সনের ১৭ মার্চ রাত্রি আটটায় মাগরিবের পর গোপালগঞ্জ জেলার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জানা যায়, বাগদাদ শহরের হাসানপুর গ্রাম থেকে হযরত বায়োজিদ বোস্তামী (রাঃ) ইসলাম প্রচার করতে চট্টগ্রামে আসেন। তাঁর শিষ্য শেখ আলাউদ্দিন ১৪৬৩ সনে বাংলায় আগমন করেন। শেখ আলাওল সোনারগাঁয়ে বিবাহ করেন। তার ছেলে শেখ জহির উদ্দিন। শেখ জহিরুদ্দিনের ছেলের নাম মাহমুদ তেকরী শেখ। তেকরী শেখের ছেলে শেখ বোরহান উদ্দিন যিনি ব্যবসা বাণিজ্য করতেন। ব্যবসার সুবাদে টাকা আদায়ের লক্ষ্যে সারা দেশে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। এ সুবাদে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কাজী বাড়ির মেয়ে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

শেখ বোরহান উদ্দিনের তিন ছেলে (১) শেখ আকরাম, (২) তাজ মাহমুদ, (৩) শেখ কুদরত উল্লাহ। শেখ আকরামের পুত্র শেখ আব্দুল হামিদ। আব্দুল হামিদের পুত্র শেখ লুৎফর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা হলেন শেখ লুৎফর রহমান, মাতা- সাহেরা খাতুন। শিশু থেকে শেখ মুজিব ছিলেন হ্যাংলা ভারী ও ছিপছিপে লম্বা। খাওয়া-দাওয়ার প্রতি খুব একটা ঝোক ছিলনা, ছিলেন স্বল্পভোজী। কাকচি মাছের চরচরি আর মাগুর মাছের ঝোল তাঁর প্রিয় ছিল। নিরামিষ খাদ্য ভালবাসতেন তিনি, ভালবাসতেন দেশি ফলমূল। তাঁর পছন্দের ফুল ছিল গোলাপ।

চারবোন ও দুই ভাই। পিতার সংসারে ভাইবোন মিলে প্রতিদিন কোরান তেলাওয়াতের রেওয়াজ ছিল। নয়-দশ বছরে পিতা তাঁর জন্য পন্ডিত সাখাওয়াতুল্লাহকে গৃহশিক্ষক রেখে দেন। গিমাডাঙ্গা প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষা শেষে গোপালগঞ্জ মিশন প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হন। বাবার চাকুরীর সুবাদে ১৯৩১ সনে ইসলামিয়া হাই স্কুলে ভর্তি হন। এ সময় তার বেরিবেরি রোগে চোখে সমস্যা হয়। চিকিৎসার লক্ষ্যে কলকাতা মেডিক্যোল কলেজে যান এবং চক্ষু বিশারদ ডাক্তার টি. আহমেদ এর পরামর্শ নেন। চক্ষু ভাল হয়। চশমা ব্যবহারের পরার্শ দেন ডাক্তার।

১৯৪০ সনে যখন তিনি ৯ম শ্রেণির ছাত্র- তখন মিশন স্কুল পরিদর্শনে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এবং খাদ্যমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী। জরাজীর্ণ স্কুল মেরামতের জন্য দাবি আদায় করে বাঘের নাতী হিসেবে পরিচিত হন। ১৯৪২ সনে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৪ সনে আই এ পাশ করেন, ১৯৪৬ সনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৪৭ সনে দেশ বিভাগের সময় তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। এরপর তিনি ১৯৪৮ সনে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা, ১৯৪৯ সনে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১৯৫৩ সনে সাধারণ সম্পাদকের পদ পেলেন। ১৯৫৪ সনের যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সম্পাদক পদ পেয়ে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী সভার মন্ত্রী হন। এরপর ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সনের গণঅভ্যুত্থান হলো, ১৯৭০ সনের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেন। ৩রা মার্চের অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি গর্জে ওঠে স্বাধীনতার সাধনায়। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ইয়াহিয়া ২৫ মার্চের মধ্য রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর হাত্যাকান্ড চালায়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা; ১৯৭১ সরে ১০ এপ্রিলে অস্থায়ী সরকার গঠন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় পতাকা উড়লো। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের জেল হতে মুক্তিলাভ, ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। পরিশেষে, দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ। কিন্তু দেশীয় ষড়যন্ত্রের চক্রান্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ পরিবারের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বাদে অন্য সবাই রেহাই পায়নি মরণ অস্ত্র হতে। দশ বছরের নিষ্পাপ শিশু রাসেল কেদেও রক্ষা পায়নি বুলেটের আঘাত হতে।

লোকগানে সুর, তাল, লয়ে আপন মনের গোপন কথাটি যেভাবে ফুটে উঠেছে তেমনি অধিকার বঞ্চিত, নিষ্পেষিত জনমনে দেশপ্রেম জাগ্রত করেছে মুক্তির বাসনায়। অন্যদিকে প্রতিবাদমূখর হয়েছে ধিক্কার, ঘৃণা প্রকাশেও গানের বাণীতে জাতির জাতীয়তার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মুক্তির মানসিকতায়। জারি, সারি, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, আলকাপ, গম্ভীরা, মুর্শিদা, ভাষারগান, দেশের গান, স্বরাজের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, ধুয়াগান, বাউলগান ইত্যাদি লোকগানের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পথে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথা ষ্পস্ট হয়েছে। লোককবির এসব গানে আবহমান গ্রাম বাংলার সমাজ, সভ্যতা, ইতিহাসের পরিচয় মেলে।

২.
১৯৪৭ সনে দেশ বিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানে নানাভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে নির্যাতন ও নিপীড়ন করতে থাকে। লোককবিরা তাদের গানের মাধ্যমে তখনকার নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন। ১৯৫২’র সময় পূর্ব বাংলার মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাইলে ঢাকার রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠে। তখন আলকাফ গানে লোককবি বলেন,

‘‘ আইয়ুব খানের মার্শাল ল
ইবলিশ বরাবর
’ ৫২-র ভাষা আন্দোলন
জিন্নাহর গায়ে জ¦র।’’
[রঞ্জনা বিশ্বাস, (সংকলন ও সম্পাদক), ২০২১: ১৫]

মানিকগঞ্জের বাউল কবি আব্দুর রহমান বাউল তাঁর একটি গানে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির কথা :
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি
আমরা তোমার স্মরণে আজ- ২
এই দেশের নগরী \
উনিশ শো বায়ান্ন সনে
পরিচয় তোমার সনে
সেই হতে চিরদিনে- ২
স্মরণে তোমারি\

মিটাইতে মনের আশা
তাই তোমার এ ভালোবাস
সে আমাদের মাতৃভাষা- ২
সকল জন তারই \

শহিদ রফিক, বরকত সালাম
লওহো মোদের লাল সালাম
তোমাদের কারণে দিলাম- ২
পূষ্পাঞ্জলি করি \

সেদিনের যারা শহীদান
তারাও বাঙালির সন্তান
ভাবছে তাই বাউল রহমান- ২
অবদান তাদেরই \
[কবির ভাবশিষ্য আব্দুল আলিমের কাছ থেকে প্রাপ্ত বাউল আঃ রহমান এর পান্ডলিপি থেকে]

১৯৫৪ সনের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের একজন প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় গোপালগঞ্জের জনসভায় লোককবি রোকন উদ্দিনের গান পরিবেশন করেন লোকশিল্পী চানমিয়া। এ বছরে ১৮ মার্চ তিনি ভোটে জয়লাভ করলেন। এ সম্পর্কে চারণকবি রোকনউদ্দিনের গান:

‘‘ ওরে তোরা আয় আজ খুশিতে
দেখবি নুতন চাঁদ আজ উদয় হইয়াছে
ঐ শুক্লপক্ষের চান শেখ মুজিবুর রহমান
মাটি মায়ের বাঙালি সন্তান।
ও আজ বঙ্গভালে উদয় হলোরে…।
বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার সদস্য হলে মাস্টার শাহ্ আলম এ সম্পর্কে তাঁর গানে বলেন :
‘ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের
প্রার্থী তিনি প্রাদেশিক পরিষদের।
নির্বাচিত হইলেন সদস্য একজন।
লাভ করিলে মন্ত্রিসভার মন্ত্রিত্ব তখন \

১৯৫৮ এর সামরিক শাসনজারি, ১৯৬৬ সনের ছয়দফা কর্মসূচি, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের পথ বেগমান হয়। বিশাল গণসংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধীতে ভূষিত করা হয়। যা লোককবি উপস্থাপন করেছেন এভাবে-
‘‘১৯৬৯ সনের ২৩ ফেব্রুয়ারি।
ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ আয়োজন করি \
সংবর্ধনা দেয় তাকে সেই সংর্বধনায়।
বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করায় \’
(সাইমন জাকারিয়া, ২০২০: ৭৭)

১৯৭০ এর নির্বাচন প্রসঙ্গে ময়মনসিংহের লোককবি আব্দুল হাই মাশরেফী (১৯০৯-১৯৮৮) জারিগান রচনা করেন-
‘‘ভোটাধিকার দিতে হবে বঙ্গবন্ধুর পণ
কেল্লাফতের খানে তখন দিল নির্বাচন
তারপরেতে দ্যাশে আইল নির্বাচনের হোলি
রাজনৈতিক দল সকলে লাগল ঠেলাঠেলি
হায় হায় লাগল ঠেলাঠেলি \
(রঞ্জনা বিশ^াস ২০২১: ২২/২৩)

নরসিংদী জেলার লোককবি আজিজুল হক (১৯৪৬) বর্ণনা করেন-
‘‘রোষানল দেখিয়া পরে পাকিস্তানি যারা
উনসত্তরের গণজোয়ারে ভেসে গেল তারা।
সত্তরে শেখ মুজিব আনল নির্বাচন
নির্বাচনে হেরে গিয়ে করিল বেইমানিরে
ওরে দারুন পাকিস্তান \
(মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান ২০১২: ৩৮)

নির্বাচনে জিতলেও ষড়যন্ত্র করে ভুট্ট ঘোষণা দেয় তার দল সমর্থন ছাড়া কোন সংবিধান প্রণয়ন বা সরকার গঠণ করা যাবে না। ’৭১ এর ১৭ জানুয়ারি ইয়াহিয়া খান, জেনারেল হামিদ, পীরজাদা ও ভুট্টো গোপন বৈঠক করে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরীর পরিকল্পনা করে। ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু দুপুরে ঘোষণা দেন- ষড়যন্ত্রকারীদের সুবুদ্ধি ফিরে না এলে ইতিহাস তার আপন গতিতে চলবে। তিনি ঘোষণা দেন ২ মার্চ ঢাকায় ৩ মার্চ সারাদেশে হরতাল পালিত হবে। ৭ মার্চ রেসকোর্সে ময়দানে দশ লাখের অধিক লোকের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ লোককবিরা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে গানে গানে দর্শক শ্রোতার মনে আন্দোলিত করেছেন। নেত্রকোনা জেলার আব্দুল হেলিম বয়াতী (১৯৪৩ ) তাঁর পুঁথিতে ৭ মার্চের ভাষণকে বাঙালির স্বাধীনতার দিক নির্দেশনা বলে উল্লেখ করেছেন-

‘‘১৯৭১- এর ৭ই মার্চের শোনেন ঘটনা
শুনিলে হৃদয় বিদরে করিতেছি বর্ণনা/
এহিয়া ক্ষমতা নিয়া করে তালবাহানা
সেই কারণে কী হইল শুনেন ঘটনা/
শেখ মুজিবুর রেসকোর্স ময়দানে করিলেন বর্ণনা
বিশাল সমুদ্রে দেন নির্দেশনা/
(রঞ্জনা বিশ্বাস, ২০২১ : ১৪১)

লোককবি শাহ আলম মাস্টার ৭ মার্চ নিয়ে পুঁথিতে বলেন :
‘‘৭ই মার্চের ভাষণ দিলে শেখ মুজিব
জেগে উঠো বাংলাভাষী যত নরনারী/
বজ্রকন্ঠে দিলেন তিনি স্বাধীনতার ডাক
সেই ডাকে পশ্চিমারা লইল চিলপাক।
(রঞ্জনা বিশ^াস : ২০২১ : ২৪)

লোককবি মিজানুর রহমান ৭ মার্চকে বাংলার ভাগ্যের পরিণাম বলেছেন :
সাতই মার্চের ভাষণ বাংলার স্বাধীনতার নাম
ঐতিহাসিক ভাষণ বাংলার ভাগ্যের পরিনাম।
…….
স্বাধীনতার স্বপ্ন চোখে করে আনাগোনা
ঐতিহাসিক ভাষণে হয় স্বাধীনতার বীজ বোনা/
(সাইমন জাকারিয়া ২০২০: ৮৮)

লোককবি আব্দুল হাই মাশরেকি ৭ মার্চের ভাষণের ফলাফল গানে বলেন-
‘‘ বঙ্গবন্ধুর ভাষনেতে সাড়া পড়ল দ্যাশে
হরতাল আর অসহযোগ শুরু হইল শ্যাষে/
(রঞ্জনা বিশ্বাস ২০২১ : ২৫)

৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতির ঐক্যের যোগসূত্র তৈরী হয়। মানিকগঞ্জ জেরার লোককবি (১৯৩১) সাইদুর রহমান বয়াতী বলেন-
‘‘রেসকোর্স ময়দানে মুজিব বক্তৃতার উপরে
কথায় যেন আকাশ থেকে অগ্নিবৃষ্টি ঝরে/
এমন কথা এ জীবনে শুনে নাই বাঙালি
সবার বুকে লাগে যেন পরাধীনের গুলি/
জাতি ধর্ম ভুলে গিয়ে হলো একাকারই
একই নৌকার যাত্রী সবাই শেখ মুজিব কান্ডারী।
(সাইমন জাকারিয়া, ২০২০ : ৮৭)

মানিকগঞ্জের বাউল কবি নূর মেহেদী আব্দুর রহমান বাউল (১৯৪৯) ৭ মার্চের ভাষণের বজ্রধ্বনিকে নির্যাতন নিষ্পেষণ হতে মুক্তির পথ বলে মনে করেন :
‘‘ধ্বণিত হলো বজ্রকন্ঠেরই সেই ভাষণ
কোন ক্রমেই আর বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।
হতে দেয়া হবে না নির্যাতিত নিষ্পেষণ/
আর তাই-
‘‘ যেন হাকি হায়দারী হাক
বলিষ্ঠ পদক্ষেপ আজাদীর চিহ্ন
দেখে ধরণী নির্বাক’’

৭ মার্চের পর পূর্ব বাংলার শহর গ্রাম মহল্লায় অসহযোগ আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হতে থাকে- তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা-মেঘনা- যমুনা, তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব, এদিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানকে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নিঃশর্ত চাপ দিলে তারা কালক্ষেপণ করে। ১৭ মার্চ টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে সেই ভয়ংকর নীল নকশার কাজ পরিচালনা করে। ২০ তারিখে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ প্ল্যানটি সেনা প্রধান জেনারেল হামিদ খানকে দেখানো হয়। ২২ তারিখে আরও সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট এতে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করেন। ২৫ মার্চ তারিখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা না করেই তার বিশেষ বিমানে ওঠেন। ঠিক তার আগে তিনি টিক্কা খানকে নির্দেশ দেন, ‘ওদের শায়েস্তা কর’। এরপরই ২৫ মার্চ শুরু হয় ‘‘অপারেশন সার্চলাইট’’ নামের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। রাত ১১টায় শুরু হয় নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালিদের শায়েস্তা করার অভিযান। তারা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের হলগুলো সহ সকল আবাসিক এলাকা, রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তর, পিলখানা ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলের প্রধান কার্যালয় এবং পুরান ঢাকার সমস্ত অলিগলিতে বর্বোরেচিত গণহত্যা ও ধ্বংস চালায়। এর সুনিপূণ বর্ণনা রয়েছে লোককবিদের গানে, কবিতায় ও ছড়ায়।

আলকাফ গানে ২৫ মার্চের ঘটনা সুনিপূণভাবে অঙ্কিত হয়েছে হাছেন আলী সরকারের বয়ানে-
‘পচিশা মার্চ রাইত বারোটার পর
সশস্ত্র পানজাবী জানোয়ার
আগুন লাগায় গোলাগুলি
মা-বোনের ইজ্জতের বলি
হাজার হাজার গুলি ছাড়ে
নিরস্ত্র বাঙালির উপরে।
হাজারো মানুষ মইরা রয়
চাষার সব ঘাটায় ঘাটায়
পানজাবির পানজেগানা/
(মামুন তরফদার (২০১৪) : ২৩)

লোককবি মাস্টার শাহ আলম ২৫ মার্চ রাতের বর্ণনা করেছেন এভাবে-
‘‘ওই দিকে পচিশে মার্চ পশ্চিমা শয়তান
ঝাপাইয়া পড়ে তারা নিশীত নিদান।
কামানের লেলিহান গোলা ঝাঁকে ঝাঁকে
ঢাকা শহর রক্তে লাল পড়িল বিপাকে/
পশ্চিমা হায়না ছুড়ে কামানের গোলা
ব্রাশ ফায়ার করে তারা রাত্রি হয় উজালা
ঘুমন্ত বাঙালি যত ঢাকাতে আছিল
পশ্চিমা সামরিক জান্তা মরিতে লাগিল/
কেয়ামত হইলো যেন ঢাকার শহর
নিশীরাত হয়ে যায় রক্তের নহর/
(রঞ্জনা বিশ্বাস, ২০২১ : ২৭)

২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। লোককবির গানে গানে সে সুর-
‘‘২৫শে মার্চ করলো রাতে ইয়াহিয়া শয়তান
ভুট্টোর সাথে মিলি চালায় ধ্বংসের তুফান/
এই রাতে পশ্চিমারা শেখ মুজিবরে
গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে যে মুজিবর সুজন
ঘোষিলেন স্বাধীনতা জানে সর্বজন/
আর তাই
‘‘শেখ মুজি ছিলেন তখন
জেলখানায় বন্দি
আন্দোলন চালাতে বলেন
নাই কোন সন্ধি/’’ ( মামুন তরফদার, ২০১৪ : ১৯)

ক্কারী মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বয়াতী পুঁথিতে ২৫ মার্চের ভয়ানক হত্যাযজ্ঞ দেখে গেয়ে উঠেন-
‘‘ এরপরেতে ঢাকা হইতে তারে বন্দি করে
আসল মূর্তি দেখি মার্চের পঁচিশ তারিখে/
এর পূর্বে নানারকম টালবাহানা করে
জাহাজের পর জাহাজ ভিড়ায় চিটাগাং বন্দরে/
গোলা বারুদ ভর্তি করা ট্যাংক আর কামান
একসাথেতে গর্জে উঠে চিতা বহ্নিমান
ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বিমান হাজারো রাইফেল
বম্বিং করে গুলি ছোড়ে যত ইতি শেল/
আর কত মারণাস্ত্র লেখাজোখা নাই
ফোরাত নদী ঘিরল যেন এজিদ সেনা ভাই/
পচিশে মার্চ কালরাত্রি ছেয়ে নিল সব
বাংলার ভাগ্যাকাশে ওঠে মরণ কলরব/
সারাবাংলা জুরে তখন চলছে গোলাগুলি
গুলি খাইয়া যায় উড়িয়া বাঙালির মাথার খুলি।
ছোট ছোট শিশুদের উর্ধ্বে ফিক্যা মারে
নিচ দিয়া বেয়নট ধইরা গাঁথে সেই শিশুরে।
অত্যাচারের সীমা আছে মুখে বলা দায়
ওদের কথা বলতে মুখের ভাষা ফিরে যায়/
কত যে করিল জুলুম কে দেবে সন্ধান
ওরা নাকি পাকিস্তানের খাটি মুসলমান/
(রঞ্জনা বিশ্বাস- ২০২১ : ২১৪)

লোকগীতি সমাজ জীবনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। সমাজে তথা রাষ্ট্রের বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতে গীতিকারের মন মর্যি তৈরী হয়। ফলে লোকগানের বিভিন্ন প্রকাশ ভঙ্গিতে ও মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা ও নেতা নেতৃত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন: জারিগানে-

‘ইয়াহিয়ার গৃহবাস
ভুট্টোর ক্ষেতে করছে সর্বনাশ
ইয়াহিয়া ভুট্টা খাইয়া
করছে এখন হায়হুতাশ।

আর এজন্য-
‘‘ ভুট্টো যখন ঢাকায় আইল
ইয়াহিয়ারে বুঝাইল
শেখ মুজিবকে বন্দি কর
বাঙালির প্রাণ কর নাশ/ ’’
(সামীয়ুল ইসলাম ২০০৭: ১১৩)

গম্ভীরাগানও রাজশাহী ও চাপাই নবাবগঞ্জ অঞ্চলের নানা কথা, ১৯৭১ এর শোক গাঁথা, মুক্তিযুদ্ধের করুণ স্মৃতি ফুটে ওঠে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তাই শিল্পী গেয়ে উঠেন:

‘‘কত লোকের রক্ত গেল
তারপরেতে স্বাধীন হলো
এসব কথা বলতে গিয়া প্রাণে লাগে ব্যথা
হে নানা বলবো ক্যামনে হে
হাঁবু হে দুঃখের কথা।’
কিংবা-
‘রক্ত দিয়ে গড়া মোদের সোনার বাংলাদেশ
এ দেশ তোমার আমার সম অধিকার
শেখ মুজিবের হয় আদেশ।’
(মামুন তরফদার ২০১৪ : ৪৭)

ধুয়াগানেও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। শুকুর মাহমুদের ধুয়াগান”
‘‘২৫শে মার্চ রাত্রিতে শেখ মুজিবুরকে এরেস্ট কইরা
ধইরা নিল আইয়ুব সরকারে
বন্দি থাইকা আমার মুজিব ডাইকা বলে বাঙালি
তোমরা একিন দেলে থাক সকলি
ঘরে ঘরে দুর্গ এবার হায় গইড়া তোল সকলে।’
(মামুন তরফদার ২০১৪ :২৮)

ভাওয়াইয়া গানে যুদ্ধে যাওয়ার আহ্বান-
‘শোন মুক্তিবাহিনী ভাই
তোমাদের ভয়ের কিছু নাই।
আইসো জয় বাংলা বলিয়া হামরা
জঙ্গের মাঠে যাই।
হামরা দেশ স্বাধীন চাই।
তাই বিজয়ের জন্য স্বাধীনতার প্রতিজ্ঞা গানে গানে-
শত্রু দিমু যে খেদাইয়া
বাংলাকে স্বাধীন করিয়া
বঙ্গবন্ধুক হামরা এবার
মুক্ত কইরা ভাই। ’’
(মামুন তরফদার ২০১৪ঃ ৬৪)

ভাটিয়ালী গানেও নৌকার মাঝিরূপে বঙ্গবন্ধুকে ইঙ্গিত করা হয়েছে- যে গানটির রচয়িতা সরদার আলাউদ্দিন, মতান্তরে মোহাম্মদ শফি (বাঙালি)
‘‘মুজিব বাইয়া যাওরে—-
মুজিব বাইয়া যাও রে নির্যাতিত দেশের মাঝে
জনগণের নাও ওরে
ও মুজিব রে—(সাইম রানা ২০০৯ঃ ২৭২)

লোক কবির গানে বঙ্গবন্ধু কখনও মাঝিরূপে, কখনও নয়নমণি রূপে কিংবা চির স¤্রাট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শিল্পীর কন্ঠে তাই শুনি-
তুমি বাংলার চির সম্রাট অন্ধকারের শশী। ঐ সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লোকসমাজে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছিল তা ইতিহাসের যুক্তিকে অতিক্রম করে গেছে। সাহিত্যের মুজিব, কবিতার মুজিব, ইতিহাসের মুজিব, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মুজিব যতটা যৌক্তিক, যতটা নেতা, যতটা রাষ্ট্র নায়ক— মুক্তিপাগল আমজনতার কাছে শেখ মুজিব তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। তিনি শুধু মহা নায়ক নন। তিনি ভাঙা নৌকার মাঝি, চিরকালীন সম্রাট, তিনি দুর্যোগের ঘন কালো আকাশে অন্ধকারের শশী বা চাঁদ। তিনিই পথ প্রদর্শক। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত গানটি-

‘‘আকাশ কান্দে বাতাস কান্দে
কান্দেরে বাঙালি
নিপাতিত মানুষ কান্দে
মুজিব মুজিব বলি রে-
মুজিব রে —-।

লোকগীতির প্রবণতাই হলো বিদ্রোহ প্রতিবাদ, তার সাম্য ও সমন্বয়। লোক বা লোকসাধারণের চেতনা সামষ্টিক চেতনা, এ চেতনার গূঢ় বস্তু হচ্ছে মিলিমিশে চলা, দুঃখ ও আনন্দকে সবাই মিলে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া, একের দুঃখে অন্যের শরীক হওয়া, একের সুখ-আনন্দ সবাই মিলে উপভোগ করা এবং অন্যায়ারে কাছে মাথা নত না করা।’’ (আব্দুল ওয়াহাব, ২০০৭ : ৩০১)

গণসঙ্গীতে মুক্তিপাগল বাঙালির সংগ্রামকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রেরণা যুগিয়েছিল। গণ সঙ্গীত মূলত ‘‘স্বদেশ চেতনা, যেখানে গণচেতনায় মিলিত হয়ে শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিকতার ভাবদেশের সাগরে মিশল, সেই মোহন্য়াই গণসঙ্গীতের জন্ম। সলিল চৌধুরীর মতে- ‘‘শ্রমজীবি মানুষের আশা আকাক্সক্ষা সংগ্রামের সাংগীতিক ইতিহাসই হলো গণসঙ্গীত। ’’ (সাইম রানা : ২০০৯: ৫)
চারণ কবি মোসলেম রচিত শিক্ষামূলক গণসঙ্গীত:

‘‘মাতব্বররি বেশি করা ভালো নয়
অতিরিক্ত হইয়া গেলে আস্তো তাহা খসে যায়।
ইয়াহিয়ার মাতুব্বরি; ক্ষিপ্ত হইল মিলিটারী
গোলা গুলি ছোড়া ছুড়ি, ঘর বাড়ি জ্বালাইয়া দেয়
অহঙ্কারীর দস্তখত, দুর্দান্ত সাদ্দামের মত
জীবন ভরা স্বপন সৌধ ; বেহেস্ত সুদ্ধ গোল্লায় যায়/
(সাহিম রানা : ২০০৯ : ২৪৪)
ভাবুক কবি বিজয় সরকার বলেন:
‘‘মোদের বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ
স্বাধীন বাংলাদেশ সারা পৃথিবী জানে/
———
আইয়ুব ভুট্টো ইয়াহিয়া এরা অভিনেতা
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু অদ্বতীয় নেতা
স্বার্থত্যাগী দেশ দরদী আত্মবিজেতা
বিস্ময় মেনেছে বিশ্ব চেয়ে তোমার পানে/
(রঞ্জনা বিশ্বাস : ২০২১ঃ ৩০১-৩০২)

লোককবি কুটি মনসুর (১৯২৬-২০১৭ ফরিদপুর) বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে গান লেখেন:
‘‘বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান
দেশ দরদি বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবর রহমান/
কাঙালিনী সুফিয়ার গানেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি সশ্রদ্ধ স্মরণ:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
সালাম সালাম হাজার সালাম জনগণের পায়
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরে/
(রঞ্জনা বিশ্বাস ২০২১ : ১৯৩)

বিচারগানে বঙ্গবন্ধুর কবিতা ফুটে উঠেছে। বিচার গানের গীতিকার আব্দুল হালিম বয়াতী গেয়ে উঠেন:
‘‘জাতির পিতা মহান নেতা (তারে) ছারবী কিনা বল
বন্দীশালার ভাঙ্গবো তালা বাঙালি ভাই চলরে চল/
শোন বলিরে ভুট্টু মিয়া, শেখ সাহেবকে দেও ছাড়িয়া
না হয় থাক সাবধান হইয়া আসিতেছে পাগলা দল/
(সাইম রানা ২০০৯ : ২৬৩)

ভবা পাগলা তাঁর গানে বলেন:
‘‘ভবা পাগলার অভিমান
আর কেন দেরী, শোন হে কান্ডারী
মুজিবরে হও অধিষ্ঠান। সুসন্তান নিয়াছে এ ভার
(আজি) ধরিতে বাংলার হাল/’’
(রঞ্জনা বিশ্বাস ২০২১ 🙂

৩.
এমনিভাবে বাঙলার লোক কবিরা যেসব গান রচনা করেছেন সেসব গান বাংলার লোক সংস্কৃতির ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এই গানগুলো গ্রামীণ সমাজের অস্তিত্বের কথা নিয়ে লোক সংস্কৃতির একটি বিশেষ ধারায় আশ্রয় নেয়। তাই এসব গানে গণ অনুভুতির অনুভব সম্ভব। বাংলা লোকগানই লোক সংস্কৃতির একটি শন্তিশালী প্রধান ধারা। এই সকল গানে বাঙালির মৌলিক বৈশিষ্ট্য পরিচয় নানা ঘাত-প্রতিঘাতে এখনও জীবন্ত। তাই এ গান দেশের গান, বাংলার মানুষের গান, এ গান ইতিহাসের গান, স্বাধীনজাতি ও স্বাধীনতার গান। আর বঙ্গবন্ধু এ সকল গানের মাঝে পরিব্যাপ্ত।

লেখক: মোঃ ইসলাম মোল্লা, সহকারি অধ্যাপক- বাংলা বিভাগ, শিবালয় সদরউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ, মানিকগঞ্জ।

সর্বশেষ - মানিকগঞ্জ

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com