নবীণ ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৪ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২১ আগস্ট) এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।
অন্য বহিস্কৃতরা হলেন- ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম এবং চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী। তারা সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আগামী ২৩ আগস্ট পূর্ব নির্দেশানুযায়ী এ সিদ্ধান্তটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের প্রতি (আজীবন বহিষ্কার) এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি আমরা আদালতে পাঠিয়ে দিব।
জানা যায়, এর আগে গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট, ১৯৮৭ এর অধ্যায় ২ ধারা ৮ অনুযায়ী অভিযুক্তদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তবে এই শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিধি সম্মত হয়নি বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। একইসাথে রায়টিকে অকার্যকর করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্টের প্রথম ভাগের তিনটি ধারা বাড়িয়ে (৪, ৫, ৭) ও দ্বিতীয় ভাগের ২ (৮) ধারায় নতুন করে সাজা দোয়ার নির্দেশ দেয়া হয় উপাচার্যকে। যা ২৩শে আগস্ট প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে বলা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে রোববার (২০ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে আলোচনা শেষে বিষয়টির সিদ্ধান্তের জন্য পরদিন সোমবার জরুরি সিন্ডেকেট সভায় আহ্বান করা হয়। সেখানে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে নবীন এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠে। পরে ভুক্তভোগী ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফুলপরী খাতুন লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হলে হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় গত ৪ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শৃঙখলা কমিটির সভায় অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও তাদের সকলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর গত ১২ই জুন অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি। একইদিনে ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুনকেও ডাকা হয়। এসব বিবেচনা শেষে গত ১৫ জুলাই ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির চূড়ান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।