অপরাধ রুখতে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছিল ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা)। এর উপকারও পেয়েছিল শহরবাসী। সিসি ক্যামেরা থাকায় অপরাধ যেমন কমে এসেছিল, তেমনি ধরা পড়ছিল অপরাধীরাও। তবে রক্ষনাবেক্ষন আর তদারকির অভাবে এখন অকেজো হয়ে পড়েছে সিসি ক্যামেরাগুলো। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধী চক্র। শহরে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ক্যামেরা গুলো বিকল থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করতে যেমন বেগ পেতে হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। তেমনি সিসি ক্যামরার সুফল পাচ্ছে না স্থানীয় জনগণ।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর শহরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঠেকাতে ২০১৬ সালে পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের ঝুমুর সিনোমাহল এলাকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ তেমুহনী, আদর্শ সামাদ মোড়, চকবাজার ও বঙ্গবন্ধু চত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছিলো অর্ধশত সিসি ক্যামরা। তখন পুলিশের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও এখন তা অকার্যকর হয়ে আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ জুলাই শহরের কলেজ রোডে মো. সজীব নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এর আগে ৭ই জুন রাতে শহরের সামাদ মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে ৮-১০ জন অস্ত্রধারী এসে এলোপাতাড়ি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আর.কে শিল্পালয় নামের একটি স্বর্ণের দোকানে লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় দোকান মালিককে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। এছাড়া ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ইকোনো পরিবহন নামের একটি বাসের ভেতর ঘুমন্ত অবস্থায় রিয়াদ নামের এক সুপারভাইজারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে ভোরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটি থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই বছরের গত ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী পেট্রোল পাম্পের সামনে তিন এসএসসি পরীক্ষার্থীর ওপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় এখনো শঙ্কিত সাধারণ ব্যবসায়ীসহ শহরবাসী।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পৌর নাগরিকরা জানান, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামরা স্থাপনের ফলে তখন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে নতুন অবস্থায় সচল থাকলেও বছর খানেক পরেই এসব ক্যামরা এখন রহস্যজনক কারনে বিকল হয়ে পড়ে আছে। সরকারি টাকায় স্থাপন করা এসব ক্যামরার কিছু চুরি হয়ে গেছে আর কিছুতে পাখিরা বাসা বেঁধে এখন অকেজো অবস্থায় রয়েছে। অযত্ন অবহেলায় তার সুফল পাচ্ছেননা মানুষ। অনেকেই আবার বলছেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের উগ্রবাদীগোষ্ঠীর নাশকতামূলক কর্মকান্ডের বাধা হিসেবে মনে করে এসব ক্যামরাকে পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। অচিরেই এসব ক্যমরা সচল করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবী জানান সচেতন মহল।
এব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া জানান, সিসি ক্যামরাগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি না করায় অচল হয়েছে। এতে করে বাসা-বাড়ি, দোকানে ও সড়কে মোটর সাইকেল চুরি হলেও অপরাধীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে শহরবাসীর নিরাপত্তায় গৃরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে ক্যামরা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সিসি ক্যামেরা চালু থাকলে অপরাধী শনাক্ত করা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। তাই শহরবাসীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অকেজো সিসি ক্যামরাগুলো বাদ দিয়ে সদর উপজেলার জকসিন বাজার থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হয়ে দালাল বাজার পর্যন্ত নতুন করে প্রায় ২০০টি সিসি ক্যামরা স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।