ইসরায়েলে অবরুদ্ধ গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের রকেট হামলা ও স্থল অভিযানের পর থেকে অন্তত ৭৫০ ইসরায়েলি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। এরই মধ্যে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। এছাড়া হামাস দাবি করেছে যে, সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইসরায়েলিকে তারা বন্দী করেছে। তবে ঠিক কতজনকে জিম্মি করা হয়েছে সে বিষয়ে হামাস কিছু জানায়নি।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দৈনিক জেরুজালেম পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, শনিবার সকালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ৭৫০ ইসরায়েলি নিখোঁজ হয়েছে।
হামাস শনিবার ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ শুরু করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে যে, অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে আকস্মিক আক্রমণ করা হয়েছে। হাজার হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে এবং অনেক ইসরায়েলিকে বন্দী করা হয়েছে।
তবে ফিলিস্তিনের সংগঠন হামাস ইসরায়েলের ১০০ বেসামরিক নাগরিক ও সেনাকে জিম্মি করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের দূতাবাস। রোববার দূতাবাসের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে ইসরায়েলি দূতাবাস জানায়, সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে জিম্মির সংখ্যা ১০০।
পোস্টে আরও দাবি করা হয়, এখন পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আহতের সংখ্যা ১ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে।
তবে ইসরায়েল এখনো এই সংখ্যাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। শনিবার হামাস দাবি করে তারা ইসরায়েলের ৫৩ জনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও আছেন। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান সালেহ আল-আরুরি দাবি করেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মেজর জেনারেল পদমর্যাদার কেউ জিম্মি হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। এর বাইরে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি। হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজার হামাসের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সোর্ডস অব আয়রন’ শুরু করেছে। এতে ফিলিস্তিনে অন্তত ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে হামাস ইসরায়েলের দিকে তিন হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধে রয়েছি’। তিনি গাজার বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ি ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
🚨 Operational Update: pic.twitter.com/hJlnftPmJN
— Embassy of Israel to the USA | #IsraelUSA75 (@IsraelinUSA) October 8, 2023
শনিবার ইসরায়েলে ছিল ছুটির দিন। স্বাভাবিকভাবেই দিনটির শুরুটা কর্মব্যস্ত ছিল না। এমন দিনে পরিকল্পনামাফিক মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালায় অবরুদ্ধ গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেড। হামাসের এমন হামলা ইসরায়েলকে ১৯৭৩ সালের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সেই আক্রমণের ৫০তম বার্ষিকীতে হামলা চালায় হামাস।
আরও অবাক করা বিষয় হলো- হামাসের এমন বড় ধরনের হামলার কোনো খবর ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না। সে কথা স্বীকারও করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, হামাসের এমন হামলা তাদেরকে অবাক করেছে।
ইসরায়েলি বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইসরায়েলের একটি বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এছাড়া কোনো খবর না থাকায় ইসরায়েল এমন হাজার হাজার রকেট হামলা মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিল না। শুধু রকেট হামলায় থেমে থাকেনি হামাস। স্থলপথেও আক্রমণ করে তারা। গাজা উপত্যকার আশেপাশের শহরগুলোতে স্থল অভিযান শুরু করে তারা।
এই অভিযান ১৯৭৩ সালের অক্টোবরের যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সময় মিশর এবং সিরিয়া ইয়োম কিপপুরে সামরিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে অবাক করে দিয়েছিল। সেটিও ছিল ইসরায়েলে একটি সরকারি ছুটির দিন। ওই যুদ্ধে আড়াই হাজারের বেশি ইসরায়েলি নিহত হন।