রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুর বালুঘাটে ইজারাদারদের রসিদ ব্যাতীত অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করছে একটি সিন্ডিকেট বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বালুবাহী ট্রাক থেকে এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এতে ট্রাকমালিক, বালুর গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর শ্যামপুর এলাকার বালুমহাল থেকে বালু পরিবহনের ট্রাকে টোল আদায়ের জন্য ইজারা দিয়েছে কাটাখালী পৌরসভা। সরকারিভাবে টোল আদায় করছে ‘সাইফ ট্রেডার্স’ যার স্বত্ত্বাধিকারী শাহিনুর রহমান শিহাব। ট্রাকপ্রতি ৩০০ টাকা করে আদায় করছেন তারা। প্রতিদিন শ্যামপুর বালুমহাল থেকে বালু নেয় এক থেকে দেড়’শ ট্রাক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুলাল নামের একজন ট্রাকচালক বলেন, এক ট্রাক বালু পরিবহন করে ৩০০ টাকা সরকারীভাবে নির্ধারিত করা আছে কিন্তু গেল ২ দিন ধরে স্থানীয় শিবির ক্যাডার ও ২১ মামলার আসামী মিজানুর রহমান মিয়াজনের নেতৃত্বে অটো ড্রাইভার শমসের, সুমন, রনিসহ কয়েকজন ট্রাক আটকে রেখে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। স্থানীয়ভাবে এই সংঘবদ্ধ চক্র সিন্ডিকেট করে জোর করে এই টাকা আদায় করার চেস্টা করছে।
রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকার ঠিকাদার জাবেদ আলী জানান- সরকারি টোল দেয়ার পর বালু বিক্রি করে প্রতি ট্রাকে লাভ থাকে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। কিন্তু গত ২২/১০/২০২৩ ইং তারিখ থেকে ট্রাক আটকিয়ে শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে অটো ড্রাইভার শমসের, সুমন, রনিসহ কয়েকজন ট্রাক আটকে রেখে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। এটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিৎ।
এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী শ্যামপুর বালুরঘাটে মাস্টারের মোড় টু চৌদ্দপাই বালুর ট্রাক চলাচল ছিল কিন্তু রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের কাজ চলমান হওয়ার কারনে রাস্তাটি বন্ধ আছে। বিধায় শ্যামপুর বালুর ঘাটে বালুর ট্রাক যাতায়াতের জন্য দেওয়ানপাড়া টু শ্যামপুর বালুর ঘাট নির্ধারন করা হয়। কিন্তু এখানেই বাধে বিপত্তি।
বালুর ট্রাককে কেন্দ্র করে দেওয়ানপাড়া টু শ্যামপুর বালুর ঘাট এলাকায় শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে মিজানের গ্রুপের সদস্যরা হচ্ছেন ফয়সাল, পিতা : ফারুক, রোকনুজ্জামান ভুলু, পিতা: মতিউর রহমান, মেজবাউল,পিতা: আতাউর রহমান, বদিউজ্জামান,পিতা: মতিউর রহমান, রকি, পিতা- আলতাব হোসেন, শফি, পিতা: আতাউর রহমান, আরিফ, পিতা: আক্কাস, জিদান, পিতা: জিয়া। এছাড়াও অটো ড্রাইভার শমসের, সুমন, রনির নাম উল্লেখযোগ্য। অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, এদের মধ্যে কয়েকজন শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান মিজানের চাচতো ভাইও আছেন।
এছাড়াও একাধিক এলাকাবাসীর বক্তব্য এই যে, রাজশাহী কাটাখালী পৌরসভার দেওয়ানপাড়া টু শ্যামপুর বালুর ঘাটে একটি চক্র গড়ে উঠেছে যারা যখন তখন ট্রাক, ট্রলি আটকিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজী শুরু করেছে।
ইজারা মহলের বক্তব্য
অন্যদিকে ইজারামহলের মধ্যে কয়েকজন এ বিষয়ে কঠোর আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। সার্বিক বিষয়ে ইজারাদার রিপন প্রিন্সিপাল, স্থানীয় ৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার মজিদ, ৯ নং ওয়ার্ড কমিশনার এনামুল ও ‘সাইফ ট্রেডার্স’ এর স্বত্ত্বাধিকারী শাহিনুর রহমান শিহাব গনমাধ্যম কর্মীদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান – বৈধ বালু মহালে ট্রাক আটকিয়ে চাঁদাবাজি কারোও কাম্য নয়। আমরা রাজশাহী কাটাকাটি পৌর মেয়র ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- অবিলম্বে শ্যামপুর বালুর ঘাটের ট্রাক নিয়ে যদি কেউ চাঁদাবাজি করার চেস্টা করে তবে আম জনতা প্রতিহত করবে।
শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান মিজান কে?
রাজশাহী কাটাখালীর ৩ মেয়াদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাক্ষ মাজেদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান মিজান। মিজান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে লেখাপড়া করছেন। কিন্তু গেল ১ দশকে তিনি জামাত শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে তার বিরুদ্ধে ৩০ থেকে ৩৫ টি মামলা হলেও উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের কাছে ২১ টি মামলার নথি এসে পৌঁছেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য মিজানুর রহমান মিজানের সাথে মুঠোফোন ফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তিনি জানান- আমার বাবা সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি এমপি প্রার্থী এবং আমি নিজেও চেয়ারম্যান প্রার্থী তাই এই সকল প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।
অন্যদিকে শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান মিজানের ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা তিনি জামাত শিবির মতাদর্শের। কেননা তার ফেসবুক প্রোফাইলে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছবি কভার ফটো হিসেবে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তিনি আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছবি ভিডিও নিয়মিত শেয়ার করেন।
প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় কাটাখালী পৌর মেয়র নান্নু
অভিযোগগুলোর বিষয়ে রাজশাহী কাটাখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনোয়ার সাদাত নান্নুর সাথে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে চাঁদাবাজির বিষয়ে চেয়ারম্যানের কোন ইন্ধন আছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি।
রাজশাহী কাটাখালী থানার বক্তব্য
উপরোক্ত অভিযোগুলোকে কেন্দ্র করে ২৩ তারিখে রাজশাহী কাটাখালী থানায় একটি অভিযোগও দায়ের হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী কাটাখালী থানার ওসি সিদ্দিক বলেন – অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।