বিশ্বকাপে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান হতাশ হতে বারণ করেছিলেন। তবে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সাকিবের এমন বক্তব্য ভক্তদের আশা দেখালেও আজ মাঠে দেখা গিয়েছে ভিন্ন চিত্র।
কুইন্টন ডি ককের বিধ্বংসী ১৭৪ রানের ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ৩৮৩ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে টাইগারদের হয়ে একাই লড়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ পর্যন্ত সাইলেন্ট কিলারের শতকে লজ্জার হার এড়িয়ে ২৩৩ রানে থামে সাকিব বাহিনী। ফলে ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানের জয়ে পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে এইডেন মার্করামের দল।
প্রোটিয়াদের দেওয়া ৩৮৩ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করতে আসেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস। শুরুটা দেখেশুনে শুরু করেন এই দুই ওপেনার। ছয় ওভারে বিনা উইকেটে ৩০ রান তুলে লড়াইয়ের আভাস দেন দুই ওপেনার। তবে সেই গতি আর ধরে রাখতে পারেনি টাইগাররা সপ্তম ওভারে এসে জোড়া ধাক্কা খায় তারা।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে মার্কো ইয়ানসেন টানা দুই বলে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার তানজিদ তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ১৭ বলে ১২ রান করেন তামিম। অপরদিকে ক্রিজে নেমে শুরুতেই গোল্ডেন ডাক মেরে তামিমের পথে হাঁটেন শান্ত। এরপর উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি অধিনায়ক সাকিবও।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে লিজার্ড উইলিয়ামসের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৪ বলে ১ রান। ফলে ৩০ রানে বিনা উইকেট থেকে টাইগারদের স্কোরবোর্ড দাঁড়ায় ৩১ রানে ৩ উইকেট। শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে চতুর্থ উইকেট জুটিতে লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম কিছুটা আশা জাগালেও ব্যর্থ হন তারা।
১২তম ওভারে ১৭ বলে ৮ রান করে ফিরেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। অপরদিকে টাইগার ওপেনার লিটন দাস ক্রিজে থাকেন কেবলই লড়াইয়ের জন্য। তবে এই টাইগার ব্যাটারও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। ৪৪ বলে ২২ রান করে রাবাদার বলে ফেরার আগে তিনি খেলেন ৩৬টি ডট বল। নিয়মিত বিরতিতে উইকেটে হারিয়ে বিপাকে পড়তে থাকা টাইগার যখন বড় ব্যবধানে হারের লজ্জার রেকর্ডের শল্কায়। তখন টাইগার শিবিরে স্বস্তি হয়ে আসে রিয়াদের ব্যাটিং।
তার ব্যাটে বিশ্বকাপের ইতিহাসে ২৭৫ রানের রেকর্ড ব্যবধানের হার থেকে বাচে টাইগাররা। একপ্রান্ত আগলে রেখে শেষ চেষ্টা করেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ৬৬ বলে চলতি আসরে নিজের প্রথম ফিফটির দেখা পেয়েছেন তিনি। তার ব্যাটে হারের ব্যবধান কমাতে লড়ে বাংলাদেশ। শেষ দিকে মুস্তাফিজুকে নিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক তুলেও নিয়ে থাকে রিয়াদ। তবে শতকে পর বেশিক্ষণ উইকেটে টিকেননি তিনি।
দলীয় ২২৭ রানে ১১১ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০ বলে হাতে রেখেই ২৩৩ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। প্রোটিয়াদের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন জেরাল্ড কোয়েৎজি।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন রেজা হেনড্রিকস ও কুইন্টন ডি কক। শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন এ দুই ব্যাটার। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে তানজিদ হাসান তামিমের হাতে জীবন পান রেজা হেনড্রিকস। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ইনিংসের সপ্তম ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে বোল্ড হন এ ব্যাটার। এর আগে করেন ১২ রান।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট করতে আসেন রাসি ফন ডার ডুসেন। তবে উইকেটে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলীয় ৩৬ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে মাত্র ১ রান করেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে দলকে ভালোভাবেই এগিয়ে নিতে থাকেন ডি কক ও এইডেন মার্করাম।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে খেলতে থাকা ডি কক ৪৭ বলে নিজের অর্ধশত রান তুলে নেন। অপরদিকে ডি ককের পর এইডেন মার্করামও ওয়ানডেতে নবম অর্ধশতক তুলে নেন। এই দুই জনের ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের পথ দেখে প্রোটিয়ারা। তবে ফিফটির কিছু পরই ফেরেন এ ব্যাটার। দলীয় ১৬৭ রানে মার্করাম আউট হলে ভাঙে ১৩১ রানের এই জুটি। সাকিবের বলে আউট হয়ে সাজঘরের যাবার আগে ৬৯ বলে ৬০ রান করেন তিনি।
মার্করাম বিদায় নিলেও বাংলাদেশের বোলার ওপর তাণ্ডব চালিয়ে চলতি বিশ্বকাপে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ডি কক। চতুর্থ উইকেট জুটিতে হেনরিখ ক্লাসেন ও ডি ককের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের ভীত গড়ে প্রোটিয়ারা। সাকিব-হাসানদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে ক্যারিয়ারের ষষ্ট অর্ধশতক তুলে নেন ক্লাসেন। তবে দলীয় ৩০৯ রানে ডি কক আউট হলে ভাঙে ১৪২ রানে বিধ্বংসী এই জুটি। সাজঘরে যাওয়ার আগে ১৪০ বলে ১৭৪ রান করেন তিনি।
এদিকে আফ্রিকার ইতিহাসে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক নিজের করে নিয়েছেন ডি কক। এর আগে ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিলো অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪৯ রানের ইনিংস। এখন প্রোটিয়াদের ইতিহাসে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান ডি ককের ১৭৪। অন্যদিকে ডি কক আউট হলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশ বোলারদের ওপর চড়া হতে থাকেন ক্লাসেন।
শেষ পর্যন্ত ক্লাসেনের ৯০ রানের ঝড়ো ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রানের সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ১টি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ, শরীফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ ও সাকিব আল হাসান।