পরাজিত হবার পরেও যে একটা মানুষের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে তাঁর মতাদর্শের উপর অবিচল থাকার অধিকার আছে। অন্য আর দশটা সাধারন মানুষের মতো তাঁর নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাবার অধিকার আছে আমাদের সমাজে এই চর্চাটুকু নেই বললেই চলে।
একটা সময় মুরুব্বীদের মুখে কথা ছিল “মানুষ মেরে কিসের রাজনীতি” সেই কথাটাই ঘুরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে” মানুষ না মারলে রাজনীতি হয় না, আন্দোলন চাঙ্গা করতে লাশ প্রয়োজন”। এইযে পারস্পরিক ঘৃণা এবং সর্বান্তকরণের যে প্রচেষ্টা সমাজ চালু হয়েছে। এর বিপরীতে সহঅবস্থান পারস্পরিক সহমর্মিতা নিয়ে কোন বুদ্ধিজীবী কোন সাংবাদিক কাউকে কথা বলতে দেখি না। সবাই ভীষণ রকমের পক্ষপাত দুষ্ট। যে যার যার অবস্থান থেকে আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছেন!
একটা সময় দেখতাম নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর বাড়িতে সর্বপ্রথমে যেতেন বিজয়ী প্রার্থী। তাঁর গলার মালা খুলে পরিয়ে দিতেন পরাজিত প্রার্থীর গলায়। নিজের পাশের চেয়ারে জায়গা করে দিতেন পরাজিত প্রার্থীকে। একই সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করতেন। কোথায় সেই আমাদের সোনালী অতীত?
পরাজিত হলেই অস্তিত্ব বিলীন হবার এর একটা ভয় সমাজে প্রচলিত হয়েছে। এই ভয় থেকে একটা পক্ষ ক্ষমতাকে যেকোনো মূল্যে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছেন। অন্যপক্ষ ক্ষমতায় যেতে যা তা ইচ্ছা করে বেড়াচ্ছেন।
আপনি ক্ষমতায় থেকেও যেমন আমাকে জিম্মি করার অধিকার রাখেন না, তেমনি আপনি ক্ষমতায় যেতেও আমাকে জিম্মি করে রাখতে পারেন না।
আমি ক্ষমতায় গেলে “তোমাকে দেখে নিব” এই চর্চা বন্ধ হোক। আমি ক্ষমতায় গেলে “তোমাকে সাথে নিব, তোমাকে সাথে নিয়েই চলবো” এই চর্চা শুরু হোক।
আর এই অঙ্গীকার যদি ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতার বাইরে থাকার রাজনৈতিক দলগুলি না করতে পারে তবে দেশের সকল শান্তিপ্রিয় মানুষের উচিত প্রচলিত রাজনীতি ও এই রাজনীতিবিদদের প্রত্যাখ্যান করা।
লেখক ও সাংবাদিক, সৈয়দ মাজারুল ইসলাম রুবেল।