মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের একজন খুচরা সার ডিলার নির্দিষ্ট স্থানে ব্যবসায় না করায় এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নেয়ায় অভিযোগে ইউনিয়নের সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান মিয়ার সুপারিশে ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় ডিলারদের মাধ্যমে জানা যায়, কৃষকদের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন খুচরা সার বিক্রেতা নিয়োগ দিয়েছেন। এই ডিলারশিপ পেতে সরকারি সকল নীতিমালা মেনে এই সনদ প্রাপ্ত হলেও পরবর্তীতে বেশি মুনাফার প্রলোভনে কতিপয় ডিলার নির্ধারিত স্থানে ব্যবসায় না করে তাদের সুবিধামত স্থানে গড়ে তুলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা জানান, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে ব্যবসা করছেন মেসার্স নিজাম বীজ ভাণ্ডারের মালিক নিজাম উদ্দিন। সারাসিন, বাগজান ও রামনগর মিলে মহাদেবপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডের নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার হচ্ছেন নিজাম উদ্দিন। কিন্তু তিনি এই ওয়ার্ডে ব্যবসা না করে ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বরংগাইল শহীদ লেবু মিয়া স্মৃতি মার্কেটে ব্যবসা করছেন। এতে লঙ্ঘিত হচ্ছে সরকারি বিধি, বেড়ে যাচ্ছে কৃষকের যাতায়াত খরচ এবং অপচয় হচ্ছে মূল্যবান সময়। কর্তাব্যক্তিদের কাছে তাদের জোর দাবি, নিজামকে তার নিজ ওয়ার্ডে ফিরিয়ে এনে কৃষকদের সেবার মান ত্বরান্বিত করা হোক। আর সরকারি আদেশ না মানলে তার ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হোক কৃষকদের সেবার মান।
বাগজান, সারাশিন ও রামনগর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম, চান মিয়া,আবুল হাসেন, আওলাদ হোসেন, আব্দুল জলিল, বারেক মিয়াসহ শতাধিক কৃষক জানান, তারা নিজামকে অনেকবার ২ নং ওয়ার্ডে গিয়ে ব্যবসা করতে অনুরোধ করেছেন। অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি তাদের কড়া ভাষায় জানান, মন চাইলে বরংগাইল এসে তার কাছ থেকে মাল নেবেন, মন না চাইলে অন্যত্র যাবেন। কিন্তু তিনি বরংগাইল থেকে অন্যত্র গিয়ে ব্যবসা করবেন না। সবাইকে ম্যানেজ করেই বরংগাইল বাজারে ব্যবসা করেন বলে জানান নিজাম। ইতিপূর্বেও তার অনিয়ম, দুনীর্তি নিয়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল। কিন্তু জায়গামতো ম্যানেজ করে দিব্যি বরংগাইল বাজারে ব্যবসা করছেন তিনি!
মহাদেবপুর ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান জানান, নিজামকে স্ব-স্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু ইউএনও অফিস থেকে কোন রিসিভ কপি দেয়নি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে অভিযোগের একটি রিসিভ কপি দিয়েছে। তার স্বেচ্ছাচারিতায় এবং সার বীজের অতিরিক্ত দাম নেয়ায় কৃষকেরা প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছে। অনতিবিলম্বে এর একটা সঠিক সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
মহাদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান মিয়া জানান, বিধিমোতাবেক প্রতি ওয়ার্ডে একজন খুচরা ডিলার থাকবে। কিন্তু মহাদেবপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ডিলার ৩ নং ওয়ার্ডের বরংগাইলে ব্যবসা করার দরুণ ওই ওয়ার্ডের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এই সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আগামী সমন্বয় মিটিংয়ে এই বিষয়টি নির্বাহী কর্মকর্তা উত্থাপন করতে বলেছেন। তখন তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
২ নং ওয়ার্ডের খুচরা সার ডিলার মো.নিজাম উদ্দিন জানান, এই নিয়ম বাংলাদেশের অনেকেই মানছেন না। তাই, তিনিও তার সুবিধামত জায়গায় ব্যবসা করছেন। এবিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ কখনও তাকে নিষেধ করেননি। অন্য বিক্রেতারা যেভাবে সার বীজ বিক্রি করছেন তিনিও একইভাবে বিক্রি করছেন।
শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার জানান, অভিযোগটি ইউএনও বরাবর লিখিত। এর একটি অনুলিপি তিনি হাতে পেয়ে রিসিভ কপি দিয়েছেন। নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আদেশ দিলে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে জানান, তিনি একটি জরুরি মিটিংয়ে আছেন।