পবিত্র কোরআনে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা নিয়ে বলা হয়েছে। এমনকি ইহকাল ও পরকাল নিয়েও দেওয়া হয়েছে অনেক বার্তা। সেগুলোতে একাধিকবার মুমিনদের নির্ভয় ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ বান্দাদের ইহকাল ও পরকালীন জীবনের এই সুসংবাদ দিয়েছেন আল্লাহ।
নিম্নে তাদের সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তার নির্দেশনা পালন মানুষকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে। কারণ বিশ্বাস ইহকাল ও পরকালীন মুক্তির মূল ভিত্তি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার হেদায়াত অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৮)
২. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের পাশাপাশি ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষ নির্ভয় জীবন যাপন করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে, তাদের রবের কাছে তাদের জন্য মহাপ্রতিদান রয়েছে এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬২)
৩. ইসলাম পালনের পাশাপাশি নিপুণভাবে কাজ করলে মহা প্রতিদান রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই, কেউ আল্লাহর কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করলে এবং ভালো কাজ করলে তার প্রতিদান তার রবের কাছে রয়েছে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১২)
৪. গরিব-দুঃখীদের জন্য খরচের মাধ্যমে ভয় ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা যায়। তবে দান করে কাউকে কষ্ট দেওয়া বা খোঁটা দেওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, অতঃপর যা ব্যয় করে তার কথা বলে বেড়ায় না এবং কষ্ট দেয় না, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬২)
৫. সব সময় ও সব স্থানে অকাতরে দানকারীর জন্য সুসংবাদ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের সম্পদ রাত ও দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে প্রতিদান রয়েছে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৪)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনবে, ভালো কাজ করবে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত দেবে, তাদের জন্য তাদের রবের কাছে প্রতিদান রয়েছে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৭)
৬. যারা আল্লাহর পথে দ্বিনের সাহায্যে জীবন বিলিয়ে দেবে, তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে মারা যায় তাদের তোমরা মৃত মনে কোরো না, বরং তারা জীবিত এবং তারা তাদের রবের কাছে রিজিক লাভ করে। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন তারা তাতে আনন্দিত এবং তাদের পেছনে যারা এখনো তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬৯-১৭০)
৭. নবী-রাসুলদের নির্দেশিত পথে যারা সমাজের সংস্কার করবে তাদের জন্যও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনের কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ঈমান আনবে এবং সংশোধন করবে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৪৮)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যে তাকওয়া তথা আল্লাহভীরুতা অর্জন করবে এবং সংশোধন করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৫)
৮. শর্তহীন ভালোবাসা ও আনুগত্যের মাধ্যমে যারা আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে তাদের উদ্দেশে মহান আল্লাহ বলেন, ‘শোনো, নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬২)
৯. যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখবে এবং এর ওপর অবিচল থাকবে, তাদের জন্য বিশেষ সুসংবাদ আছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলবে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর অটল থাকবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ১৩)
মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি আমল করার তাওফিক দান করুন আমীন।