কিশোর কুমার দত্ত, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভাবনা নিয়ে লক্ষ্মীপুরের গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ ভোটাররা নানামুখি বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। বিগত ভোটের অভিজ্ঞতার জের টেনে তারা এবারের ভোট নিয়েও বিভিন্ন শংকার কথা জানিয়েছেন।
বিভিন্ন ভোটে কেন্দ্রে বাধা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে আশংকা ব্যাক্ত করেন। তবে এবার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হলে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার বাসনাও ব্যাক্ত করেন প্রান্তিক অঞ্চলের এসব ভোটাররা।
সরেজমিনে আজ শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) জেলা সদর, রায়পুর সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের শংকাপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া।
জেলার রায়পুর পৌর ৭ নং ওয়ার্ডের চা দোকানদার আব্দুল মতিন বলেন, “ভোট দিতে পারমু কিনা সেটাইতো জানিনা। আগেরবার ভোট দিতে গিয়া দেখি আমার ভোট হই গেছে। মনে খুব কষ্ট লই ফিইরা আইছি। এবার কি হয় জানিনা। তবে ভোট দিতে পারলে ভাল লোক দেইখাই দিমু।”
১নং হামছাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা পান ব্যাবসায়ী শুভাষ মজুমদার বলেন, “আমরা ভোট কেন্দ্রে আসতে পারি নাই আগে। কেন্দ্রে না আসার জন্য হুমকী-ধমকী দিত দলের ক্যাডাররা। এবার যদি পরিবেশ পাই, কোন বাধা না পাই তাহলে কেন্দ্রে আসি ভোট দিমু। যোগ্য লোককেই ভোট দিমু।”
রায়পুর শহরের ফল দোকানদার শাহ আলম বলেন, “আমরা কেন্দ্রে যাই ঠিকমত ভোট দেয়ার সুযোগ পাইলে ভোট দিমু। ভাল লোক যে তারেই ভোট দিমু।”
দক্ষিন কেরোয়া এলাকার অটো রিক্সা চালক নুর হোসেন বলেন,”এ পর্যন্ত কেন্দ্রে যাইতে পারিনাই। এবার যদি যাইতে পারি ভোট দিমু। যারে দিয়া এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন অইবো তারে ভোট দিমু।”
রহিমা বেগম নামের এক নারী ভোটার বলেন, “এখানে গ্রামের নারীরা খুব অবহেলিত। নারীরা সম্মান কম পায়। নারীদের সম্মান বৃদ্ধি আর উন্নয়নে যে কাজ করবে তারেই ভোট দিব।”
সদর উপজেলার হামছাদি এলাকার নতুন ভোটার মেহেদী হাসান মাছুম বলেন, “এবারই ভোটার হয়েছি। আমার জীবনের প্রথম ভোট। নতুন ভোটার হিসেবে আমার প্রত্যাশা ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকুক। আগের ভোটগুলোতে কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পরিবেশ ভাল থাকতনা শুনেছি। তবে এবার যেন ভোটাররা অবাধে নিজের ভোট দেয়ার সুযোগ পায় সেটাই আশা করছি। পরিবেশ সুন্দর থাকলে কেন্দ্রে গিয়ে প্রথমবারের মতো নিজের ভোট নিজে দেবো। পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দেবো।”
এদের মতো আরও অনেক ভোটারদের সাথে কথা বলে প্রায় একই রকম মন্তব্য পাওয়া যায়। সবার বক্তব্যে একটা বিষয় পরিস্ফুট হয়,সকলেই কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে নিজের ভোট নিজেই প্রয়োগ করতে চায়। সেজন্য প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশের ভোট কেন্দ্র প্রত্যাশা করেন এসব সাধারণ ভোটাররা।
প্রসঙ্গত: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরে ৪টি আসনে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। দিন রাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা।
এখানে নৌকার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে। লক্ষ্মীপুর-১ রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর ও সদর আংশিক, লক্ষ্মীপুর৩ সদর ও লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি ও কমলনগরে মোট এ ৪টি আসনে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও বিভিন্ন দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ ৩০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
৪টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৭ লাখ ২২ হাজার ৩৯৯ ও পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৯৩, হিড়া ভোটার রয়েছে ৪জন। ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ৪৭৭ টি। ১৪৪০.৩৯ বর্গ কিলো মিটারের আয়তনে গঠিত ৪টি পৌরসভা ও ৫৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে ৪টি আসন।