রাজধানীর হজরত শাহজালাল রহ. আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় যে টার্মিনাল হচ্ছে তার ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৭ অক্টোবর থার্ড টার্মিনাল খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে তৃতীয় টার্মিনালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এই তথ্য জানান বেবিচক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধন করবেন।
মফিদুর রহমান লেন, অক্টোবরে সফট ওপেনিং হবে। কিন্তু যাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী হবে আগামী বছরের মার্চ মাসে। উদ্বোধনের পর পরীক্ষামূলক একটি বিমান চালিয়ে দেখা হবে।
তিনি আরও জানান, আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে। পোর্টে কিছু সরঞ্জাম আটকে থাকায় সেগুলো আসতে সময় লাগছে। এজন্য কাজ দ্রুত শেষ হতে সময় লাগছে।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের অগ্রগতি নিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, অতিরিক্ত কাজের জন্য জাইকার অনুমোদন ছিল। এছাড়াও সরকারের কিছু অনুমোদন। যে বরাদ্দ আছে তা নিয়ে কথা চলছে। কারণ আগে বরাদ্দ কম ছিল। আগামী এক মাসের মধ্যে ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজের বাজেটও অনুমোদন হবে।
মফিদুর রহমান আরও বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ জাপান করবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের যেহেতু আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে এটি পরিচালনা করবে। তবে তাদের সঙ্গে চুক্তি হতে আগামী বছর সময় লেগে যাবে। এর মাঝে চুক্তির আগে বেবিচকের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, যেকোনো দেশে একাধিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার থাকে। তবে এটি নির্ভর করে এয়ারলাইন্সগুলোর ওপর। আমরা অপারেশন মেইনটেইন্যান্স করতে পারতাম। তখন আমাদের বাড়তি জনবল দরকার হতো। বিমানবন্দরের সেবা প্রাইভেট কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকলে সেবার মান ভালো হয়।
নতুন বিমানবন্দরে রাডার বসানো নিয়ে তিনি বলেন, অক্টোবরের রাডার ওপেনিং হওয়ার কথা ছিল। নতুন রাডারের সেবা অক্টোবরে পাওয়া সম্ভব হবে। রাডার এসে গেছে। কিন্তু ওপেনিংয়ের জন্য এয়ার ট্রাফিক টাওয়ারসহ যা যা দরকার ছিল তাতে সময় লাগছে।
পুরো রানওয়ের কাজ কখন শেষ হবে এবং কোনো রাজনৈতিক চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নে মফিদুর রহমান বলেন, থার্ড টার্মিনালের কাজ শেষ হলে রানওয়ের কাজ হাতে নেওয়া হবে। এজন্য বাজেটের দরকার আছে। তবে তড়িঘড়ি করে থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করতে রাজনৈতিক কোনো চাপ নেই। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কাজ রুটিন মাফিক শেষ করতে পারব। এ বছরের শেষের দিকে কাজ শেষ হবে।
দেশের প্রধান বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরও সাত হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির নির্মাণ শুরু হয়। খরচের বেশির ভাগ আসছে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ২৫৮ কোটি তিন লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
শাহজালালে বর্তমানে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এই দুই টার্মিনালের আয়তন এক লাখ বর্গমিটার। তৃতীয় যে টার্মিনালটি হচ্ছে, সেটির আকার বর্তমান দুটি টার্মিনালের দ্বিগুণের বেশি। দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তন হবে নতুন টার্মিনালের।