লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বিজড়িত খোয়াসাগর দিঘি পার্কের নামের পরিবর্তে ‘ডিসি পার্কের’ সাইনবোর্ড লাগানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলসহ স্থানীয় বাসিন্দারা কোনভাবেই ডিসি পার্ক নামটি সমর্থন করছেন না। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুরের নেটিজেনরা ফেসবুকে ডিসি পার্ক লেখা সাইনবোর্ডের ছবি দিয়ে বিভিন্ন ধরণের সমালোচনামূলক মন্তব্য করছেন।
লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাতা থেকে জানা যায়, সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকার রায়পুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২২ একর জুড়ে বিস্তৃত খোয়াসাগর দিঘিটি। এর একপ্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাকালে কুয়াশাছন্ন দেখা যায়। তাই এ দিঘিকে খোয়া বা কুয়াশাময় দীঘি বলা হয়। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের পুরনো বিশাল আয়তনের দিঘিটি খোয়াসাগর দীঘি নামেই দেশব্যাপী পরিচিত। আনুমানিক ১৭৫৫ সালের দিকে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় দিঘিটি খনন করেন। পরবর্তীতে জমিদার রাজা গৌড় কিশোর রায় দিঘিটির সংস্কার করেন। প্রাচীন এই দিঘিকে ঘিরে জড়িয়ে আছে নানা কল্পকাহিনী। দীর্ঘ সময় দিঘিটি অযত্নে পড়ে ছিল। তবে সেটি সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। দিঘির দুইপাড়ে শোভাবর্ধন করা হয়। দিঘির পানিতে চাষ করা হয় মাছ। সবকিছু তদারকি করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে।
এদিকে সৌন্দর্য বর্ধনের পর জেলা শহরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় দিঘিটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসে। দিঘিটি জেলাবাসীর জন্য গর্বের নাম। তবে দিঘির নাম পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না জেলার বাসিন্দারা। ঐতিহাসিক নামেই দিঘিটিকে পরিচিত করতে চান তারা।
এদিকে ডিসি পার্ক নামকরন নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহানকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেহের নিগার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমার জানা নেই। কে বা কারা ডিসি পার্কের বোর্ড ঝুলিয়েছে তাও জানি না। আজই জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে’।
সু-শাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর জেলা কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে জনগুরুত্বপূর্ণ কোন স্থানের নামকরণ সমিচীন নয়। খোয়াসাগর দিঘীর নামকরণ ঠিকই ছিল।
খোয়াসাগর দিঘী নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ পোষ্ট করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম স্বারক দালাল বাজার খোয়া সাগর দিঘি। এ ইতিহাস ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রেখে গড়ে উঠুক সকল নতুন স্থাপনা। নামকরণ থাকুক খোয়া সাগর দিঘির নামে। এটা আমাদের লক্ষ্মীপুর বাসীর দাবি’।
ঘটনাটি নিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব হোসেনও ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, এসব হঠকারী সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার চাই। ডিসির নামের কাজ কি এখানে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তিনি কেন করবেন ?
মহিবুল বাশার তার ফেসবুকে লেখেন, ‘শতবছর ধরে চলে আসা খোয়াসাগর দিঘি নামটা এভাবে পরিবর্তন হয়ে গেল! দুঃখজনক’।
এস এম মাইন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে পোষ্টের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে জানিয়েছেন, খোয়াসাগর দিঘি এক নামে সারা বাংলাদেশ চেনে। এটার নাম পরিবর্তন করা মোটেও ভালো কাজ নয়।
লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম পাবেল বলেন, জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে দালালবাজার খোয়াসাগর দীঘি। এটির নাম পরিবর্তন কোনভাবেই সমিচীন নয়। বরং অন্য কোন স্থানে ডিসি পার্ক নামে আলাদা পর্যটন স্পট করা যেতে পারে। খোয়াসাগর দীঘির নাম পরিবর্তন করা হলে জেলাবাসীর মনে বিরূপ রেখাপাত হবে।