আল মামুন, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। ছোট বড় সবার কাছে পরিচিত এ ফুল। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব ও মানবসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় বিলুপ্ত হচ্ছে মুক্ত জলাশয়। এতে করে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। শাপলা ফুলের সেই সমারোহ আর চোখে পড়ে না। দিনে দিনে শাপলা-শালুক যেন একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
অথচ আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগেও খাল-বিল, ঝিলে ও অনেক বড় দিঘীগুলোর বুকজুড়ে শাপলা ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয় যা ধীরে ধীরে বড় হয়ে শালুকে পরিণত হয়। একেকটি শালুকের ওজন সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি সিদ্ধ করে বা আগুনে পুড়িয়ে ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়।
এক সময় গ্রামের হত দরিদ্র মানুষের ক্ষুধা মেটানোর খাবার ছিল শালুক। বর্ষা মৌসুমে শালুক সিদ্ধ খেয়েই জীবন বাঁচাতেন তারা। তবে ধনীরা সেই সময় শালুক সিদ্ধ খেতেন শখ করে। আর মানিকগঞ্জের ঘিওর থেকে এ শালুক যেন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। সচরাচর শালুক আগের মতো এখন আর দেখা যায় না। হাটে-বাজারে যা পাওয়া যায় তার দামও আকাশ ছোঁয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েক যুগ আগেও বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপকভাবে শাপলা জন্মাতো। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে জন্মায় শাপলা। পানি না হওয়ার কারণে এখন আর শাপলা সালুক দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলার চরবাইলজুরী গ্রামের প্রবীণ মোঃ আবুল হোসেন জানান, আগে আমরা এই শাপলা শালুক শখ করে খেতাম এখন আর আগের মত এগুলো দেখা যায় না। জমিতে পানি না হওয়ার কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান যুগের শিশুরা এগুলোর নামই জানে না।
এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা প. প. কর্মকর্তা, ডা. হাসিব আহসান বলেন শালুক হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, দ্রুত ক্ষুধা নিবারণও করে থাকে। এটা শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি জোগায়। এটি একটি ভালো সবজি। পাশাপাশি চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য ঔষধ হিসেবেও কাজ করে।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মাজেদুল ইসলাম বলেন- জলবায়ু ব্যাপক পরিবর্তনে আগের মতো সঠিক সময়ে বন্যা হয় না। এছাড়া আবাদি জমিতে অনেক বেশি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মা-শালুক বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।