বগুড়া জেলার কাহালু থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৩নং পাইকড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিটু চৌধুরী ৭ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেই শতকোটি টাকার মালিক।
গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মিটু চৌধুরী ৭ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করায় যে সম্পদ গড়ে তুলেছেন তার মধ্য, গ্রামে বিশাল পাকাবাড়ি, বগুড়া শহরে ফ্ল্যাট, প্রাইভেট কার, গোবাদী পশুর খামার, মৎস্য চাষের বিশাল জলাশয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা।
সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত না হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রশাসনিক ও পেশীশক্তি ব্যবহার করে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে জোরপূর্বক চেয়াম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা মিটু চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাথে সাথে গাঢাকা দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে বাড়িঘরে আগুন দেওয়া, ভূমি দখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, এমনকি নারী কেলেংকারীর অভিযোগও আছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে ধরাকে স্মরাজ্ঞান করেছে মিটু চৌধুরী। উক্ত ইউনিয়নের নির্বাচিত সদস্য আব্দুল বাসেদ বগুড়া জেলা প্রশাসক বরাবর প্রায় ২ বছর আগে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন, মিটু চৌধুরী তাকে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করতে দিচ্ছেনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা আফরোজ সাক্ষরিত গত ৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে একটি চিঠিতে তদন্ত করার নির্দেশ দিলেও আওয়ামী সরকার পতনের আগের দিন পর্যন্ত ভূক্তভোগী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল বাসেদ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পায়নি।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা আফরোজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন অভিযোগটির তদ্বন্তর ফলাফল আবেদনকারীকে জানানো হয়েছে, কিন্তু তিনি কোন লেখিত জবাব দেখাতে পারেননি। এবং ভুক্তভোগী আব্দুল বাসেদ জানিয়েছেন তিনি কোন লিখিত আদেশ পাননি।
উপজেলা প্রশাসনের অনিয়মের বিষয়টি ফুটে উঠে চলচ্চিত্র পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ এর ফেসবুক পোষ্ট থেকে। তিনি জানিয়েছেন ইউএনও বরাবর একটি লিখিত চিঠি দিয়েছি আমি গত ৬ আগস্ট, চিঠির সঙ্গে আমি প্রমানপত্রও দিয়েছি, কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে আমার আবেদনের অগ্রগতি হয়নি, ইউএনও জানিয়েছেন তিনি তদ্বন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ২০ তারিখ তদ্বন্ত কমিটির একজন সদস্য আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন, আমি তদ্বন্তের স্বার্থে সকল প্রমান প্রেরণ করেছি। উপজেলা প্রশাসনের ভিতরে অনিয়ম হচ্ছে বলেও তিনি অনুমান করেছেন।
উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, আওয়ামী পন্থি অফিসসাররা মনে করেছিলেন ১৫ আগস্ট তাদের সৈরাশাষক ফিরে এসে উদ্ধার করবে। সেই জন্য তদ্বন্তর নামে দীর্ঘ সূত্রতা করছেন। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে একজন ব্যক্তি তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছে, একজন সন্ত্রাসীর অস্ত্রসহ মহড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল, তবুও কেনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করছেনা উপজেলা প্রশাসন তা বোধগম্য নয়।
পাইকড় ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য জানিয়েছেন, তদ্বন্তে কি হয় আমরা তো সেটা দেখলাম, একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারতেছেন না, সাধারণ একটি বিষয় তদ্বন্তের নামে বছরের পর বছর পার করতেছে উপজেলা প্রশাসন। আমরা ইউপি সদস্যরা অসহায়। যা লুটপাট করেছে মিটু চেয়ারম্যান আর ইউএনও মহোদয়। এই জন্য ইউএনও মহোদয় মিটুকে রক্ষা করার চেষ্টা করতেছে।
স্বরেজমিন খোজ নিয়ে জানা গেছে, মিটু চৌধুরীর অত্যাচারে এলাকা ছাড়া লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। এমন ই এক ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা জানিয়েছেন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হাজুত খাটিয়েছে মিটু চৌধুরী। মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মিটু চৌধুরী জামায়াতের নেতা-কর্মীদের থেকে নিয়মিত চাঁদা নিতেন। সরকারী ত্রাণ লুট, করোণাকালী ভাতা ও অনুদান লুট করে যে সম্পদের পাহাড় করেছেন। তা দিয়ে আলিশান জীবনযাপন করতো মিটু চৌধুরী। অথচ তার শিক্ষাগত কোন যোগ্যতা বা পৈতিকসূত্রে উল্লেখ করার মতন কোন সম্পদ নেই। বিগত ৭ বছর আগে মিটু চৌধুরী ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন এবং থাকার বাড়ি বলতে ছিলো মাটির একটি ঘর।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক পাইকড় গ্রামের সাবেক বিএনপি নেতা জানান, মিটু চৌধুরীকে এলকার লোকজন ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী হিসেবে জানেন। হাজার বছরের পুরাতন যোগীর ভবন মন্দিরের দেবত্তর জমি দীর্ঘ দিন যাবত জোর করে ভোগ দখল করে আসতেছে, হিন্দুদের উপর নিযাতন করেছে, নির্যাতনের ভয়ে কোন হিন্দু মুখ খোলার সাহস পায়নি। এছাড়াও পাইকড় গ্রামের জমিদারের বেওয়ারিশ প্রায় শতবিঘা জমি সে একাই ভোগ দখল করে আসতেছে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর থেকে। দধিসাগার, মহিষাদিঘী নামের দুটি দিঘী প্রায় ৩০০ বিঘা, সেটি তার ভাই বিএনপি নেতা রুবেল দখল করে করে আছে, সারাদেশে যখন বিএনপি নেতারা হামলা মামলার শিখার হয়েছে তখন বিএনপি নেতা রুবেল তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মিটু চৌধুরীর ছত্রছায়ায় রাজত্ব করে গেছে। যখন যে সরকারই আসুক তাদের কোন সমস্যা হবেনা এই ধারণা থেকেই দুই ভাই দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দলে ভিড়েছে বলে জানান তিনি।
তাড়াতগাড়ী গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক জানিয়েছেন, মিটু চৌধুরী বিভিন্ন সময় এলাকায় দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতেন, কেউ ভয়ে কথা বলার সাহস পায়না, সে ত্রাসের রাজত্ব করেছে, টাকার বিনিময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাইটগার্ড নিয়োগ দিয়েছে উচুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও পাইকড় মাদরাসায়, আড়োলা উচ্চ বিদ্যালয়ে তার স্ত্রীকে অবৈধ ভাবে চাকুরী দিয়েছে। এসব নিয়ে কথা বলার সাহস কারু নেই।
খোজ নিয়ে জানা গেছে মিটু চৌধুরীর এই ত্রাসের রাজত্বের পিছনে যিনি কলকাটি নাড়িয়েছেন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সদ্য সাবেক ইউপজেলা চেয়ারম্যান আল হাসিবুল হাসান সুরুজ। তাদের ছত্রছায়ায় মিটুর অপরাধজগতে প্রবেশ। নিয়মিত মিটু তাদের টাকা প্রেরণ করতো। আর সেই কারণে হেলাল কবিরাজ মিটুকে একটি গাড়ীও উপহার দিয়েছিলো বলে জানিয়েছেন, কাহালু পৌরসভার একজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনইচ্চুক উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিটু মোটা অঙ্গের টাকা দিয়ে চেষ্টা করতেছে, চেয়ারম্যানের পদটি রক্ষা করতে। কিন্তু মিটু চৌধুরী হোল্ডিং নাম্বারে নিজের ছবি ব্যবহার করে সংবিধান বিরোধী কাজ করেছে, অভিযোগ পাওয়ার পরে একদিনও চেয়ারম্যান পদে থাকার কোন যৌক্তিতা নেই, তারপরো ১৪ দিন কেটে গেছে এটিই প্রমাণ করে প্রশাসন দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। আর এটিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে আওয়ামীপন্থি অফিসাররা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে মিটু চৌধুরীর পরিবার আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বিরোধীতা করেছে এবং প্রত্যেক্ষ ভাবে হেলমেট বাহিনী দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর নিপিড়ন চালিয়েছে এবং বগুড়ায় যে সকল হত্যা হয়েছে সেগুলিতে সরাসরি সহযোগিতা করেছে মিটু চৌধুরী।
মিটু চৌধুরীর ভাই বিএনপি নেতা রুবেল এর কারণে মিটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তির পরিবার মামলা করতে সাহস পাচ্ছেনা বলেও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। কারণ মিটু চৌধুরীর দখলকৃত বিভিন্ন দিঘী ইতোমধ্যে ই তার ভাই রুবেল দখল নিয়েছে। মিটুর বিরুদ্ধে এখন কোন অভিযোগ করলে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তার ভাই বিএনপি নেতা রুবেল কর্তৃক আবার নির্যাতনের শিকার হতে পারে এই ভয়ে কাহালু থানায় মামলা করতে আসলেও ফিরে গেছেন একাধিক ভুক্তভোগী নাম না প্রকাশে অনইচ্চুক একজন এসআই জানিয়েছেন।
পাইকড় ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন মিটুর ভাই রুবেলকে বিএনপি থেকে দ্রুত বহিস্কার করতে হবে, তা না হলে আমরা যারা আওয়ামী লীগের হামলা মামলার শিকার হয়েছি মিটু চেয়ারম্যানের দ্বারা, তারা আবার বঞ্চিত হবো। বিগত ১৭ বছর কাহালু থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিটু চৌধুরীর ভাই রুবেল মিটুর সাথে রাজনীতি করেছে, এখন হাসিনার পতনের সাথে সাথে বিএনপির চেয়ার দখলের চেষ্টা করতেছে এটা সাধারণ নেতাকর্মী মেনে নিবেনা। একই সাথে কাহালু উপজেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দ্রুত বদলি করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।