রাজশাহীতে নিজের ভাই বোনের জমি জালিয়াতি করে সরকারি ওয়াশার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন একজন এডভোকেট। ওই এডভোকেটের নাম শামীম আক্তার হৃদয়। এডভোকেট শামীম আক্তার হৃদয় রাজশাহী কোর্টে মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা করেন। মূলত আওয়ামীলীগ করার সুবাদে তিনি এজিপি হিসাব হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের শক্তির প্রভাব খাটিয়ে তিনি জালজালিয়াতি করে অনেক নিরীহ অসহায় মানুষের জমি আত্মসাৎ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী কোর্টের একাধিক সূত্র জানায়, মক্কেলদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মামলা দায়ের না করা, মক্কেলদের বারংবার ঘোরানোসহ নানান অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত অ্যাডভোকেট শামিম আক্তার হৃদয়।
এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায় এডভোকেট শামীম আক্তার হৃদয়ের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে রাজশাহীর আদালতে। এছাড়াও এডভোকেট শামীম আক্তার হৃদয় রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার, কোর্ট মোল্লাপাড়া ও মুরালীপুর এলাকায় একাধিক বহুতল ভবন নির্মান করেছেন। যা তার আয় বহির্ভূত।
এরই মধ্যে রাজশাহী ওয়াসার কাছে কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন পশ্চিম বালিয়া এলাকায় জালিয়াতীর মাধ্যমে ৪ কোটি টাকার বিনিময়ে জমি বিক্রয়ের ঘটনা শুনতে পেলে গত ১৩/৪/২০২১ তারিখে রাজশাহী আদালতে মামলা দায়ের করেন জমির অন্যতম অংশীদার মালিক গোলাপ হোসেন, পিতা- জেবু মোল্লা, ঠিকানা : কাঁঠালবাড়িয়া গোবিন্দপুর, কাশিয়াডাঙ্গা রাজশাহী। উক্ত মামলা নং ১৭সি/২০২২ কাশিয়াডাঙ্গা। যাহার ধারা নং – ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৩৪।
আরোও উল্লেখ্য যে, রাজশাহী কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন পশ্চিম বালিয়া এলাকায় রাজশাহী পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চায়না প্রজেক্ট নামে যে কাজটি চলমান রয়েছে সেই জমিটিই জালিয়াতির মাধ্যমে এডভোকেট শামীম আক্তার হৃদয়সহ ৬ জন মিলে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি টাকায় বিক্রয় করেছেন। অন্যদিকে গোলাপ হোসেনের দায়ের করা মামলা আমলে নিয়ে রাজশাহীর আদালত পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য রাজশাহীর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিয়াডাঙ্গা থানা বরাবর আদেশ প্রেরণ করেন।
এরপর অত্র ২৯/০৭/২০২২ ইং তারিখে রাজশাহী কাশিয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, রাজশাহী রেজিস্ট্রি অফিসে সরেজমিন অনুসন্ধানে দলিলের জাবেদা কপি তুলে দেখা যায় যে, দাতা ও গ্রহিতার নাম আলাদা। অর্থাৎ এডভোকেট শামীম আক্তার হৃদয়সহ আসামীগণ পরিকল্পিতভাবে বাদীর মাতা ও খালাগণকে ফাঁকি দিয়ে জাল দলিল তৈরি করেন যাহার নং- ৩৬০৯৮/৭৯, তারিখ- ২৭/১২/১৯৭৯। যাহার বায়া দলিল নং- ২৯৯১-৩৭-২৫০-২৫৭, তারিখ- ১৯/০২/১৯৬৪।
বিধায় দাতা ও গ্রহিতার নাম আলাদা এবং উক্ত ৩৬০৯৮/৭৯ নং দলিল পূর্নাঙ্গরুপে জাল । উল্লেক্ষ্য যে, পাঠকের জন্য মামলার কপি ও মামলার তদন্ত কপি সংযুক্ত হলো। তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যে, বাদী ও বিবাদীগণ পরস্পর আত্মীয় । ১নং বিবাদী বাদীর মামা, ২নং ও ৩নং বিবাদী বাদীর মামাতো ভাই, ৪নং ও ৫নং বিবাদী বাদীর মামাতো বোন এবং ৬নং বিবাদী বাদীর মামী।
অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামিলীগ ক্ষমতা থেকে নামার পরেই গাঁ ঢাঁকা দিয়েছেন এডভোকেট শামীম আক্তার হৃদয়। শুধু তাই নয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের নির্বাচনে সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদকে অর্থ দিয়ে ও প্রধান সহযোগী হিসেবে থেকে শুরু দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। যে সকল ছবি এখনোও সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে বাদী গোলাপ হোসেনসহ তার পরিবারের সদস্যরা জানায়, এডভোকেট শামীম আক্তার হৃদয় এখনো আমাদের প্রাননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং রাজশাহীর আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন কুচক্রি মহল থেকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। গত ৮/৮/২০২৪ ইং তারিখে উক্ত মামলাটি রিভিশনের জন্য রাজশাহী মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজের কাছে বিচারাধীন রয়েছে। যাহার রিভিশন নং – ১৫৯/২০২৩। যেহেতু আমরা আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সেহেতু আমরা আশা করছি আদালত আমাদের মামলার নায্য বিচার করে দেবেন ইনশাআল্লাহ।
তবে সার্বিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ অভিজ্ঞ মহল বলছেন জাল দলিলের মাধ্যমে জমি কেনার দেয় ফেঁসে যেতে পারেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ঐ টিম।