গদি হারানো শেখ হাসিনা যখন দেশীয় গণমাধ্যমগুলোর গলা টিপে ধরেছিল এবং তার অপশাসনের কোন প্রকার তথ্য পরিবেশন করতে দিচ্ছিল না তখন আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তৎকালীন ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। জাতিসংঘ, হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দপ্তরগুলোতে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ, গণহত্যা ও অপশাসনের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে সবসময়ই ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি করে রেখেছিলেন বাংলাদেশি এই সাংবাদিক।
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নীতি নির্ধারণীতে যে কজন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের একজন মুশফিকুল ফজল আনসারী। বাংলাদেশে ডেপুটি অ্যম্বাসেডর হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিচ মুশফিকুল ফজল আনসারী সম্পর্কে এক টুইটে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের সামনে বাংলাদেশের হুমকিসমূহ তুলে ধরার ক্ষেত্রে মুশফিকুল ফজলের অনন্য ভূমিকা ইতিহাস মনে রাখবে।
শেখ হাসিনা সরকারের যন্ত্রণার কারণ এই সাংবাদিক, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কূটনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভিতে কূটনৈতিকদের নিয়ে বিশেষ প্রোগ্রাম সঞ্চালনা করেছেন তিনি। এ ছাড়াও সংবাদ সংস্থা ইউ এন বি -তে বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ওয়ার্ক এক্সিপিরিয়েন্স রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টাইমস ও সানডে টাইমসে। এ ছাড়া বিবিসি, আল-জাজিরা, সিএনএন, এনডিটিভিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের গণমানুষের হয়ে দিয়েছেন একাধিক সাক্ষাৎকার।
শুধু সাংবাদিকতাই নয়, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের তখনকার অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য রেখেছেন ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, জর্জ ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে।
বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক, জাস্ট নিউজ বিডির সম্পাদক ও ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত ফরেন পলিসি বিষয়ক ম্যাগাজিন সাউথ এশিয়া পার্পেক্টিভসের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ওয়াশিংটন থেকে কাজ করছেন।
গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য লড়ে যাওয়া এই সাংবাদিক এখন বহুল চর্চিত নাম। সাম্প্রতিক ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিটি ঘটনা জাতিসংঘের সদর দপ্তর, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউসে তুলে ধরার মাধ্যমে আন্দোলনের আসল চিত্র বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেন এই সাংবাদিক।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাংবাদিকদের সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের দুটি কমিটির নির্বাহী সদস্য তিনি। হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেটস এসোসিয়েশন এবং ইউএনসি’র সদস্য মুশফিক। বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যও ছিলেন তিনি। তবে পদলেহী সাংবাদিকদের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী ও তার পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করেছে। দীর্ঘ ৮ বছর দেশে থাকা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি আলোচিত এই সাংবাদিক। সরকারের সৃষ্ট পার্সপোর্ট জটিলতার কারণে মুশফিকুল ফজল আনসারীর বাবা মাকেও ৮ বছর যাবত দুই দেশে থাকতে হয়েছে। বাবা লন্ডনে আর মাকে সিলেটে। এমন পরিস্থিতিতেও অসহনীয় নির্দয় আচরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, সুশাসন ও ন্যায় বিচারের কথা বলে গেছেন তিনি।
নানা অর্জনে ভূষিত এই সাংবাদিক, বাংলাদেশে না থেকেও দেশের গণতন্ত্র ন্যায় বিচার ও সুশাসনের জন্য যেভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অনন্য নজির হয়ে থাকবে।
লেখক: সুফিয়ান ফারাবী, গণমাধ্যমকর্মী।