স্বাদে আর মানে মানিকগঞ্জের মানুষের কাছে প্রিয় এক নাম ‘নিজামের মিষ্টি’। এই মিষ্টির কদর শুধু জেলাজুড়েই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ভোজনরসিকদের কাছেও।
জেলার ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী এলাকায় নিজামের মিষ্টির কারখানা। মিষ্টি প্রস্তুতকারক মো. নিজামুদ্দিনের নামে এর নামকরণ হয়েছে। ৫৮ বছর ধরে তেরশ্রী বাজার এলাকার কারখানায় বানানো হচ্ছে মিষ্টি।
ষাটের দশকের গোঁড়ার দিকে নিজাম নামের এক লোক সর্ব প্রথম এই মিষ্টি তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথমে অল্প পরিসরে এর পরিচিতি থাকলেও খুব কম সময়ের ব্যাবধানে এর জনপ্রিয়তা ও সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। বৃদ্ধি পেতে থাকে নিজামের মিষ্টির চাহিদা। বয়সের ভারে তিনি এখন মিষ্টি তৈরি করেননা। বর্তমানে এই মিষ্টি তৈরি করে তার সুযোগ্য ছেলেরা।
দুধের ছানা থেকে মিষ্টি এবং মাওয়া বানিয়ে অসাধারণ মুখোরোচক এই মিষ্টি তৈরি করা হয়। শুধু খেতে নয় দৃষ্টি নন্দনেও এই মিষ্টির জুড়ি মেলা ভার।
বর্তমানে তেরশ্রীর নিজামের মিষ্টির দুইটি শাখা রয়েছে। একটি তেরশ্রীতে কারখানা, অন্য দুটি শো রুম। একটি চরবাইলজুরী পঞ্চরাস্তা মোড় ও অন্যটি মানিকগঞ্জ খালপাড়। আর মজাদার এই মিষ্টির দামটিও হাতের নাগালে। এতে রয়েছে মিনিকেট, মাওয়া মিষ্টি, মালাই চপ, ছানা সন্দেশ, প্যারা সন্দেশ, রস মালাই, রস গোল্লা, খাটি দধি ও খাঁটি গাওয়া ঘি।
মানিকগঞ্জে বাড়ি অথচ এই মজাদার মিষ্টির স্বাদ নেয়া হয়নি এমন হলে বলতে হয়, আপনি সত্যিই খুব মজাদার খাবারের স্বাদ নেয়া থেকে দূরে আছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নিজামুদ্দিনের বয়স ৯৩ বছর। সম্প্রতি তাঁর মিষ্টির কারখানায় তাঁর সঙ্গে আলাপ জমে। তিনি বলতে থাকেন, তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম গ্রামে। আট বছর বয়সে বাবা শামছুদ্দিন মারা যাওয়ার পর পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে চাচার সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে তিনি মায়ের সঙ্গে তেরশ্রী এলাকায় খালার বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেই স্থায়ী হন। বাজারে চায়ের দোকান দেন।
নিজামুদ্দিন বলেন, ১৯৬৫ সালে একদিন চা তৈরির পর অনেক পরিমাণ দুধ থেকে যায়। সেই দুধ জাল দিয়ে মিষ্টির ওপর মাওয়ার প্রলেপ দিয়ে বিশেষ মিষ্টি তৈরি করলেন। সেই মিষ্টি খেয়ে সবাই প্রশংসা করলেন। সেই থেকে শুরু। পরের বছর (১৯৬৬ সাল) স্থানীয় তেরশ্রী কলেজে এক অনুষ্ঠানে যান অতিথিরা। তাঁদের নিজামের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। স্বাদের ভিন্নতার কারণে অনেকেই মিষ্টির প্রশংসা করলেন। কেউ কেউ কিনে নিয়ে গেলেন। এভাবেই ধীরে ধীরে তাঁর মিষ্টির সুনাম ছড়ায়।