নাজমুল হাসান নিরব, ফরিদপুর প্রতিনিধি: গত ১০ মে একটি পুকুর থেকে নয়ন বিশ্বাস (১৬) নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত ছাড়াই সমাধি করেন তার পরিবার। লাশ সমাধির ২৩ দিন পর আপন চাচাসহ চার জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নয়নের মা লক্ষী রানী দাস।
এরপর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য আদালতের নির্দেশে ৪৬ দিন পর আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা সমাধি থেকে নয়নের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
নিহত নয়ন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাঠ সালথা গ্রামে ধনঞ্জয় বিশ্বাসের ছেলে। সে স্থানীয় যোগারদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। নয়নের পরিবারের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। লাশ উত্তোলনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে লাশ উত্তোলনের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নয়নের মা লক্ষী রানী দাস। তিনি বলেন, জমি ভাগাভাগি নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে দেবর পরিমল বিশ্বাসের বিরোধ চলছিল। এরই মধ্যে গত ৯ মে পরিমল বিশ্বাস কৌশলে আমার ছেলে নয়নকে তার মেয়ে জামাই ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পারচর গ্রামের আশিষ মন্ডলের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যায়। পরদিন ১০ মে গোসল করার কথা বলে আশিষের বাড়ির পাশে একটি লিচু বাগানের ভেতর নিয়ে প্রথমে নয়নকে মারধর করে পরিমল তার ছেলে প্রষোনজিত বিশ্বাস, জামাই আশিষ মন্ডল ও সুমন বিশ্বাস।
পরে তারা চারজন মিলে পাশের একটি পুকুরের পানিতে চুবিয়ে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু হত্যার পর ওই বাড়িতে থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়, নয়ন পানিতে ডুবে মারা গেছে। এরপর আমরা সেখানে গিয়ে লাশ নিয়ে আসি। আমরা শোকাহত থাকায় প্রথমে বুঝতে পারিনি যে নয়নকে হত্যা করা হয়েছে। পরে নয়নের মুখে ও গলায় আঘাতের দাগ দেখতে পেয়ে আমরা মামলা করতে চাইলে আমার দেবর পরিমল হুমকি-ধামকি দিয়ে লাশ সমাধি করে ফেলে।
নয়নের বাবা ধনঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, আমার ভাই প্রথমে আমাদের জানান নয়ন পানিতে ডুবে মারা গেছে। পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আমার ছেলের লাশ সমাধি করা হয়। কিন্তু ঘটনার পর ওদের আচরনে সন্দেহ হলে গত ২ জুন আমার স্ত্রী আদালতে মামলা করেন। মামলাটি ৭ জুন ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় রুজু হয়। তিনি আরো বলেন, সম্পত্তির লোভে ওরা আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি ওদের সঠিক বিচার চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. শামীম হাসান বলেন, নয়ন মারা যাওয়ার পর তার পরিবার পুলিশকে না জানিয়ে লাশটি নিয়ে যায়। পরে সালথা থানা পুলিশের সহযোগিতায় লাশটি উদ্ধার করে কোতয়ালী থানায় নিয়ে যাই। এ সংক্রান্ত একটি অপমৃত্যুর মামলাও থানায় হয়। কিন্তু পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশটি আমরা তার পরিবারের হস্তান্তর করা হয়। এরপর নয়নের মা বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো বলেন, মামলার পর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের লক্ষে ময়না তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আজ আদালতের আদেশে লাশটি উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রির্পোট অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, নয়ন বিশ্বাস নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নয়নের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে মরদেহটি তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।